
রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামছবি: এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
ঢাকা: আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিকতা বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলে সেটা মূল্যহীন হবে। এ কারণে আগামীকাল শুক্রবারের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, সর্বশেষ জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময়ও আইনি ভিত্তির কথা বলা হয়েছিল। শুধু কয়েকটি রাজনৈতিক দল এক জায়গায় বসে একটা দীর্ঘ আলোচনায় কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোই যথেষ্ট নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চয়তা দিতে হবে, পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় গেলে সেগুলো বাস্তবায়ন করবে।
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যে প্রক্রিয়া, যে আলোচনা হবে, সেটির একটি আইনি ভিত্তি দিতে হবে।
আগামীকাল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীকাল যে অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে, সেখানে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ঘটনা ঘটবে। জুলাই সনদে আইনিভাবে যে আদেশ জারি করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি না করে স্বাক্ষরের বিষয়টি কেবল আনুষ্ঠানিকতা হবে। জুলাই সনদ এর মধ্যে হয়ে গেছে। সব রাজনৈতিক দল একটা জায়গায় ঐকমত্যে এসেছে, কী কী পরিবর্তন হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে কিছু কিছু দলের বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে। তাদের ভিন্নমত থাকতেই পারে। গণভোটে সামগ্রিক বিষয়টিই যাবে। জনগণ যদি পক্ষে ভোট দেন, তাহলে জুলাই সনদ অনুমোদিত হবে এবং পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার করবে। ফলে পুরো প্রক্রিয়ার মূল জায়গাটা হবে আদেশ, যে সাংবিধানিক আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে এবং পুরো প্রক্রিয়া এগোবে।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রের আগেও দাবি ছিল আইনি ভিত্তি থাকবে। কিন্তু সেটা হয়নি। জুলাই ঘোষণাপত্রের যে টেক্সট, সেটি নিয়ে কিন্তু একধরনের প্রতারণা করা হয়েছে। সেই টেক্স আমাদের দেখানো হয়নি। আগে যে অংশ দেখানো হয়েছে, ঘোষণাপত্র পাঠের সময় যেটা পরিবর্তিত হয়েছিল এবং সেটা অনেক কম্প্রোমাইজ একটা ডকুমেন্ট হয়েছে।”
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, “আমরা আরেক ঘটনা সাক্ষী হতে চাই না, যেটার আসলে কোনো মিনিং নেই। আমরা আইনি ভিত্তি ছাড়া ও অর্ডারের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া যদি সনদে স্বাক্ষর করি, সেটা মূল্যহীন হবে এবং পরবর্তী সময়ে সরকার আদেশ কিসের ভিত্তিতে দেবে, সেটির কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। আমরা সেই বিষয়টা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জুলাই সনদ স্বাক্ষরের যে অনুষ্ঠান বা যে আয়োজন চলছে, সেখানে আমরা নিজেরা অংশীদার হব না।”
জুলাই সনদের খসড়া স্বাক্ষরের আগে প্রকাশের দাবি জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই যে এই পুরো প্রক্রিয়া সফল হোক। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, এই আদেশের খসড়া সনদ স্বাক্ষরের আগেই প্রকাশ করতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় অনুসারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। অর্থাৎ আমরা বলছি যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ হবে, এর খসড়ায় আমাদের ঐকমত্য হতে হবে। তার ওপর ভিত্তি করে আমরা জুলাই সনদের স্বাক্ষরের বিষয়টা বিবেচনা করব।”
তিনটি বিষয় পরিষ্কার হওয়ার পর জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হতে পারে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রথমত, এই সরকারের বৈধতার মূল উৎস জুলাই গণ–অভ্যুত্থান। ফলে জুলাই সনদের বৈধতার উৎস হতে হবে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান। সেই জায়গা থেকে সেটি রাষ্ট্রপতি নয়, বরং সরকারপ্রধান হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। দ্বিতীয়ত, জুলাই সনদে ৮৪টি বিষয় রয়েছে। এই ৮৪টি বিষয় একত্রে গণভোটে যাবে। গণভোটে ‘নোট অব ডিসেন্ট’–এর আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। তৃতীয়ত, গণভোটের দ্বারা জনগণ সনদ অনুমোদন করলে, অর্থাৎ পক্ষে ভোট দিলে পরবর্তী সংসদ সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার করবে। এই তিনটি দাবির বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার পর জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান হতে পারে। এই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জুলাই সনদ স্বাক্ষর একটা আনুষ্ঠানিকতা। এই বিষয়গুলো স্পষ্ট না করে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আয়োজন ছলচাতুরীর মতো।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদকে অবশ্যই আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং সেই আইনি ভিত্তির মধ্য দিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া না হলে ’২৪–এর অভ্যুত্থানে যে অর্জন, সেটি হাতছাড়া হয়ে যাবে।
পালাবদল/এসএ