রোববারও এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা: ব্যবসা-বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা দেশব্যাপী শাটডাউন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আজ রোববার রাতে ঢাকায় বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাসান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
কর্মস্থলে না ফিরলে সরকার কঠোর হবে
এর আগে খবর বেরোয়, রাজস্ব কার্যক্রম বন্ধ রেখে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে ‘আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড করছেন’ তা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে সরকার ঘোষণা দিয়েছে, অন্যথায় ‘সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে’।
আজ রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিদ্যমান সংকট নিরসনে বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, “বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এ পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সকল অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
“সরকার গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নজিরবিহীনভাবে গত ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।”
“সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থবছরের শেষ ২ মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ ও নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি। সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে।”
“এ পরিস্থিতিতে, অতিজরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সকল কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সকল শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
“আমরা আশা করি, অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।”
ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
ঘুসের বিনিময়ে কর দাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
রোববার তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হয় বলে এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও এনবিআরের কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হতে নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওইসব কর্মকর্তারা ঘুস না পেয়ে কর ফাঁকির মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিককে হয়রানি করতেন বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
এনবিআরের ছয় কর্মকর্তা হলেন আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম, ঢাকা-৮ কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা আশিক রানা, বিসিএস কর অ্যাকাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান, ঢাকা কর অঞ্চল-১৬ অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কণ্ডু।
এর আগে সরকারের এক বিবৃতিতে রাজস্ব কার্যক্রম বন্ধ রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তাকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে এই আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।