এক দশকের বেশি সময় আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া আলোচিত পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলাটি নতুন করে চালু হয়েছে।
আজ বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে আওয়ামী আমলের দুর্নীতি মামলা তৎকালীন কমিশন জোর করে বন্ধ করে দেয়। সে সময় যথেষ্ট প্রমাণ ছিল। তবুও কমিশন পিছু হটে।”
২০১৪ সালে তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান ও কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে এই প্রথম অভিযোগ তোলা হলো দুদকের পক্ষ থেকে। মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দুদক চেয়ারম্যান মোমেন বলেন, “তৎকালীন কমিশন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই তদন্ত বন্ধ করে, যা ওই কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি এখন আর শুধু মেগা প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয় নেই, এর সঙ্গে সাবেক কমিশনের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত হচ্ছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কারও অপরাধ আড়াল করেছেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতির পর পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তোলপাড় শুরু হলে ২০১২ সালে দুদক একটি মামলা দায়ের করে।
মামলায় শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে ২০১৪ সালে মামলার কার্যক্রম গোপনে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটা নিয়েও দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
প্রায় এক দশক পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদক মামলাটি আবার পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতু দুর্নীতির বিষয়ে নতুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়ার সংশ্লিষ্ট ফাইলও রয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “দুর্নীতির বেশ কিছু সুস্পষ্ট প্রমাণ ইতোমধ্যেই আমাদের হাতে এসেছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
২০১২ সালে পদ্মা সেতুর ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, সেতুর কাজ পেতে বাংলাদেশি ও কানাডিয়ান ফার্ম এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা ও কিছু ব্যক্তি ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করেছে এমন প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
পরে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তৎকালীন সুপারিন্টেনডেন্ট প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ জাবেরের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে দুদক।
এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা ও সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল, রমেশ শাহ ও কেভিন ওয়ালেসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়।
বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তারা সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ বেশ কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেন।
দুদক ২০১৪ সালে আদালতে পেশ করা তদন্ত রিপোর্টে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানায়।