![]()
বাণিজ্যমন্ত্রী পিযুষ গোয়াল (তিনি নিউটনকে আইনস্টাইন বলে গুলিয়ে ফেলেছিলেন) আরসিইপি আলোচনা এড়িয়ে যেতে পারবেন না। তার দলকে ব্যাংকক আরসিইপি শীর্ষ সম্মেলনের (১১-১২ অক্টোবর) ২০ দিনের মধ্যেই আমদানি বৃদ্ধির স্বয়ংক্রিয় পন্থার মতো পর্যাপ্ত কোনো রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতেই হবে। আরসিইপি দেশগুলোর সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর অর্ধেকের বেশি কেবল চীনের সাথেই। আরএসএস-স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ আরসিইপিতে ভারতের যোগদানের প্রবল বিরোধিতা করায় তা মোদির সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে, দিল্লির নীতিনির্ধারণী মহলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। মোদির জন্য পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় আসামের এনআরসি কার্যক্রম ও নাগা জটিলতার নিষ্পত্তি না হওয়া দুটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রীর চাপে তার সরকার নাগা সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানের জন্য ৩১ অক্টোবরকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী নাগা বিদ্রোহী গ্রুপের প্রধান থুইঙ্গালেঙ মুইভা স্পষ্ট করে বলেছেন যে ভারত যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদেরকে আলাদা পতাকা ও আলাদা সংবিধান (এয়েঝাবো) দিতে রাজি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নাগা ইস্যুর কোনো চূড়ান্ত সমাধান হবে না। প্রবীণদের শক্তিশালী পরিষদ নাগা হোহো ও অন্যান্য নাগা নাগরিক সমাজের গ্রুপ মুইভাকে সমর্থন করেছে। কাশ্মীরে এগুলো দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর মোদি কিভাবে এগুলো নাগাদের দেবেন। নাগা ন্যাশনাল পলিটিক্যাল গ্রুপস (এনএনপিজিএস)-এর মতো ছোট ছোট নাগা বিদ্রোহী দল হয়তো পতাকা ও সংবিধান ছাড়াই চুক্তিতে সই করতে রাজি হতে পারে, দিল্লিকে বড় ধরনের সাফল্যের দিকে চালিত করতে রাজি হতে পারে। কিন্তু মুইভাকে (তিনি ১৯৭৫ সালে শিলং চুক্তি সই করেছিলেন এবং সাত হাজার সুশৃঙ্খল শক্তিশালী বিদ্রোহী সেনাবাহিনী-সংবলিত এনএসসিএনকে উত্তর-পূর্বের ‘বিদ্রোহগুলোর জননী’তে পরিণত করেছেন) বাদ দেয়ার কোনো উপায় নেই। বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে যে তার সাথেই ২০১৫ সালে ‘কাঠামো চুক্তি’ হয়েছিল এবং তাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মর্যাদা দেয়া হয়েছে। মুইভা ও তার চীনা-প্রশিক্ষিত বাহিনী যদি আবার জঙ্গলে ফিরে যায়, তবে তারা কাশ্মীরের আনাড়ি জিহাদি তানজিমগুলোর চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে বর্তমান ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য। এনআরসি প্রশ্ন আসামের এনআরসি সবাইকে ক্ষুব্ধ করেছে। কট্টরপন্থী অসমীয়রা প্রতারিত হয়েছে মনে করছে। তারা অবৈধ অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে আপিল করতে অস্বীকার করছে, অ-অসমীয় সংখ্যালঘুরা অন্যায়ভাবে বাদ পড়ার শিকার হয়েছে বলে মনে করছে। অন্তর্ভুক্তমূলক বহুত্ববাদী দেশ হিসেবে ভারতের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাচনের পরিভাষায় মেরুকরণের সম্ভাবনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্ঞানশূন্যভাবেই তার বক্তব্য রেখে এনআরসি থেকে বাদ পড়াদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা ও সারা দেশে এনআরসি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রতি দিয়ে যাচ্ছেন। তবে অমিত শাহ আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস ও তার পর পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি বাস্তবায়ন করার কথা বলতে শুরু করেছেন। এর মানে হলো এই যে বিজেপি আশঙ্কা করছে যে এখানে মুসলিমদের চেয়ে অনেক বেশি বাঙালি হিন্দু বাদ পড়বে। যা হবে আসামের চেয়ে বেশি। এনআরসি থেকে বাদ পড়ার পর আত্মহত্যাকারী দুলাল পালের পরিবার সৎকারের জন্য তার লাশ গ্রহণ করতে অস্বীকার জানানোর ঘটনাটি অহংকারী নেতৃত্বের জন্য অশুভ ইঙ্গিত বিবেচিত হচ্ছে। লোকজনের লাশটি বাংলাদেশে পাঠানোর কথা বলাটা হাসিনার ভারতবান্ধব সরকারের জন্য উদ্বেগের সৃষ্টি করবে এবং ভারতবিরোধী ক্রমবর্ধমান ভাবাবেগে ছড়ানো তার ইসলামপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের ইন্ধন যোগাবে। শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের (শি জিনপিংয়ের সফরের ঠিক আগ দিয়ে) সময় ইস্যু করা ৫৩ পৃষ্ঠার যৌথ বিবৃতিতে এনআরসি থেকে বাদ পড়া কাউকে বাংলাদেশে ঠেলে না দেয়ার প্রতিশ্রুতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে ভারতের অস্বীকৃতির বিষয়টি আমাদের পূর্ব দিকের প্রতিবেশী দেশে ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়নি। নেপাল ও মিয়ানমারে চীনের কানেকটিভিটি উপদ্রব (অদূর ভবিষ্যতে তিব্বত-কাঠমান্ডুর মধ্যকার রেলওয়ে সংযোগসহ) মোদির দুশ্চিন্তা বাড়াবে, যদি না তিনি বিসিআইএমে (বাংলাদেশ-চীন-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার) বৃহত্তর অগ্রগতির ব্যাপারে শি জিনপিংকে প্রতিশ্রুতি না দেন এবং শেষ পর্যন্ত বিবিআইএনকে চীন-নেপাল-ভারত-বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি করিডোরে সংযুক্ত না করেন। ২০১৮ সালের ওহান শীর্ষ বৈঠকের পর কী সাফল্য পাওয়া গেছে, তার কিছুটা স্পষ্টতা ছিল, কিন্তু মামালাপুরামের পর তেমন কিছুই দেখা যায়নি। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী নীতির প্রশ্নে দীর্ঘ মেয়াদি স্বচ্ছতা ছাড়া এবং দেশের অনুন্নত উত্তর-পূর্বে উদ্বেগজনক জাতিগত সঙ্কটের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আলোচনা করার সক্ষমতা না থাকলে আরসিইপি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সূচিত অর্থনৈতিক একীভূত করার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে মোদির ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ আরেকটি কথার কথাই হয়ে থাকবে কিংবা নির্বাচনী ফায়দা হাসিলের জন্য মাঝে মাঝে উত্থাপিত অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি হিসেবে রয়ে যাবে। সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর সুবীর ভৌমিক: ভারতীয় সাংবাদিক |