‘বড় ও সুন্দর বিল’-এ সই করছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এক্স।
বিতর্কিত ‘বড় ও সুন্দর’ বিলে সই করে শুক্রবার (স্থানীয় সময়) তা আইনে পরিণত করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই আইনের মাধ্যমে মার্কিন সরকার খরচে বিপুল কাটছাঁট করতে চলেছে। বদলাতে চলেছে দেশের অভ্যন্তরীণ কর ব্যবস্থাও। আইনটিকে বলা হচ্ছে ‘কর এবং খরচ কাটছাঁটের আইন’। বৃহস্পতিবার আমেরিকার আইনসভার নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টিটিভসে মাত্র চার ভোটের ব্যবধানে এই বিল পাশ হয়েছে। শুক্রবার বিলে স্বাক্ষর করাকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। জড়ো হয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের বহু সমর্থক। আমেরিকার সেনাবাহিনী মাথার উপরে একাধিক সামরিক বিমান চালিয়ে নতুন আইনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
বিলে স্বাক্ষর করার পর ট্রাম্প বলেছেন, “আমাদের দেশের মানুষকে এত খুশি আমি এর আগে কখনও দেখিনি। কারণ, এই আইনে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের সুবিধা হবে। সেনাবাহিনী, সব পেশার সাধারণ মানুষ সকলের। আমরা পেলাম বৃহত্তম কর ছাড় এবং খরচ কাটছাঁটের আইন। সীমান্ত সুরক্ষায় বৃহত্তম বিনিয়োগ হতে চলেছে। আমেরিকার ইতিহাসে যা কখনও হয়নি।” হাউসের স্পিকার মাইক জনসন এবং সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠের নেতা জন থুনেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই নতুন আইনে আমেরিকার বহু মানুষ স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা হারাতে পারেন। নাগরিকদের স্বাস্থ্য বিমার জন্য যে খরচ সরকার করে থাকে, তাতে কাটছাঁট করা হতে পারে। ২০১৭ সালে যে কর ছাড় ট্রাম্প চালু করেছিলেন, এই আইনের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত স্থায়ী হলো। এ ছাড়া, আমেরিকা থেকে অভিবাসীদের সরানোর যে অভিযান ট্রাম্প চালু করেছেন, নতুন আইনের মাধ্যমে সেই অভিযান চালিয়ে নিয়ে যাওয়ায় আরও সুবিধা হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টিটিভসে ২১৮-২১৪ ভোটে এই বিল পাশ হয়েছে।
কর ও খরচ কাটছাঁটের বিলটিকে ‘বড় ও সুন্দর বিল’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন ট্রাম্প। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে এই বিল মার্কিন আইনসভার উভয়কক্ষে পাশ করানোর জন্য রিপাবলিকানদের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। উচ্চকক্ষ সেনেটে বিলটি আগেই পাশ হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার নিম্নকক্ষেও তা পাশ হয়েছে। ৪ জুলাই এই উপলক্ষে হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে আগে থেকেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাখা হয়েছিল। এই দিনে আমেরিকায় স্বাধীনতা দিবসের ছুটি থাকে। এই অনুষ্ঠানে আমেরিকার সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিমান, বম্বারগুলির প্রদর্শনও করা হয়, যেগুলি সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে সংঘাতে ব্যবহৃত হয়েছিল। নতুন আইনের প্রতি সমর্থন জানাতে হোয়াইট হাউসে জড়ো হয়েছিলেন শয়ে শয়ে মানুষ।
আমেরিকায় দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই খরচ কাটছাঁটে জোর দিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের জন্য তিনি আলাদা একটি দফতর তৈরি করে দিয়েছিলেন, যে দফতরের কাজ ছিল সরকারের খরচ বাঁচানো এবং অপ্রয়োজনীয় খরচে রাশ টানা। কিন্তু ‘বড় ও সুন্দর বিল’ নিয়ে মাস্কের সঙ্গে বিবাদে জড়ান ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের এই বিলকে একেবারেই সমর্থন করেননি মাস্ক। প্রথম থেকেই এই বিলের সমালোচনা করে এসেছেন। ইস্তফা দিয়েছেন সরকারি পদ থেকেও। মাস্কের দাবি, এই আইন আমেরিকার অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে দেবে। বহু মানুষ চাকরি হারাবেন। সরকারের খরচ বাঁচাতে এত দিন তিনি এবং তার দফতর যা পদক্ষেপ করেছিলেন, তা-ও বৃথা হয়ে যাবে। ট্রাম্প এই দাবি মানতে চাননি। বরং পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন মাস্ককে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের নতুন আইন আমেরিকার অর্থনীতিতে কতটা পরিবর্তন আনে, সে দিকে নজর রেখেছে বিশ্ব।