বুধবার ২৫ জুন ২০২৫ ১১ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ২৫ জুন ২০২৫
 
মতামত
শিশুদের জন্যে মায়া-শূন্য জায়নবাদীরা দখলদার আর আমেরিকার পাহারাদার ইসরায়েল





বনবাণী ভট্টাচার্য
Wednesday, 25 June, 2025
6:27 PM
Update: 25.06.2025
6:28:43 PM
 @palabadalnet

 গাজার জাবালিয়া।

গাজার জাবালিয়া।

প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ফ্রান্‌জ কাফ্‌কা রচিত ‘কাফ্‌কা-হারানো পুতুল ও ছোট মেয়েটি’র সাথে অনেকেই পরিচিত। কাফ্‌কা যখন বছর চল্লিশেক, তখন একদিন বার্লিনের পার্কে ঘুরতে ঘুরতে, একটি ছোট্ট মেয়েকে খুব কাঁদতে দেখেন। জিজ্ঞাসা করে জানলেন যে, বাচ্চা মেয়েটার ছোট্ট পুতুলটাকে সে খুঁজে পাচ্ছে না, হারিয়ে গেছে। কাফ্‌কা ও মেয়েটি একটু খোঁজাখুঁজির পর না পে‍‌য়ে, পরদিন আবার দু’জনে খুঁজবে, ঠিক হয়। কিন্তু সেদিনও পুতুলটি পায় না। কাফ্‌কা এরপর বাচ্চা মেয়েটিকে একটা চিঠি দেন, যাতে লেখা ছিল, হারানো পুতুলের বয়ানে যে, “দুঃখ করো না, আমি পৃথিবী ঘুরতে বেরিয়েছি-আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত ও রোমাঞ্চের কথা তোমাকে চিঠি লিখে লিখে জানাবো।” 

এমনি চিঠি লেখা চলতে থাকে। একদিন কাফ্‌কা একটা পুতুল নিয়ে এসে বাচ্চাটাকে বলেন, এই যে তোমার পুতুল। মেয়েটি বলে, ‘এটা আমার পুতুল না।’ কাফ্‌কা পরে পুতুলের আর একটি চিঠি তার হাতে দেন, যাতে লেখা ছিল, “আমি বদলে গেছি ঘুরতে ঘুরতে।” মেয়েটি খুশি হয়ে পুতুল নিয়ে বাড়ি চলে যায়। কাফ্‌কা তার একবছর বাদে মারা যান। 

অনেকদিন পর, মেয়েটি বড় হয়ে পুতুলের ভেতর থেকে কাফ্‌কার সই করা একটা চিঠি পেয়ে দেখে, লেখা আছে — “Everything you love, probably be lost, but in the end, love will return in another way….”। ‍‌(তোমার ভালবাসার বস্তু হয়তো হারিয়ে যায়, কিন্তু শেষে সেই ভালবাসা অন্যভাবে ফিরে আসে)।

এক.

কাফ্‌কার সময়ের সেই পৃথিবীটা এখনও আছে -ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও আছে, ১ জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস এবং ২০ নভেম্বর বিশ্ব শিশুদিবসও আছে, আছে সম্মিলিত জাতিসংঘও। কিন্তু থাকছে না মানুষের একমাত্র ধর্ম যে মানবিকতা, সেটাই। প্রায় মানবিকতা-শূন্য এই পৃথিবীতে, আজ হামাস নয়, শত্রু প্রতিটি ফিলিস্তিনি শিশু বলে শিরোনাম লেখে সংবাদপত্র। আকাশ-বাতাস ভরে যায়, পৈশাচিক চিৎকারে - “গাজার সমস্ত শিশুকে মেরে ফেলা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।” 

পুরুষ শরীরে নারী-মন আর নারী-দেহে, পুরুষ-মনই কেবল বন্দি থাকে না কখনও কখনও, মানুষের শরীরে আটকে পড়ে বীভৎস গর্জন করে ওঠে বন্দি পশু ও দানবেরা, ওই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীও তার সরকারের ঘনিষ্ট দক্ষিণপন্থী মোশে ফেইগলিনের মতো বা আধিপত্যকামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো। ২০২৩ সাল থেকে আমেরিকার তত্ত্বাবধানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে সার্বিক ধ্বংস তো বটেই, বিশেষ করে শিশুমেধযজ্ঞ করে চলেছে। ধ্বংস করছে স্কুল-কলেজ-ক্যানসার হাসপাতাল থেকে ত্রাণশিবির। দেশে দেশে এখন তৈরি হয় আধুনিক স্মার্ট সিটি। গাজায় বানানো হচ্ছে প্রায় ঘেটোর মতো ‘টেন্টসিটি’ এবং সেখানেও ইসরায়েল ছুঁড়ছে ক্ষেপণাস্ত্র। গাজা দখলের জন্যে বাসিন্দাদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করছে ইসরায়েলী সেনা। এলাকা ছেড়ে উদ্বাস্তু শিবিরে যেতে বাধ্য করার জন্য সোশাল মিডিয়ায় সেনাবাহিনী আতঙ্ক ছড়াচ্ছে যে, এলাকা না ছাড়লে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হতে হবে তাদের। এখন তো গাজায় আকাল।

যুদ্ধের পিছু নেয় আকাল বহু সময়েই, কিন্তু আকালের এমন ছদ্মবেশ, স্বয়ং আমেরিকাও ভিয়েতনামে নেয়নি। জাতিসংঘের ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা-অবরোধ সৃষ্টি তো বহুকাল ধরেই চলছে গাজায়, এখন রঙ্গমঞ্চে, না, সরাসরি রণাঙ্গনে নয়, উপস্থিত ‘গাজা হিউম্যানেটেরিয়াল ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) আমেরিকা ও ইসরায়েলের যৌথ ত্রাণ প্রচেষ্টা আসলে গাজা দখলের আর একটি ‘ধ্বংস-প্রকল্প’। ইসরায়েলী সেনা এবং মার্কিন জায়নবাদীদের নিয়ন্ত্রিত এই সংস্থা ত্রাণ মজুত করছে, উচ্ছেদ এমনকি গণহত্যাও করছে। আর ফিলিস্তিনকে মানচিত্র থেকে মুছে দিতে, পৃথিবীর নিকৃষ্ট এবং নিষ্ঠুরতম বাণিজ্য চালাচ্ছে-না খাদ্যের বিনিময়ে বুভুক্ষু মানুষের বশ্যতা আদায়ের অমানবিক প্রকল্প, যা এক অর্থে যুদ্ধেরই হাতিয়ার। মাঠে মাঠে ধান ও অন্যান্য ফসল ফলায় অন্নদাতা যে কৃষক, কারখানায় কারখানায় রুটি বেবিফুড ও অন্যান্য খাবার জিনিস তৈরি করে যে অন্নদাতা শ্রমিক, তারা দুঃস্বপ্নেও কখনও ভাবতে পারে না যে ‘ক্ষুধা’কে পণ্য করে, যুদ্ধাস্ত্র হিসাবে তাকে কোনও মানুষ ব্যবহার করতে পারে। ইসরায়েল সৃষ্ট এই কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করার মানুষের ক্ষমতাটুকুও কেড়ে নিয়েছে ইসরায়েল ও আমেরিকা। একটু শাকসবজি নিজেদের মতো উৎপাদন করবে তার উপায়ও নেই, কারণ লোহা, বারুদ কংক্রিটের ছড়িয়ে পড়া টুকরো-টাকরায় জমি আর চাষযোগ্য নেই। গাজার মাত্র ৫ শতাংশ জমিই চাষের উপযুক্ত এখন।

দুই.

জাতিসংঘের ত্রাণ যখন অবরোধের লক্ষ্য হয়, তৃষ্ণার পানি যখন পিপাসার্তের কাছে পৌঁছাতে দেওয়া হয় না, মায়ের শীর্ণ স্তন কামড়ে কামড়ে রক্তাক্ত করে যে দুধের শিশু, তার বেবিফুডের অধিকারটুকু কাড়ে যে দস্যুরা, মৃত্যুকে চোখ রাঙা‍‌নো জীবনদায়ী জরুরি ওষুধপত্র, তচনচ করে যে দানবেরা, তাদের চোখে কি ভেসে ওঠে না, নিজের ঘরের নিষ্পাপ শিশুদের মুখ, যাদের নিরাপদে রেখে মায়েরা তাদের সন্তানদের কপালে টিপ পরিয়ে দেবার জন্যে ‘আয় আয় চাঁদ মামা-জাদুর কপালে টি দিয়ে যা’ বলে ডাকে? মায়ের কোলে সেই খুশিতে হাসিভরা অন্যসব শিশুর মুখ বোমার আগুনে বীভৎস করে দিতে এতটুকু মায়া হয় না?

অথচ শিশুদের মুখে একটু খাবার দিতে একটু হাসি দেখতে ১ম যুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে রাষ্ট্রনায়করা ১৯১৯ সালেই, যুদ্ধের বলি, অনাথ-আশ্রয়হীন বুভুক্ষু শিশুদের রক্ষা করার জন্য শিশু অধিকারপত্র তৈরি করে এবং ঘোষণা করেন। ১৯২৫ সালে জেনেভায় বিশ্ব শিশু সম্মেলনেও ঘোষিত হয় শিশু অধিকার। কিন্তু প্রয়োগের আগেই বেঁধে যায় ১৯৩৯-৪৫ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত সেই ভয়‌ঙ্কর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ যাতে  ২ কোটি নিহত মানুষের মধ্যে ৬০ লক্ষই শিশু আর ৩০ হাজার বন্দি-শিশু। নাৎসি নৃশংসতার অসহায় শিকার হয়েছিল শিশুরা। কনসেন্ট্রেশন ক্যা‍ম্পে  নিয়ে যাবার পথে, মায়েদের কোলে লুকিয়ে থাকা শিশুদের টে‍‌নে নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে‌ছে, কখনও ফাঁসি দিয়েছে, কখনও চুনের পানির গর্তে সারাদিন দাঁড় করিয়ে রেখে মেরেছে নাৎসি জল্লাদরা। 

এই বীভৎস অতীতের পটভূমিতে ১৯৫০ সালে, বিশ্ব-নারী সংঘ শিশুর অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ১ জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের ঘোষণা করে। চীন অবশ্য ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকেই দিনটি উদ্‌যাপন করতে শুরু করে। বিশ্বের সব দেশই ১ জুন শিশু দিবস পালন করে। ১৯৭৯ সালে আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষ  ঘোষিত হলে ১৯৮৯ সালে সাধারণ জাতি-পরিষদ শিশু অধিকার সনদ গ্রহণ করে। ১৯৯০ সাল থেকে ২০ নভেম্বর জেনেভা বৈঠকের সেই দিনটিই স্মরণে রেখে সারা বিশ্বে ঐ দিনটিই শিশু দিবস হিসেবে সাধারণত পালিত হয়, যদিও বছরের যে কোনও একটি দিন ‍শিশুদের জন্য উদ্‌যাপনের পরিসর ঘোষিত হয়েছে। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল যথাক্রমে ৮ ও ১২ অক্টোবর শিশু দিবস পালন করে। ভারতে কখনও ১ জুন, কখন পণ্ডিত নেহরুর মৃত্যুর পরে তাঁর জন্মদিন ১৪ নভেম্বরেও শিশু দিবসের উদ্‌যাপন হয়।

তিন.

শিশু আছে, দিবস আছে, আছে তার উদ্‌যাপনও, কিন্তু নেই মন-পৃথিবীর মন, নেই পৃথিবীর হৃদয়। হৃদয়‌হীন পৃথিবী, লোভে-দম্ভে-দাপটে ক্রমশ হিংস্র হয়ে উঠেছে। ভীষণ দ্বন্দ্ব-বিরোধ-বিদ্বেষ-হিংসার মধ্যে জন্ম নিচ্ছে, বড় হচ্ছে, কোটি কোটি শিশু, পুষ্টিহীন-শিক্ষাহীন, যুদ্ধের বিভীষিকার ট্রমায় আক্রান্ত, দুর্বল দেহমনে স্নায়ুরোগগ্রস্ত। যুদ্ধ, অতীতেও ছিল, কিন্তু সীমাবদ্ধ ছিল কেবলমাত্র সমরক্ষেত্রের মধ্যে। ১৯৮০-৯০’এর এক দশকে অন্তত ৯০% জনগণ যুদ্ধে আক্রান্ত হয় যার ৫০ শতাংশই শিশু। ১৯৯৪ সালে তো প্রায়  ৩ লক্ষ নিহত হয়েছে। 

সাম্প্রতিক ইউক্রেন-রাশিয়া বি‍শেষত সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাতের মতো ফিলিস্তিন নিশ্চিহ্ন করার, দীর্ঘস্থায়ী ইসরায়েলের বিধ্বংসী আক্রমণে আহত ও নিহত শিশুর লাশ শিউড়ে ওঠার মতো। গাজায় আজ ৫ তো কাল ২৫ শিশুর প্রাণ কেড়ে নেয় ওরা। যে শিশুরা বেঁচে গেল, পৃথিবীর আলো-হাওয়ায় যাদের অধিকারটুকু রয়ে গেল এবং স্বাভাবিক পরিবেশে যারা জন্মায় এবং বড় হয়, তা‍‌দের বেঁচে থাকার জন্যে এতবড় বিশ্ব কি করে? 

পৃথিবীতে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন শিশুর ৩৫০ মিলিয়ন চরম দারিদ্রপীড়িত, কে জবাব দেবে-কেন প্রতি সেকেন্ডে ১টি শিশু, প্রতি লক্ষে ৩০ হাজার শিশু-শুধু ক্ষুধার কারণে মারা যায়? কেন ভোগে প্রতিবছর ৪৫ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে? যে শৈশবে শিশুর বাবা-মায়ের হাত ধরে খেলনা কিনতে যাবার কথা সেই শৈশবে কেন তাদের চলন্ত গাড়ির কাছে ছুটে ছুটে, রঙিন বেলুন বিক্রি করে নিজের ও ভাই-বোনের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়? যে সময়ে তাদের হাতে স্লেট-পেন্সিল, খাতা-কলম থাকতে পারত, কেন তখন তাদের কাউকে বাবুর বাড়ির বাসন মাজতে বা কাউকে চায়ের দোকানের কাপ-ডিশ ধোওয়া ‘বয়ে’র কাজ করতে হয়? এ‍‌ই পৃথিবীতে ১৬ কোটি শিশু কাজে নিযুক্ত শুধু নয়, বিপজ্জনক কাজেই তারা কাজ করে, কেবল ভারতেই যেমন তা ২৩টি আইন নিষিদ্ধ, শিশু শ্রম দ্বারা উৎপাদিত পণ্য আছে, বিশ্বের মোট এমন ৭৪টি পণ্যের মধ্যের রাষ্ট্রের কোন কল্যাণে? কার স্বার্থে?

‘এলেম আমি কোথা থেকে’— মায়ের কাছে প্রতিটি শিশুর এই প্রশ্নের জবাবে মায়েরা বলেন-‘আমার চিরকালের আশায়, আমার সকল ভালবাসায়/... আমার তরুণ অঙ্গে অঙ্গে, জড়িয়ে ছিলি সঙ্গে সঙ্গে,” ; তখন বিশ্ব মাতৃ হৃদয়ের অব্যক্ত চিৎকার, কার পাপে, কার অন্যায়ে আমার বুকের ধন রাষ্ট্রের কাছে কেন এত হেলা-ফেলার, কেন তাদের অকালে ঝরে যেতে হয়? কেন এ বিশ্বের পিতৃ-পিতামহে? স্বার্থের সংঘাতে নিবীর্যতায় তাদের রক্তাক্ত লাশ হতে হয়? জীবন-শিল্পী চার্লি চ্যাপলিনের কথা হয়তো তাদের কানে বাজে - “এই পৃথিবী যথেষ্ট সম্পদশালী, সকলের বাঁচার উপায় করতে পারে।”

চার.

তবু তারা ঝরে যায়, শরণার্থী হয়, এবং শেষ পর্যন্ত আক্রমণকারী দানবের শত্রুও হয়ে পড়ে। অথচ, ১৯৪৩ সালে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের মিত্র শক্তির অন্যতম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল একটি বেতার বক্তৃতায় সঠিকভাবেই তো বলেছিলেন – There is no firmer investment for any community than fitting milk in to babies  (শিশুর মুখে দুধ ঢেলে দেওয়ার চেয়ে‌ কোনও সম্প্রদায়ের মহত্তর/সুন্দরতর বিনিয়োগ নেই)।” কারণ শিশুরা জাতির সম্পদ, তারা দেশের ভবিষ্যৎ। আবার ঠিক এই কারণেই, ক্ষমতাসীন শাসক, ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে শিশুদের খাইয়ে পরিয়ে, লেখা-পড়া করিয়ে সচেতন-হৃদয়বান দেহে ও মনে সুস্থ সবল মানুষ হতে দিতে চায় না। আর পররাজ্য গ্রাসীরা গণহত্যায় শিশুর রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন শরীর দেখে উল্লসিত হয় যে, শত্রু দেশ দখলের ভবিষ্যৎ তাদের অবাধ হবে, বাধা দেবার মানুষের অভাবে।

যুদ্ধ-বিগ্রহে, প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে শিশুরা উপস্থিত। শোনা যায়, যোদ্ধাজাতি স্পার্টানরা, যোদ্ধা হবার অনুপযুক্ত হবে বলে রুগ্ন-দুর্বল শিশুদের অল্প বয়সেই মেরে ফেলত। যুদ্ধের কোনও কাজেই লাগবে না বলে তো শিশুদের হত্যা করত হিটলারের জল্লাদবাহিনী। ক্ষমতা হারাবার ভয়ে মিশরের ফারাও, তার রাজত্ব সদ্যোজাত হত্যা করে প্রায় শিশুশূন্য করেছিলেন। আর শ্রীকৃষ্ণের কংসমামাও তো তার ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বীকে জন্ম মুহূর্তেই শেষ করার জন্যে বোন দেবকীর গর্ভজাত সন্তানদের কতভাবে হত্যা করেছে -এমন কি গোকুলে শিশুদেরও বাঁচতে দেয়নি কারণ কৃষ্ণ গোকুলে মহারাজ নন্দর গৃহে বেড়ে উঠছিল। মহাভারতে নৃশংসতম ঘটনা— কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষের পরদিন নিশুতি রাতে পাণ্ডবশিবিরে ঢুকে দ্রোণাচার্য-পুত্র অশ্বত্থামা অর্জুনের ছেলে পরিক্ষীত ছাড়া সমস্ত শিশুকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে পাণ্ডবদের নির্বংশ করার জঘন্য চেষ্টা।

পাঁচ.

কৃষ্ণজন্মের পরে তার বোনকে হত্যা করতে উদ্যত হলে, রাজা কংসকে সে জানিয়েছিল — “তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। ‘ইসরায়েলের তাই প্যালেস্তানী সব শিশুই আজ শত্রু— পরিবার-পরিজনদের মধ্যে স্নেহ প্রেমে, শিক্ষা দীক্ষায় ভরা গোকুলে’ তাদের বেড়ে উঠতে দিতে নারাজ। প্যালেস্তানী শিশু নিজের নাম বলার আগে ‘ধালাদি বালাদি’ বলে গান গেয়ে ওঠে। ওদের শিশু-কিশোর উচ্চারণ করে “আমি অজেয় আমাকে ভাঙা যাবে না— আমি স্বাধীন হবার জন্যই জন্মেছি।” 

এমন আণবিক বোমার থেকেও বেশি শক্তিধরদের, দখলদার ইসরায়েল বাঁচিয়ে রাখতে পারে? সে তো নি‍‌জেদেরই কবর খোঁড়া। তাই ঝরনার মতো চঞ্চল পায়ে ছুটে চলা, ১৩ বছরের মেয়ে ইয়াকিন হাম্মাদ, কলকলিয়ে হেসেখেলে শরণার্থী শিবিরের আশাহীন, ভরসাহীন, বিষাদগ্রস্ত মানুষগুলোকে আনন্দ দিয়ে, হতাশা থেকে তুলে আনার চেষ্টায় ক্লান্তিহীন ব্রতী হয়ে উঠেছিল, শরণার্থী শিবিরে বোমা বর্ষণ করে হামাসের চেয়েও বড় শত্রু সেই ছোট্ট ইয়াকিন‍‌কে মুহূর্তে ইসরায়েলী দস্যুরা মাংসপিণ্ডে পরিণত করে বেহায়া ছাতি ফুলিয়েছে। শত্রুতা থাকলেও, ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, শত্রুর সন্তান শিশু বলে রক্ষা পায়। কিন্তু আমেরিকার প্রভুভক্ত ইসরায়েল এতটাই জঙ্গলের নীতিতে বিশ্বাস করে এবং এতটাই হৃদয়হীন যে, ওরা অনায়াসে বলে উঠতে পারে, “আমার সন্তান আগে, পরের সন্তানের জন্যে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই।” শিশুদের জন্যে স্বাভাবিক মায়া-শূন্য এই জায়নবাদী দখলদার আর আমেরিকার পাহারাদার ইসরায়েল।


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com