ইসরায়েলের আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। ফাইল ছবি
ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে ইসরায়েলের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ‘অ্যারো’র ক্ষেপণাস্ত্রের (ইন্টারসেপ্টর) মজুত পুরোপুরি শেষ হয়ে আসছে। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর এমন খবর নাকচ করে দিয়েছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
ইসরায়েল গত শুক্রবার ভোররাতে ইরানে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে। জবাবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গত কয়েক দিনে ১১ দফা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ার কথা জানিয়েছে ইরানের সামরিক বাহিনী। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের বেশির ভাগই আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর গত বুধবার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের দিকে ৪০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তেহরান। এ ছাড়া ইসরায়েলে হামলার জন্য তেহরান কয়েক শ ড্রোন পাঠিয়েছে।
ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে ধ্বংস করে দিচ্ছে অ্যারোর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থাসহ ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। ইসরায়েলের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘অ্যারো-থ্রি’ আকাশে ২ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে।
গত কয়েক দিনে অ্যারোর ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত কমে এসেছে। ফলে শিগগিরই এ সংঘাতের অবসান না হলে ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা নিয়ে ইসরায়েলে উদ্বেগের তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের এ প্রতিরক্ষা সামর্থ্যের বিষয়ে অবগত আছে এবং বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে পেন্টাগন মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠিয়েছে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে অবগত আছে এবং স্থল, সমুদ্র ও আকাশে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদারে কাজ করছে।
ওই কর্মকর্তার মতে, পেন্টাগন এ অঞ্চলে সহায়তা পাঠিয়েছে। তবে এখন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট প্রয়োজনে তাদের এ মজুত ব্যবহার করছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছে। তবে এ মুহূর্তে অস্ত্রশস্ত্র-সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছে না।
অ্যারোর ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর এই প্রতিবেদন পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, এটি সত্য নয় এবং বাস্তবতার ধারেকাছেও নেই।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মিসাইল ডিফেন্স প্রজেক্টের পরিচালক টম কারাকো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কেউই সারা দিন বসে থেকে ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলি ও তাদের মিত্রদের দ্রুত যা করার দরকার তা করতে হবে। কারণ, আমরা বসে বসে গুলি চালানোর খেলা চালিয়ে যেতে পারব না।”
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করতে অ্যারোর পাশাপাশি ডেভিডস স্লিং ও বিখ্যাত আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করছে ইসরায়েল। এ কাজে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করার কাজে ইসরায়েলকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্রের থাড ও প্যাট্রিয়ট প্যাক-২ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা।
এদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সক্ষমতা কমাতে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির স্থাপনা, মজুত এবং লঞ্চার লক্ষ্য করে শুরু থেকেই হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। গত মঙ্গলবারও ইরানের ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও সংরক্ষণ স্থাপনায় হামলা চালানোর কথা জানায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।