
সংগৃহীত ছবি
এ বছর চিকিৎসায় যৌথভাবে নোবেল পেয়েছেন ম্যারি ই. ব্রুনকো, ফ্রেড রামসডেল ও শিমন সাকাগুচি। মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যপ্রণালী বিষয়ে গবেষণার জন্য দুই মার্কিন ও এক জাপানি গবেষক এই পুরস্কার পেলেন।
সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকেলে সুইডেনের স্টকহোমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
নোবেল কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মানবদেহের শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, না হলে এটি শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর আক্রমণ করতে পারে। এই তিন বিজ্ঞানীর আবিষ্কার দেখায়, কীভাবে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যেন এটি শরীরের নিজস্ব কোষ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করতে না পারে।
প্রতিদিন রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা মানবদেহকে হাজার হাজার ভিন্ন ধরনের জীবাণু থেকে রক্ষা করে। এই জীবাণুগুলো বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। অনেক জীবাণুর এমন বৈশিষ্ট্য থাকে, যা মানব কোষের সঙ্গে মিলে যায়। এতে জীবাণু শরীরে লুকিয়ে থাকতে পারে। তাহলে প্রশ্ন হলো— রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা কীভাবে ঠিক করে, কোনটিকে আক্রমণ করতে হবে এবং কোনটিকে রক্ষা করতে হবে?
এই তিন বিজ্ঞানী এমন গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছেন, যা দেখায় কীভাবে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত থাকে। তারা এমন কোষ খুঁজে বের করেছেন, যাকে 'রেগুলেটরি টি সেল' বলা হয়, যা দেহের নিজস্ব কোষে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার আক্রমণ রোধ করে।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ওলে ক্যাম্পে বলেন, 'তাদের এই আবিষ্কার আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে এবং কেন আমরা সবাই গুরুতর অটোইমিউন রোগে (স্বপ্রতিরক্ষী রোগ) আক্রান্ত হই না, তা বোঝার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।'
অটোইমিউন হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে দেহের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) ভুলবশত নিজের কোষ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর আক্রমণ করে।
শিমন সাকাগুচি ১৯৯৫ সালে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করেছিলেন। তখন অনেক গবেষক বিশ্বাস করতেন, ইমিউন সহনশীলতা শুধু তখনই গড়ে ওঠে, যখন কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষতিকর ইমিউন কোষগুলো থাইমাসে ধ্বংস হয়, যাকে বলা হয় সেন্ট্রাল টলারেন্স।
কিন্তু সাকাগুচি দেখিয়েছেন, ইমিউন সিস্টেম অনেক বেশি জটিল এবং তিনি এমন এক অজানা ধরনের ইমিউন কোষ আবিষ্কার করেন, যা অটোইমিউন রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
মেরি ব্রানকো ও ফ্রেড র্যামসডেল ২০০১ সালে অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন। তারা ব্যাখ্যা দেন, কেন একটি বিশেষ ইঁদুর প্রজাতি অটোইমিউন রোগের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল।
তারা দেখতে পান, সেই ইঁদুরদের একটি জিনে মিউটেশন আছে, যাকে তারা 'ফক্সপি৩' নাম দেন। তারা আরও দেখান যে মানুষের সমতুল্য জিনে মিউটেশন ঘটলে আইপিইএক্স নামে একটি গুরুতর অটোইমিউন রোগ সৃষ্টি হয়।
এর দুই বছর পর শিমন সাকাগুচি এই আবিষ্কারগুলোকে সংযুক্ত করতে সক্ষম হন। তিনি প্রমাণ করেন যে, ফক্সপি৩ জিন সেই কোষগুলোর বর্ধন নিয়ন্ত্রণ করে, যা তিনি ১৯৯৫ সালে চিহ্নিত করেছিলেন। এই কোষগুলো এখন 'রেগুলেটরি টি সেল' নামে পরিচিত। এরা অন্যান্য ইমিউন কোষ পর্যবেক্ষণ করে এবং নিশ্চিত করে যেন মানবদেহের কোনো টিস্যু আক্রান্ত না হয়।
তাদের আবিষ্কার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণার নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে এবং ক্যানসার ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসার উন্নয়নে উৎসাহ যুগিয়েছে। এই গবেষণার ভিত্তিতে আরও সফলভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব হতে পারে। বর্তমানে এসব চিকিৎসার অনেকগুলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে।
পালাবদল/এসএ