সোমবার ২০ অক্টোবর ২০২৫ ৪ কার্তিক ১৪৩২
সোমবার ২০ অক্টোবর ২০২৫
 
বিদেশ
মুসলিমদের শত্রু অভিন্ন: খামেনি





বিবিসি
Friday, 4 October, 2024
11:31 PM
 @palabadalnet

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, মুসলিমদের শত্রু অভিন্ন এবং ইসরাইলে চালানো ইরানের হামলা ছিল 'ন্যূনতম শাস্তি'। প্রায় পাঁচ বছর পর জুমার নামাজের ইমামতি এবং খুতবায় দাঁড়িয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

শুক্রবার তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে জুমার নামাজে অংশ নেন তিনি।

এটি ২০২০ সালের পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রথম কোনো জনসমাগমে দেওয়া ভাষণ।

এতে তিনি বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের ঐক্যের ওপর জোর দেন। ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের নীতির ওপর ভিত্তি করে এই ঐক্য গড়ার কথা বলেন তিনি।

আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, লেবানন এবং অন্যান্য মুসলিম দেশ আর ইরানের শত্রু একই।

পদাধিকারবলে খামেনিই তেহরানের জুমার নামাজের খতিব। তবে, সাধারণত অধস্তনদের দিয়েই পালাক্রমে খুতবার দায়িত্ব পালন করান তিনি।

বিশেষ দু'একটি ঘটনার সময়ই শুধু তাকে খতিবের দায়িত্বে আসীন হতে দেখা গেছে।

যেমন ২০২০ সালে জেনারেল কাসেম সোলেইমানির মৃত্যুর পর তিনি খুতবা দিতে এসেছিলেন। বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন সোলেইমানি। তখন সোলেইমানির মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছিল ইরান। এরও আগে তিনি খুতবায় দাঁড়িয়েছিলেন ২০১২ সালে।

সে হিসেবে এবারেরটি গত এক যুগে তার তৃতীয় খুতবা। খামেনি তার বক্তব্যে, মঙ্গলবার ইসরাইলে চালানো হামলার প্রশংসা করেন। ওই হামলাকে পুরোপুরি ‘বৈধ’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ইসরাইলের ‘বিস্ময়কর সব অপরাধের’ বিরুদ্ধে ইরান যা করেছে সেটিকে ‘ন্যূনতম শাস্তি’ হিসেবেই দেখছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।

তিনি শুধু ধর্মীয় নেতাই নন, ক্ষমতা কাঠামোতেও তার অবস্থান সর্বোচ্চ। যে কারণে, খামেনির বক্তব্যই ইরানের নীতি সম্পর্কে ধারণা দেয়।

ভাষণে দুইবার তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রশ্নে ইরান কোনো দ্বিধা বা বিলম্ব করবে না।

ইসরাইলকে 'রক্তচোষা' এবং 'পাগলা কুকুর' বলেও আখ্যা দেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

তিনি বলেন, তার দেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে 'দৃঢ় ও শক্তিশালী' পদক্ষেপ নিতে যা করা প্রয়োজন তাই করবে।

ভাষণের প্রথম অংশ ফারসিতে বলেন খামেনি।

এরপর একটি অংশে লেবানিজ এবং ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে আরবিতে কথা বলেন তিনি।

খামেনির ভাষণ শুনতে এবং তার ইমামতিতে নামাজ পড়তে আগে থেকেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল মসজিদ এবং আশেপাশের এলাকা।

আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় নিহতহিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ্ স্মরণে শোকসমাবেশের মধ্য দিয়ে।

খামেনি তার বক্তব্যে নাসরুল্লাহর প্রশংসা করেন।

ওই অঞ্চল এবং পুরো মুসলিম বিশ্বকে 'গুরুত্বপূর্ণ সেবা' দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে হামাস এবংহিজবুল্লাহর প্রতি সমর্থন ফুটে ওঠে তার কণ্ঠে।

মধ্যপ্রাচ্যের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরান।

ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সামরিক ও সাংগঠনিক সহায়তা পেয়েই বিকাশ ঘটেছেহিজবুল্লাহর। তারা ইরানের একটি প্রতিরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করে থাকে।

নিজেদেরকে প্রায়ই 'অ্যাক্সিস অফ রেসিস্ট্যান্স' (প্রতিরোধকারী পক্ষ) হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে হামাস ওহিজবুল্লাহ। বিভিন্ন সময় ইসরাইলে হামলা চালিয়ে আসছে তারা ।

ইরান-ঘনিষ্ঠ সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো ইসরাইলে সঙ্গে লড়াই থেকে পিছু হটবে না বলেও জানান মি. খামেনি।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে খামেনি বলেন, ইসরাইল মঙ্গলবারের হামলার জবাব দেয়া চেষ্টা করলে আবারো প্রতিশোধ নেবে ইরান।

“যদি ভবিষ্যতেও তেমন করার প্রয়োজন হয়, আমরা আবারও তাই-ই করবো,” বলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর পর দেয়া এক বিবৃতিতে ওই হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

তারপরই ইসরাইলে প্রায় দুইশো মিসাইল ছোঁড়ে ইরান।

হেজবুল্লাহ নেতা নাসরুল্লাহ নিহত হবার পর আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।

রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, বৈরুতে হামলায় নাসরুল্লাহ নিহত হবার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল খামেনিকে।

প্রকাশ্যে হাজির হওয়ার মধ্য দিয়ে আত্মগোপনে থাকার খবরকে নাকচ করার একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টাও করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরাইলে হামাসের হামলার এক বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে সাতই অক্টোবর। ওই হামলায় প্রায় ১২০০ জন মারা যান।

এর পর হামাসকে নির্মূল করতে উঠে পড়ে লাগে ইসরাইল। গাজায় তাদের অভিযানে মারা যান ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। যাদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু।

বর্তমানে পরিস্থিতি একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপ নিয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে খামেনির ভাষণকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে।

এদিকে, আরব বিশ্বের সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো ইসরাইলি হামলায়হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর হত্যার প্রকাশ্য নিন্দা না করলেও, তারা লেবাননের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কথা বলেছে।

এই সংঘর্ষের বিষয়ে কোনো কোনো আরব দেশ যেমন নীরব থেকেছে, কেউ কেউ আবার লেবানন-ইসরাইলের সীমান্তে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

পালাবদল/এসএ
 


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com