শনিবার ৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৯ আশ্বিন ১৪৩২
শনিবার ৪ অক্টোবর ২০২৫
 
রাজনীতি
ইসির চিঠির জবাব দেবে এনসিপি, তবে 'শাপলা' প্রতীকের দাবিতে অনড়





বিবিসি
Friday, 3 October, 2025
8:08 PM
 @palabadalnet

জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে জটিলতা চলছেই। ক্রমাগত তারা শাপলা ফুলের ব্যাপারে জোর দিয়ে আসছে, যদিও নির্বাচন কমিশন প্রতীক সংরক্ষণের যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে তাতে এই প্রতীক নেই।

এবার নির্বাচন কমিশন দলটিকে চিঠি দিয়েছে আগামী ৭ই অক্টোবরের মধ্যে তালিকাভুক্ত প্রতীক থেকে পছন্দ করে তা জানানোর জন্য। চিঠিতে বলা হয়েছে, দলটির প্রথম পছন্দ 'শাপলা' বর্তমানে নির্বাচন পরিচালনার বিধিমালার তালিকায় নেই, তাই এটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

৩০শে সেপ্টেম্বর চিঠিটি পাঠানো হয় এবং সেদিনই চিঠিটি পেয়েছে দলটি। তবে শাপলার ব্যাপারে তারা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন না বলে জানাচ্ছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও আইন সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মুসা।

এই চিঠিটা ইস্যু করার আগে তাদের আইনগতভাবে আরও কিছু ধাপ সম্পন্ন করার কথা ছিল যেটা তারা করেনি” এবং তাদের দেওয়া দুটি চিঠির বিষয়ে নিষ্পত্তি না করেই নির্বাচন কমিশন পরবর্তী ধাপে চলে গেছে বলে বলছেন মি. মুসা।

“সেই চিঠিগুলো অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে (চিঠিগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে) এই ধাপে আসার সুযোগ নেই” এবং চিঠিটি আইনানুগভাবে সঠিক হয়নি বলেও উল্লেখ করছেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন “একটা কৌশলি অবস্থান গ্রহণ করছেন যেটা অনাকাঙ্ক্ষিত, একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমরা স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা আশা করি, কিন্তু তারা আমাদের সাথে কৌশল করছেন বলে আমরা মনে করি” বলছেন এসসিপির আইন সম্পাদক।

নির্বাচন কমিশন তাদেরকে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে এনসিপির তিনটি চিঠির কথা বলা হয়েছে, ২২ জুন, তেসরা অগাস্ট এবং ২৪ শে সেপ্টেম্বর তারিখের। এর মাঝে ২২ জুন পাঠানো চিঠি অনুযায়ী নিবন্ধনের আবেদন প্রাথমিক পর্যালোচনায় গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ইসি জানায়, এনসিপির আবেদনপত্রে পছন্দের প্রতীকের ক্রম ছিল-শাপলা, কলম অথবা মোবাইল। তবে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৯(১) অনুযায়ী ‘শাপলা’ বর্তমানে বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত প্রতীকের তালিকায় নেই।

তবে এনসিপি থেকে বলা হচ্ছে যে, তেসরা অগাস্টের চিঠিতে আগের চিঠির সংশোধনী এনে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ ও ‘লাল শাপলা’ এই তিনটি ক্রম চাওয়া হয়েছিল।

এখন নির্বাচন কমিশনের চিঠির জবাব যে ৭ তারিখের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে, সেটি তারা দেবেন কিন্তু আগের অবস্থানই পুনঃর্ব্যক্ত করা হবে যে “আমরা শাপলার ব্যপারে অটল” জানান মুসা।

এটি পেতে আইনগত কোনো বাধার জায়গা দেখছে না দলটি এবং উল্লেখ করছেন এটি শুধুমাত্র একটি সিদ্ধান্তের বিষয়, “শাপলা যদি তারা বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে ও বরাদ্দ দিতে গড়িমসি করে তাহলে আমরা ধরে নেবো তারা কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজটি করছেন।”

তবে প্রথম চিঠিতে যে বাকি দুটি প্রতীক ‘কলম’ ও মোবাইলের কথা বলা হয়েছিল, সে দুটি ‘বরাদ্দযোগ্য’ তালিকায় রয়েছে এবং সেগুলো নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দলের ভেতরে বিকল্প নিয়ে আলোচনা উঠলেও সেগুলো নিয়ে এগোনো যায়নি এবং শাপলা ছাড়া তারা ভাবতে চাচ্ছেন না বলে জানানো হচ্ছে।

“সবাই কিন্তু শাপলাকে খুব ওয়েলকাম করেছে, শাপলাকে এনসিপির প্রতীক হিসেবে প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, মানুষের একটা আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়েছে। এটা থেকে সরে এলে আমাদের নেতা-কর্মী কারো জন্যেই এটা সুখকর ব্যপার না বা এটা সম্ভব না। আমরা দল থেকে আলোচনা উঠালেও আমাদের যারা সমর্থক রয়েছেন, শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন তারা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন,” বলছেন মুসা। ফলে তারা বিকল্প ভাবনায় যেতে চান না।

তাদের দেওয়া পরবর্তী চিঠিগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়েই প্রতীক পছন্দ করতে বলার বিষয়টিও আইনসম্মত নয় বলে বলছেন তারা।

বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক দল গত এক বছর ধরেই বেশ আলোচনায় থাকলেও নিবন্ধন সংক্রান্ত নানা জটিলতার মুখে পড়তে হয় তাদের। এখন নিবন্ধনের দিকে এগোলেও প্রতীক নিশ্চিত না করায় নিবন্ধন প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

জটিলতা কোথায়

মুসা আরও উল্লেখ করেন, এখন যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে এর মাঝে জাতীয় ফল কাঁঠাল বরাদ্দ রয়েছে যেটি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মার্কা, ফলে জাতীয় ফুল দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনানুগ বাধা নেই বলছেন তারা।

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হিসেবে শাপলার সাথে আছে ধানের শীষ ও পাটের কুড়ি পাতা রয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, “প্রজাতন্ত্রের জাতীয় প্রতীক হচ্ছে, উভয় পার্শ্বে ধান্যশীর্ষবেষ্টিত পানিতে ভাসমান জাতীয় পুষ্প শাপলা, তাহার শীর্ষদেশে পাটগাছের তিনটি পরস্পরসংযুক্ত পত্র, তাহার উভয় পার্শ্বে দুইটি করিয়া তারকা৷“

জুন মাসে এনিয়ে ব্যাখ্যায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ‘ফ্ল্যাগ অ্যান্ড এমব্লেম অর্ডার ১৯৭২ এ বলা আছে, আমাদের জাতীয় প্রতীক হবে শাপলা। এতে ধানের শীষ ও পাটের কুড়ি থাকলে, শাপলাটাই হচ্ছে মূল’।

যে কারণে সিনিয়র এই আইনজীবী মনে করেন, শাপলা কোনো একটি দলের প্রতীক হতে পারে না। এজন্য কোনো একটি দলকে শাপলা প্রতীক দেওয়া উচিত হবে না বলে মত দেন তিনি।

এছাড়া রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য নিবন্ধনের সময়ে বরাদ্দ কেটলি প্রতীক বদলে শাপলা বা দোয়েল পাখি বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছিল।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ‘শাপলা’ প্রতীক দেওয়া হলে মামলা না করার কথা জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। এই সিদ্ধান্তের কথা ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার। সেই পোস্ট এনসিপি নেতারা তাদের একাউন্টে শেয়ার করে স্বাগত জানিয়েছেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না তার পোস্টে নিচের পরিচয় দিয়ে লিখেছেন, “শাপলা প্রতীক যদি তাদের (এনসিপি) দিয়ে দেয়, কোন মামলা করব না।”

পোস্টের কমে্টে বক্সে তিনি বলেছেন, “আমাকে যদি জাতীয় প্রতীকের কারণে শাপলা না দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন আর কাউকে দিতে পারেন না। ওরা (এনসিপি) আমার কাছে এসেছিল। যারা জুলাই অভ্যুত্থান করেছে, তাদের বয়সের কারণে, অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ উৎখাতের কথা বিবেচনা করে আমি তাদের প্রতি দরদী। শাপলা প্রতীক যদি তাদের দিয়ে দেয়, আমি একটা অঙ্গীকার করতে পারি আমি কোনো মামলা করব না।”

জুন মাসে যখন প্রতীক চূড়ান্ত হয়নি তখন বিবিসিকে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ১১৫ টি খসড়া প্রতীক তালিকায় শাপলা যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি বরাদ্দযোগ্য তালিকায় ছিল না।

নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দযোগ্য প্রতীক

নির্বাচন কমিশনের বেশ কিছু কর্মকর্তার সাথে এনিয়ে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কারো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, দলটিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০চ (১) (খ)-এর নিয়ম সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। ওই নিয়ম অনুযায়ী এই আদেশ বা বিধিমালার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনো দলের মনোনীত সব প্রার্থীর জন্য নির্ধারিত প্রতীকগুলোর মধ্য থেকে পছন্দ করা একটি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। বরাদ্দকৃত প্রতীকটি সেই দলের জন্য সংরক্ষিত থাকবে, যদি না দলটি পরবর্তীতে তালিকার অন্য কোনো প্রতীক নিতে চায়।

এবং ২০০৮-এর বিধি ৯(১)-এর অন্তর্ভুক্ত এমন একটি প্রতীক নির্বাচন করে কমিশনকে ৭ই অক্টোবরের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ নিবন্ধনের পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য বরাদ্দ না হওয়া প্রতীকগুলোর মধ্যে থেকে দলটিকে প্রতীক বাছাই করতে হবে।

ইসি এনসিপিকে নির্বাচনী প্রতীক পছন্দের জন্য যে ৫০টি প্রতীকের তালিকা দিয়েছে, সেগুলো হলো- আলমিরা, উটপাখি, কলম, কলস, কাঁপ-পিরিচ, কম্পিউটার, কলা, খাট, ঘুড়ি, চার্জার লাইট, চিংড়ী, চশমা, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, তবলা, তরমুজ, থালা, দালান, দোলনা, প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলের টব, ফ্রিজ, বক, বালতি, বাঁশি, বেগুন, বেঞ্চ, বেলুন, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক, মোরগ, ময়ূর, মোড়া, মোবাইল ফোন, লাউ, লিচু, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, স্যুটকেস, হরিণ, হাঁস এবং হেলিকপ্টার ।


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com