সামরিক অভিযানের মাঝে এক ফিলিস্তিনি তরুণকে আটক করছেন ইসরায়েলি সেনারা। ফাইল ছবি: এএফপি
একদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে চোরাগোপ্তা হামলায় পটল তোলার ভয়। অপরদিকে, ঘরে ক্রুদ্ধ জীবনসঙ্গী। এ মুহূর্তে ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনাদের জীবন যেন শাঁখের করাতের মতো। এক দিকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর 'স্বদেশপ্রেমে বলিয়ান' হওয়ার বুলি, আরেকদিকে বাসার মানুষজনের চোখ রাঙানি। যেন ভালো বিপদেই রিজার্ভ সেনারা।
হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রায় দুই বছরের যুদ্ধ প্রতিটি পুরুষ ও নারী রিজার্ভ সেনার পারিবারিক জীবনকে প্রভাবিত করেছে।
গত রোববার দ্য জেরুসালেম পোস্টের প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস হামলা চালালে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হন। ওই হামলার জবাবে সেদিনই গাজায় প্রতিশোধমূলক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
অপরদিকে, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে হামাসের সমর্থনে লেবাননের সংগঠন হিজবুল্লাহ সেই বছর ৮ অক্টোবর থেকে রকেট হামলা শুরু করে। এসব হামলার জেরে সেখান থেকে ৬০ হাজার মানুষকে নিরাপদ অবস্থানে সরে যেতে হয়। ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেয় ইসরায়েল। এখনো তা বলবত আছে।
গাজার যুদ্ধ এখনো চলছে। ইসরায়েলের রিজার্ভ সেনাদের অনেকে গত দুই বছরের স্থল অভিযানের বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রেই কাটিয়েছেন।
যত দীর্ঘ ডিউটি, তত বড় সমস্যা
গতকাল রোববার ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (সিবিএস) প্রতিবেদনে জানা গেছে-রিজার্ভ সেনাদের স্ত্রীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ জানিয়েছেন যে, স্বামীর সামরিক বাহিনীর চাকরির কারণে দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। নারী সেনাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একইরকম।
প্রায় ৩০ শতাংশ স্বীকার করেছেন যে, পারিবারিক সম্পর্কের ফাটল এতটাই গভীরে পৌঁছেছে তারা আলাদা থাকার বা বিবাহ-বিচ্ছেদের বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিয়েছেন।
যেসব সেনা ৫০ দিন রিজার্ভ ডিউটিতে ছিলেন, তাদের ৩৬ শতাংশের স্ত্রী পারিবারিক সম্পর্কে ঝামেলার কথা উল্লেখ করেছেন। আবার ২০০ থেকে ৩৫০ দিন ধরে ডিউটিতে থাকা সেনাদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি বেড়ে হয়েছে ৫৭ শতাংশ।
শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব
প্রায় ৫২ শতাংশ স্ত্রী জানান যে, স্বামী রিজার্ভ ডিউটিতে যাওয়ার পর তারা তাদের ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের মধ্যে নেতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন।
অন্যদিকে, ২০০ থেকে ২৫০ দিন ডিউটিতে থাকা সেনাদের স্ত্রীদের ৬৩ শতাংশ সন্তানের মানসিক অবস্থায় নেতিবাচক পরিবর্তনের কথা বলেছেন।
নিতে হচ্ছে মানসিক চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা
রিজার্ভ ডিউটি থেকে স্বামী ফিরে আসার পর ৬১ শতাংশ স্ত্রীকে অন্যের সহায়তা নিতে হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানসিক চিকিৎসা নিয়েছেন আর ৩৮ শতাংশ আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেছেন।
সঙ্গী বা সঙ্গিনীর রিজার্ভ ডিউটি শেষ হওয়ার পর ৩৫ শতাংশ দম্পতি মনস্তাত্ত্বিক সেবা নিয়েছেন।
স্থলবাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা রিজার্ভ ডিউটি করেছেন, তাদের জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনীদের ৬৮ শতাংশ বেসরকারি উৎস থেকে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
মোটা দাগে বলা যায়, যত বেশিদিন ধরে সেনারা রিজার্ভ ডিউটিতে থাকছেন, ততই জটিল হয়ে পড়ছে তাদের দাম্পত্য জীবন।
আইডিএফের সহায়তার অঙ্গীকার
হিব্রু সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেটকে এক সামরিক মুখপাত্র জানান, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) রিজার্ভ সেনাদের এসব সমস্যার বিষয়টি নিয়ে অবগত আছে। তারা এর সমাধানে যথাযথ মানবসম্পদ ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করছে।
তিনি আরও বলেন, “আইডিএফ রিজার্ভ সেনা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মঙ্গলের জন্য নতুন নতুন সমাধান তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখবে।”