![]()
আসসালামু আলাইকুম, ঈমানদার ভাইবোন সবার প্রতি আসন্ন ঈদের আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি ও দুনিয়ার সব ভাইবোনদের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও সুপথ কামনা করছি। দয়াময় আল্লাহতাআলা ও তার পরম প্রিয়তম হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের প্রেম ও নৈকট্য সাধনায় আত্ম উৎসর্গের ঈমানী চেতনায় আমরা কোরবানির ঈদ উদ্যাপন করতে যাচ্ছি। কোরবানির মূল শিক্ষা আত্মা ও জীবনের সকল অধ্যায় এবং জগতের সকল ব্যবস্থা একমাত্র রেসালাত কেন্দ্রীক তাওহীদ ভিত্তিক হতে হবে। ঈমানের পবিত্র কলেমার বন্ধন ও অস্তিত্ব রক্ষার যে মূল শিক্ষার বাস্তব দিকদর্শন আমরা লাভ করি শাহাদাতে কারবালার আলোকদিশা থেকে। কোরবানির শিক্ষা জীবন বস্তুর ঊর্ধ্বে অর্থাৎ দয়াময় আল্লাহতাআলা ও তার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উদ্দেশ্যেই জীবন। কোরবানির অর্থ সত্যের সাথে জীবন একাকার হয়ে যাওয়া অর্থাৎ যে জীবন অন্য সব কিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহতাআলা ও তার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেমে পূর্ণরূপে উৎসর্গীকৃত হতে পারেনি সে জীবন মিথ্যার অংশ ও মিথ্যার গ্রাসে পরাজিত জীবন। নিছক মৌখিক বা বাহ্যিক প্রদর্শনী নয়, জীবনের বাস্তব পর্যায়ে আল্লাহতাআলা ও তার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেম যদি সব কিছুর ঊর্ধ্বে না থাকে কিম্বা কোনো বাতিল দল মত ব্যবস্থার সাথে জড়িত থাকে তাহলে কোরবানি মোনাফেকি ও প্রতারণা মাত্র এবং ঈমানী অস্তিত্বই থাকে না। কোরবানি এই শিক্ষাই দেয় যে, যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে হলেও ঈমানী অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে এবং সর্ব বাতিল থেকে মুক্ত থাকতে হবে তথা ইসলামের ছদ্মবেশী সালাফি-ওহাবি-শিয়া-খারেজি ইত্যাদি বাতিল ফেরকা, নাস্তিক্যউদ্ভূত বস্তুবাদি মতবাদ, বিভিন্ন ধর্র্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদ এবং এ সকল বাতিল জালিম অপশক্তির বিরুদ্ধে চির আপসহীন সংগ্রামের ধারায় থাকতে হবে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেকোনো ভাবে কোনো প্রকার বাতিল মত পথের সহযোগী হলে কোরবানির চেতনা তথা ঈমানী চেতনা নসাৎ হয়ে যায়। আমরা এমন এক সময়ে ঈদ উদযাপন করছি যখন দুনিয়াব্যাপী ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাত ভয়ংকর সংকটে বিপন্ন। ফিলিস্তিন-আরাকান-ইরাক-সিরিয়া সহ আরও অনেক দেশে নৃশংস গণহত্যা চালানো হচ্ছে। শিশু-মা-বোনকে নির্বিচারে খুন করা হচ্ছে। বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে সবাইকে এ অবর্ণনীয় দুঃখের সাগরে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। পবিত্র হাদিস শরীফে বলা হয়েছে “সারা দুনিয়ার মুমিনগণ এক দেহের মতো, দেহের একাংশে ব্যাথা যন্ত্রণা কষ্ট হলে সারা দেহই কষ্ট পায়”। দ্বীনের সংকটে, বাতিলের আগ্রাসনে, মিল্লাতের এ ভয়াবহ দুর্যোগ সংকটে কোনো মুমিন সত্যিকার আনন্দ উদযাপন করতে যেমন পারে না, তেমনি নির্বিকার দায়িত্বহীনও হতে পারে না। এ দুরবস্থার জন্য যেমন বাতিল ফেরকা, বস্তুবাদী মতবাদ, ধর্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদ ও তাদের সৃষ্ট একক গোষ্ঠীবাদি অমানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং বিশ্বব্যবস্থা দায়ী, তেমনি আমাদেরও নিজেদের অনৈক্য, নিজেদের দায়িত্বহীনতা এবং সর্বোপরি নিজেদের স্বাধীন পূর্ণাঙ্গ পবিত্র পথে না চলাও দায়ী। প্রাণপ্রিয় মহামহিম পবিত্র আহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মহামান্য খোলাফায়ে রাশেদীন, মকবুল সাহাবায়ে কেরাম, সত্যের ইমামবৃন্দ ও মহান জামিয়ে আওলিয়া কেরামের দেয়া নির্ভেজাল ও পূর্ণাঙ্গ পথে চলাই মুক্তি। আধ্যাত্মিক রাজনৈতিক সবদিক থেকে ভাইবোন সবাইকে নিয়ে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ পথে ফিরে না এলে ধ্বংসাত্মক অবস্থা থেকে উদ্ধার ও মুক্তির পথে অভিযাত্রা অসম্ভব। মর্মান্তিক এ দুরবস্থা বিপর্যয়ের মধ্যে নিজেদের ও সমগ্র মানবতার উদ্ধারের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কর্মসূচিতে একাত্ম হয়ে সব ভাইবোনের দুঃখ যন্ত্রণায় একাত্ম হয়ে তাদের সবার জন্য দোয়া ও মুক্তির পথ তৈরির শপথে আমাদের ঈদ উদযাপন করতে হবে। ইসলামের ছদ্মবেশে বিভিন্ন বাতিল ফেরকার অনুপ্রবেশ আমাদের দ্বীন মিল্লাতের এ সংকট ও বিপর্যয়ের জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী যারা, তারা আমাদেরকে ঈমান দ্বীনের প্রকৃত ধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত থেকে বিচ্যুত করে আকিদা ও আদর্শ সব দিক থেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব বাতিল ফেরকার ধোঁকা বুঝতে না পারলে আমরা নিজেদের ঈমান ও দ্বীন রক্ষা করতে পারব না। বিভিন্ন মসজিদেও এরা ঢুকে পড়েছে, যাদের এক্তেদায় নামাজ হয় না এবং যাদের বক্তব্য পবিত্র কোরআনুল করীম ও হাদিস শরীফের অপব্যাখ্যা। এমতাবস্থায় আমরা সব সুন্নী ভাইবোনকে যেখানে সুন্নী ইমাম আছেন কেবল সে সব মসজিদ ও ময়দানে নামাজ আদায়ের অনুরোধ জানাচ্ছি। এতদসংগে আমরা ভাই ও বোন সবাইকে ঈদের নামাজে শরিক হওয়ার এবং দ্বীন-মিল্লাত-মানবতার সার্বিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি, যা মকবুল সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু আনহুমের আদর্শ ও দ্বীনের প্রকৃত ধারার নির্দেশনা এবং দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতার রূপরেখা। পবিত্র হাদিস শরীফের সর্বজনমান্য কিতাব মুসলিম শরীফে ২৪৪ পৃষ্ঠা ১৯২৬ নং হাদিদে ঈদের নামাজে বোনদেরকে থাকার জন্য শুধু স্বাভাবিক অবস্থায় নয়, এমন কি প্রাকৃতিক অসুবিধাজনক অবস্থায়ও শামিল হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উক্ত মহান হাদিস শরীফে নির্দেশ হিসেবে বলা হয়েছে, মহান মা সাহাবী হজরত উম্মে আতিয়া রাদিআল্লাহু আনহা বলেছেন, “প্রাণাধিক প্রিয়নবী আল্লাহতায়ালার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম আমাদের সব মেয়েদেরকে ঈদের জামাতে শরীক হতে আদেশ দিয়েছেন, এমনকি যদি তারা প্রাকৃতিক চক্র অবস্থায়ও থাকে তবুও যেন ঈদ জামাতে শরীক হয়, প্রাকৃতিক কারণে নামাজ পড়তে না পারলেও দোয়া মোনাজাত সালাতু সালামে শরীক হতে হবে।” আমরা দ্বীন-মিল্লাত-মানবতার সকল দায়িত্ব ও উদযাপনে এবং ঈদের আনন্দময় জামাতে ঈমানদার ভাইবোন সবাইকে শরিয়ত সম্মত সুস্থ স্বাভাবিক পোশাক পরিচ্ছদে অংশগ্রহণ করে কোরআনুল করীম ও হাদীস শরীফের নির্দেশ পালনের এবং দ্বীনের পূর্নাঙ্গতা বিকাশে মুক্তির অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ ও দাওয়াত জানাচ্ছি। সবাইকে ঈদের মোবারকবাদ এবং বিপন্ন ভাইবোনদের সীমাহীন কষ্টে সমব্যাথী হয়ে উদ্ধার ও মুক্তির সাধনায় ঐক্যবদ্ধ অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়ারও আকুল আবেদন জানাচ্ছি। পবিত্র কেবলাভুমির পুনরুদ্ধার এবং বাতেল জালেম অপশক্তির কবল থেকে মিল্লাত ও মানবতার উদ্ধার এবং মুক্তির মাধ্যমেই সকল ঈদের উৎস মহান ঈদে আজমের আলোকধারায় স্বার্থক ও পরিপূর্ণ ঈদ উদযাপন সম্ভব। আল্লামা ইমাম হায়াত: বিশ্ব সুন্নী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লবের প্রবর্তক |