ব্রিফিংয়ে কথা বলছেন হোয়াইজ হাউজের এক কর্মকর্তা, পাশে দাঁড়িয়ে আছেন একজন। ছবি: বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মী বা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের দুই দিনের মধ্যেই ব্যাপকভাবে ছাঁটাই করা শুরু হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। অন্যদিকে, আইনপ্রণেতারা সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সরকারি এই শাটডাউন বা অচলাবস্থার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটরা মধ্যরাতের সময়সীমার আগে নতুন একটি ব্যয় পরিকল্পনায় একমত হতে না পারায় বুধবার থেকে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আপস করতে ইচ্ছুক-এমন লক্ষণ কোনো পক্ষের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে না।
একইসাথে এই অচলাবস্থা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরই, তা বন্ধের জন্য একটি ভোট করার উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে।
তখন থেকেই সিনেট মুলতুবি রয়েছে, যা এই অচলাবস্থাকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।
লাখ লাখ কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়তে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
বুধবার বিকেলে হোয়াইট হাউজের এক ব্রিফিংয়ে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটের সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের উপস্থিত হওয়া ছিল বিরল ঘটনা।
এই অচলাবস্থা নিয়ে ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক খেলা খেলার অভিযোগ করেছেন ভ্যান্স।
“যদি আমেরিকান জনগণের ওপর এর প্রভাব নিয়ে এতোই উদ্বিগ্ন হয়, তাহলে তাদের চিন্তিত হওয়াই উচিত। তাদের যেটা করা উচিত তা হলো সরকারের কর্মকাণ্ড আবার চালু করা। আমরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাই সেটা নিয়ে অভিযোগ করা উচিত নয়,” ডেমোক্রেটদের উদ্দেশে বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সরকারি সংস্থা কংগ্রেস থেকে অনুমোদিত বার্ষিক তহবিলের ওপর নির্ভর করে। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন এই সংস্থাগুলো তাদের অনুরোধ জমা দেয়, যা কংগ্রেসকে পাস করতে হয় এবং প্রেসিডেন্টকে পরবর্তী অর্থবছরের জন্য বাজেট আইনে স্বাক্ষর করতে হয়।
পহেলা অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার আগে যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে শাটডাউন তৈরি হয়। এর ফলে অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, অনেক জরুরি সেবাও বিঘ্নিত হয়।
এরই মধ্যে লেভিট জানিয়েছেন, শাটডাউনের কারণে দুই দিনের মধ্যেই ব্যাপকহারে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা শুরু হবে।
“মাঝে মাঝে আপনাকে এমন কিছু করতে হয় যা আপনি চান না,” বলেন মিজ লেভিট।
তিনি আরও যোগ করেন, “ডেমোক্রেটরা আমাদের এই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।”
এটা ছিল দুই দলের মধ্যে তিক্ত ব্লেম গেম বা পাল্টাপাল্টি অভিযোগের সবশেষ পরিস্থিতি।
সিনেটের শীর্ষ ডেমোক্রেট সদস্য চাক শুমার এর আগেই, রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটদের অর্থায়ন পরিকল্পনা মেনে নিতে 'বুলি' বা হয়রানি করার অভিযোগ করেছিলেন।
ব্যয় চুক্তিতে একমত হওয়ার আগে স্বাস্থ্যসেবা খাতে অর্থায়নের গ্যারান্টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চান ডেমোক্রেটরা।
অন্যদিকে সরকার চালু রাখতে একটি অস্থায়ী স্টপ গ্যাপ বা বিরতি ব্যবস্থা চায় রিপাবলিকানরা, যেটি মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এবং বর্তমান হারে তহবিল দেবে। এর মানে হলো, বাজেট নিয়ে সমঝোতার আগ পর্যন্ত সরকারের ব্যয় যাতে চালু থাকে তার একটা ব্যবস্থা।
নিম্ন আয়ের আমেরিকানদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার সুরক্ষায় সমঝোতার জন্য সরকারকে এই শাটডাউনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেমোক্রেটরা।
রিপাবলিকানদের সম্পর্কে কানেকটিকাটের ডেমোক্রেট সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছেন, “কেন তারা সমঝোতা বর্জন করছে? আমি জীবনে কখনো এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি।”
“বিষয়টি হলো রিপাবলিকানরা যখন ডেমোক্রেটদের সঙ্গে আলোচনায় সিরিয়াস হবে, তখনই সরকারের অচলাবস্থা দূর হবে,” বলেন তিনি।
এদিকে, হেলথকেয়ার বেনিফিটগুলো প্রধান অগ্রাধিকার নয়, বরং সরকার চালু রাখাই গুরুত্বপূর্ণ রিপাবলিকানদের জন্য। তবে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ থাকার পরও অর্থায়ন বিল পাস করতে তারা ৬০টি ভোট পায়নি।
সিনেট মেজরিটি লিডার জন থুন বলেছেন,“এটা এমন নয় যে কে জিতলো বা কে হারলো, কিংবা কে এসব বিষয় নিয়ে দোষ চাপালো।”
“এটা আমেরিকান জনগণের ব্যাপার। আমেরিকান জনগণকে তারা (ডেমোক্রেট) এমনভাবে জিম্মি করে রেখেছে যা তাদের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য লাভজনক বলে মনে করে,“ বলেন তিনি।
তারা বলছেন, ডেমোক্রেটরা যেভাবে সম্প্রসারণ চাচ্ছে তা আমেরিকান করদাতাদের জন্য বেশি ব্যয় সাধ্য হবে এবং এই ব্যবস্থাগুলো কোভিড যুগের জটিলতা মোকাবিলার জন্য চালু করা হয়েছিল যা এখন আর প্রযোজ্য নেই।
শাটডাউনের ফলে স্বল্প সময়ের জন্য সীমান্তের এজেন্ট ও সেনাবাহিনীসহ অপরিহার্য কর্মীদের বেতন ছাড়াই কাজ করতে হবে। কিন্তু অপরিহার্য নয় এমন সরকারি কর্মীদের বিনা বেতনের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এই শাটডাউন বা অচলাবস্থা ২০১৮ সালের তুলনায় অনেক বড় হবে যখন কংগ্রেস কিছু তহবিল পাস করেছিল।
তারা অনুমান করছেন, প্রায় ৪০ শতাংশ ফেডারেল কর্মী বা প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষকে সাময়িকভাবে ছুটিতে পাঠানো হবে।
কিছু কর্মীকে বুধবার ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল কর্মীদের স্থায়ী ছাঁটাইয়েরও হুমকি দিয়েছে।
বুধবার ব্রিফিং এ ভ্যান্স বলেছেন, “আসুন সৎভাবে বলি, যদি এই অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে আমাদের মানুষ ছাঁটাই করতে হবে।”
ভ্যান্স দাবি করেছেন, অনিবন্ধিত অভিবাসীদের হেলথকেয়ার বেনিফিট বাড়ানোর জন্য সিনিয়র ডেমোক্রেটদের অ্যাডভোকেসি করার ফলেই এই শাটডাউন হয়েছে।
যদিও ডেমোক্রেটরা বারবার এই দাবি অস্বীকার করে আসছে।
ইতোমধ্যেই ইউএস আইন অননুমোদিত অভিবাসীদের ফেডারেল ভর্তুকিযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
হাউজ মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফরিস বলেন, “ফেডারেল আইন পরিবর্তন করার কথা ডেমোক্রেটরা কোথাও বলেনি।”
হোয়াইট হাউজের বাজেট বিষয়ের প্রধান রাসেল ভট, আসন্ন ছাঁটাই কেমন হতে পারে সে বিষয়ে ক্লোজ ডোর বৈঠকে রিপাবলিকানদের ব্রিফ করেছেন।
যদিও এই পরিকল্পনাগুলো সম্পর্কে জনগণের কাছে খুবই কম তথ্য রয়েছে।
ক্যাপিটল হিলে বুধবার এই অচলাবস্থার অবসানের জন্য একটি চুক্তি করতে খুব কম আগ্রহ ছিল।
হাউজের রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন বলেন, “আলোচনা বা সমঝোতা করার কিছু নেই। এই বিল থেকে এমন কিছু আমরা বাদ দিতে পারবো না যা এটাকে আরও হালকা বা পরিষ্কার করবে।”
শুক্রবার রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের বিলের ওপর আরেকবার ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।