
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ। পেরুর রাজধানী লিমায়, ১৫ অক্টোবর ২০২৫। ছবি: রয়টার্স
লিমা: পেরুতে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও চুক্তিভিত্তিক হত্যার মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তে সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এরপর ক্ষমতাসীন নতুন প্রেসিডেন্ট জোসে জেরি কঠোর হাতে এসব অপরাধ দমনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের এক সপ্তাহ পার হলেও তিনি চোখে পড়ার মতো কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার দেশটির রাজধানী লিমাসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়। এতে অন্তত একজন নিহত ও শতাধিক আহত হন।
পেরুর মানবাধিকার-সংক্রান্ত দপ্তর ওমবাডসম্যান জানায়, বিক্ষোভে মোট ১০২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৪ জন সাধারণ নাগরিক এবং ৭৮ জন পুলিশ।
জেন-জিরা বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বুধবার আরও কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হলেও লিমাতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। মূলত সেখানেই সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, আগের সরকারের মতো নতুন সরকারও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।
বুধবার সন্ধ্যা নামার পরপর কিছু বিক্ষোভকারী পার্লামেন্টের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করেন। অনেকে পুলিশের দিকে পাথর ছোড়েন ও আতশবাজি জ্বালান। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়েন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে নতুন প্রেসিডেন্ট জেরি বলেন, “৩২ বছর বয়সী এদুয়ার্দো রুইজ সানজের মৃত্যুতে আমি দুঃখিত।” তিনি রুইজ সানজে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অপরাধীরা ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
পেরুর ‘জাতীয় মানবাধিকার সমন্বয়ক’ নামের একটি এনজিও জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিকে সম্ভবত সাদাপোশাকে থাকা পুলিশ গুলি করেছে। বার্তা সংস্থা এএফপির ছবিতে এক পুলিশ কর্মকর্তার মুখে রক্ত দেখা গেছে। তিনি বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরে আঘাত পেয়েছেন।
কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর গত শুক্রবার পেরুর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তে বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অভিশংসন ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তার বিরুদ্ধে অপরাধ বৃদ্ধি ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, রাষ্ট্র থেকে কোনো নিরাপত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। চাঁদাবাজি ও চুক্তিভিত্তিক হত্যার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
৪৯ বছর বয়সী ফ্রিল্যান্সার অ্যামান্ডা মেজা এএফপিকে বলেন, “নতুন প্রেসিডেন্ট এসে চোখে পড়ার মতো এমন কিছুই করেননি, ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।”
জেন–জি জেন জিদের নেতৃত্বাধীন একটি প্ল্যাটফর্ম, শিল্পীদের কয়েকটি গোষ্ঠী ও কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন বুধবারের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল। নতুন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার অভিযোগে কয়েকটি নারীবাদী গোষ্ঠীও বিক্ষোভে যোগ দেয়।
গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) শপথ নেওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট জেরি পেরুর পার্লামেন্টের সভাপতি ছিলেন। আগামী বছরের এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ডানপন্থী এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধে গত বছর একটি মামলা হয়েছিল। কিন্তু প্রমাণের অভাবে গত আগস্টে প্রসিকিউটররা সেই মামলা বন্ধ করে দেন।
পেরুতে খুনোখুনি, চাঁদাবাজি ও চুক্তিভিত্তিক হত্যা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব অভিযোগে সম্প্রতি বিক্ষোভ শুরু হয়। বাস কোম্পানি, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীসহ সমাজের নানা পেশা ও শ্রেণির মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন।
লোস পুলপোস ও ভেনেজুয়েলাভিত্তিক ট্রেন দে অরাগুয়ার মতো বিভিন্ন গ্যাং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালায়। তারা নানা পেশা ও অবস্থার মানুষকে আটকে মুক্তিপণ আদায় করে। প্রেসিডেন্ট জেরি সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছেন। বিক্ষোভের উত্তাপ কমানোর উদ্দেশ্যে তিনি এমনটি করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পালাবদল/এসএ