শুক্রবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২ পৌষ ১৪৩২
শুক্রবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
 
বিনোদন
মারা গেছেন বিখ্যাত ফিলিস্তিনি পরিচালক-অভিনেতা মোহাম্মদ বাকরি





Friday, 26 December, 2025
12:26 AM
 @palabadalnet

ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি পরিচালক ও অভিনেতা মোহাম্মদ বাকরি। ফাইল ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি পরিচালক ও অভিনেতা মোহাম্মদ বাকরি। ফাইল ছবি: এএফপি

স্বনামধন্য ফিলিস্তিনি অভিনেতা ও পরিচালক মোহাম্মদ বাকরি (৭২) গত বুধবার মারা গেছেন। তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার তার পরিবারের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন।

গতকালই ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে নিজ জন্মস্থান আল-বাই'নেহ শহরে সমাধিস্থ হন তিনি।

তার ছেলে সালেহ নিজেও একজন অভিনেতা। তিনি তার ইনস্টাগ্রাম পেজের পোস্টে বলেন, “গভীর দুঃখের সঙ্গে আমার প্রাণপ্রিয় বাবা অভিনেতা মোহাম্মদ বাকরি'র মৃত্যু সংবাদ জানাচ্ছি।”

ইসরায়েলের নাগরিক হলেও তিনি নিজেকে ফিলিস্তিনি অভিনেতা-পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিতেন।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি সেখান থেকে সরে গেলেও জনগোষ্ঠীর একটি অংশ ইসরায়েলে থেকে যায়। ওই সম্প্রদায়কে 'ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিক' বা 'আরব ইসরায়েলি' বলেও অভিহিত করা হয়। বাকরি তাদেরই একজন। 

আশির দশকে অভিনয় জীবন শুরু করেন বাকরি। তিনি একইসঙ্গে আরবি ও হিব্রু ভাষায় ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি থিয়েটারে অভিনয় করেন। তার প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ছিল হান্না কে. এবং এর পরিচালক ছিলেন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী গ্রিক-ফরাসি পরিচালক কস্তা-গাভরাস।

এরপর তিনি অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেন। যার মধ্যে উরি বারব্যাশ পরিচালিত 'বিয়ন্ড দ্য ওয়ালস' (১৯৮৪) উল্লেখযোগ্য। ওই সিনেমায় ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী থাকা ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের সহাবস্থানের গল্প বলা হয়েছে। এটি ইসরায়েলে প্রশংসিত হয় এবং অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পায়।  

বাকরির মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের পর পরিচালক বারব্যাশ ওয়াইনেটকে বলেন, 'ইসরায়েলি সমাজে মোহাম্মদ বাকরির জীবন সহজ ছিল না।'

তিনি জানান, প্রয়াত অভিনেতাকে ‘অবিশ্বাস্য পর্যায়ের বয়কট, বিচ্ছিন্নতা ও একঘরে করে রাখার’ মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

বারব্যাশ আরও বলেন, “বাকরিকে আবেগের পারমানবিক চুল্লি আখ্যা দেওয়া যায়। তিনি তার আত্মিক শব্দগুলোর সঙ্গে আবেগঘন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে তিনি একাধারে একজন সৃজনশীল মানুষ ও অভিনেতা ছিলেন। তিনি তার কাজের সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে ছিলেন।”

পরিচালক হিসেবেও সফল ছিলেন বাকরি। ২০০২ সালে 'জেনিন, জেনিন' নামের একটি সিনেমা পরিচালনা করেন তিনি। ওই সিনেমায় অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দাদের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। তারা 'অপারেশন ডিফেনসিভ শিল্ড' চলাকালীন ইসরায়েলি সেনাদের নৃশংসতা ও গণহত্যার বয়ান দেন। 

সিনেমাটি ইসরায়েলে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং ইসরায়েলি ফিল্ম বোর্ড দ্রুত এর প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে। ২০২২ সালে বিচারকরা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি নাকচ করে রায় দেন।

ইসরায়েলি পরিচালক সিনাই পিটার ওয়াইনেট নিউজকে বলেন, “বাকরি ও তার সিনেমা জেনিন, জেনিন-এর বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা অব্যাহত থাকলেও পরিচালক নিজে তার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। তিনি নিজ জনগোষ্ঠীর অধিকার এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে অঙ্গীকারবদ্ধ থেকেছেন।”

অভিনেতা হিসেবে মোহাম্মদ বাকরি তার প্রতিটি কাজে নিজের ফিলিস্তিনি পরিচয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। 

অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লার আল-কাসাবা থিয়েটারে তিনি ‘বাকরি’স মনোলোগ' নামে একটি একক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। লেখক এমিল হাবিব-এর 'দ্য সিক্রেট লাইফ অব সাঈদ: দ্য পেসোপটিমিস্ট' নামের বইয়ের কাহিনী অবলম্বনে ওই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন তিনি।

ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জীবনযাপন নিয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বই।

এতে ফিলিস্তিনি যুবক সাঈদের ইসরায়েলি নাগরিক হয়ে ওঠার মর্মান্তিক ও বিদ্রুপাত্নক কাহিনীর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com