শুক্রবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২ পৌষ ১৪৩২
শুক্রবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
 
বিদেশ
‘দ্য লাস্ট লেটার’: ডেনমার্কে বন্ধ হচ্ছে ৪০০ বছরের চিঠি বিলির সংস্কৃতি





Friday, 26 December, 2025
12:29 AM
 @palabadalnet

ডেনিশ লাল ডাকবাক্স। ছবি: সংগৃহীত

ডেনিশ লাল ডাকবাক্স। ছবি: সংগৃহীত

ডেনমার্কের ডাকবিভাগ আগামী ৩০ ডিসেম্বর যখন শেষ চিঠিটি পৌঁছে দেবে, তখন এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের অবসান ঘটবে। দেশটিতে চার শতাব্দীর বেশি সময় ধরে চলে আসা চিঠি বিতরণ ব্যবস্থা বন্ধের মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক প্রচলনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ২০০৯ সালে সুইডেন ও ডেনমার্কের ডাকবিভাগ এক হয়ে গঠিত পোস্টনর্ড চলতি বছরের শুরুতে চিঠি বিতরণ বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায়। তারা আরও জানায়, ডেনমার্কে দেড় হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হবে এবং দেড় হাজার লাল ডাকবাক্স সরানো হবে। দেশটিতে ‘বাড়ন্ত ডিজিটালাইজেশন’ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডেনমার্ককে ‘বিশ্বের অন্যতম ডিজিটালাইজড দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, চিঠির চাহিদা ‘তীব্র হারে কমেছে’। আর এদিকে অনলাইন শপিংও বাড়ন্ত। তারা মূলত এখন পার্সেল বিতরণের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এরইমধ্যে অপসারিত ডাকবাক্সগুলো চলতি মাসে বিক্রি শুরু হয়েছে। মাত্র তিন ঘণ্টায় এক হাজার ডাকবাক্স বিক্রি হয়ে যায়। মোটামুটি ভালো অবস্থায় থাকা বাক্সগুলো দুই হাজার ড্যানিশ ক্রোনারে বিক্রি হয়। আর কিছুটা পুরোনোগুলো বিক্রি হয় দেড় হাজার ক্রোনারে।

জানুয়ারিতে আরও ২০০ ডাকবাক্স নিলামে তোলা হবে। পোস্টনর্ড অবশ্য সুইডেনে চিঠি বিতরণ চালিয়ে যাবে। তারা আরও জানিয়েছে, অব্যবহৃত ড্যানিশ স্ট্যাম্পের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

তবে ডেনমার্কের মানুষ এখনো চিঠি পাঠাতে পারবে। এজন্য তাদের ডেলিভারি কোম্পানি ডাওয়ের দ্বারস্থ হতে হবে। ডাও আগে থেকেই ডেনমার্কে চিঠি বিতরণ করে আসছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কোম্পানিটি তাদের সেবা সম্প্রসারণ করবে।

গ্রাহকদের এখন চিঠি পোস্ট করার জন্য ডাওয়ের দোকানে যেতে হবে। আর বাড়ি থেকে পাঠাতে অতিরিক্ত খরচ দিতে হবে। ডাকের খরচ অনলাইন বা অ্যাপের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

ডেনমার্কের ডাক ব্যবস্থা দেশজুড়ে চিঠি বিতরণের দায়িত্ব পালন করে আসছে ১৬২৪ সাল থেকে। গত ২৫ বছরে ডেনমার্কে চিঠি পাঠানোর হার দ্রুত কমেছে। এই কমার হার ৯০ শতাংশেরও বেশি।

তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণদের মধ্যে চিঠি লেখার আগ্রহ আবার বাড়ছে।

ডাও জানিয়েছে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী তরুণরা অন্যদের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি চিঠি পাঠাচ্ছে। ট্রেন্ড গবেষক ম্যাডস আরলিয়েন-সোবর্গের মতে, তরুণরা ‘ডিজিটাল অতিরিক্ততার বিপরীতে ভারসাম্য খুঁজছে’। অনেকে ইচ্ছে করেই চিঠি লিখছে।

ডেনমার্কের আইন অনুযায়ী, চিঠি পাঠানোর সুযোগ অবশ্যই রাখতে হবে। যদি ডাও চিঠি পাঠানো বন্ধ করে, এই কাজের জন্য সরকার বাধ্যতামূলকভাবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেবে।

পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র বলেছে, নতুন বছরে চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো বড় পরিবর্তন হবে না। মানুষ এখনো চিঠি পাঠাতে এবং পেতে পারবে, শুধু কোম্পানি বদলে যাবে। তারা বলছে, এই পরিবর্তন কেবল 'আবেগের' কারণে গুরুত্বপূর্ণ।

কিছু মানুষ বলছেন, এটা আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। কোপেনহেগেনের এনিগমা ডাক ও যোগাযোগ জাদুঘরের পরিচালক ম্যাগনাস রেস্টফটে বলেন, “যদি ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবহার আর সম্ভব না হয়, কাগজের চিঠির দিকে ফিরে যাওয়া কঠিন হবে। আগের অবস্থায় আর ফিরে যাওয়া যাবে না। তাছাড়া, মনে রাখতে হবে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে ডিজিটাল দেশগুলোর একটি।”

ডেনমার্কের মিটআইডি সিস্টেমের আওতায় সব সরকারি বার্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিজিটাল পোস্টের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কেউ চাইলে কাগজের চিঠিও নিতে পারে। কিন্তু খুব কম মানুষ তা করে। ডেনমার্কে বর্তমানে ১৫ বা তারও বেশি বয়সী ৯৭ শতাংশ মানুষ মিটআইডি ব্যবহার করছে। 
 
রেস্টফটে বলেন, “ডেনমার্কের মানুষ ডাক ব্যবস্থার পরিবর্তনকে সহজভাবে মেনে নিয়েছে, কারণ এখন খুব কম মানুষ লেটারবক্সে কাগজের চিঠি পায়। কিছু তরুণ তো কখনো চিঠি পাঠায়ইনি।”

কাগজের চিঠি কমে যাওয়ায় অবশ্য তাদের মূল্য বেড়েছে। রেস্টফটে বলেন, “মজার বিষয় হলো, কাগজের চিঠি পাওয়া মানে এর মূল্য অনেক বেশি। মানুষ জানে, হাতে লেখা চিঠি পাঠালে সময় ও টাকা উভয়ই ব্যয় হয়।”

এই বছরের শুরুতে পোস্টনর্ড ডেনমার্কের ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ কিম পেডারসেন বলেন, 'আমরা ৪০০ বছর ধরে ডেনমার্কের ডাক ব্যবস্থা চালাচ্ছি, তাই এটি বন্ধ করা কঠিন। ডেনমার্কের মানুষ ক্রমেই ডিজিটাল ব্যবস্থায় চলে গেছে, এখন খুব কম চিঠি পাঠানো হয় এবং চিঠির বাজার আর লাভজনক নয়।'

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com