শনিবার ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ২ কার্তিক ১৪৩২
শনিবার ১৮ অক্টোবর ২০২৫
 
রাজনীতি
এনসিপি-ইন্টেরিম মুখোমুখি : সনদ স্বাক্ষরের ভেন্যু আহত জুলাই যোদ্ধার নামে দখল





নিজস্ব প্রতিবেদক
Friday, 17 October, 2025
12:53 PM
 @palabadalnet

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জুলাই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী (ইন্টেরিম) সরকার ও জুলাই অন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের রাজনৈতিক সংগঠন- জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।

শুক্রবার বিকাল ৪টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সমঝোতায় আসা রাজনৈতিক দলগুলোর জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পূর্বঘোষিত রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি রয়েছে। সনদ স্বাক্ষরের আগেই আইনি ভিত্তির দাবিতে এনসিপি গত মধ্যরাতে হঠাৎ করেই স্বাক্ষর না করার ও অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন।

এদিকে ‘জুলাই শহীদের পরিবার ও আহত’ ব্যক্তিরা দাবি আদায়ে অনড় রয়েছেন । তারা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নিয়েছেন।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অতিথিদের জন্য সাজিয়ে রাখা চেয়ারে ‘জুলাই শহীদের পরিবার ও আহত’ ব্যক্তিরা অবস্থান নিয়ে বসে আছেন। অনুষ্ঠানমঞ্চ ও অতিথিদের জন্য রাখা এই চেয়ারের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।

বিকেল চারটায় এখানে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। কয়েকটি দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত’ ব্যক্তিরা।

বিক্ষোভকারীরা সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রবেশের ফটক টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে তারা দক্ষিণ প্লাজায় মঞ্চের সামনে চলে যান। তাদের বাধা দেওয়া চেষ্টা করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে বিক্ষোভকারীরা অতিথিদের চেয়ারে বসে পড়েন। বেলা সোয়া ১১টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা অবস্থান করছিলেন।

অন্যদিকে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের ঐতিহাসিক আয়োজন জাঁকজমকভাবে করতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কিন্তু আইনি ভালো ভিত্তির সংবিধান আদেশ আগে না হওয়ায় অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া এবং সনদে সই না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপি।

জানা গেছে, জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ দল ইতোমধ্যে নিশ্চয়তা দিয়েছে। তবে এনসিপিসহ কয়েকটি দল সনদে সই করবে না বলে জানিয়েছে। আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার কথা গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে জানায় এনসিপি।

এরপর থেকে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের দলটির সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগদান ও সনদে সই করানোর জন্য সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে নানা তৎপরতা চালানো হয়। এনসিপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ- এমন ব্যক্তিদের মাধ্যমে দূতিয়ালিও করা, দলটির নেতাদের সঙ্গে সরকারের একাধিক উপদেষ্টার পাশাপাশি ড. ইউনূসও কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকেও একাধিকবার এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বসা হয় বলে সূত্র জানায়। দীর্ঘ আলোচনার পরেও কেন এনসিপির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলো না সরকার এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক তৈরি হয়েছে।

সূত্রমতে, সরকার ও কমিশনের পক্ষ থেকে নানা যুক্তি দিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলামসহ এনসিপি নেতাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং সনদে এনসিপির সই করার অনুরোধ করা হয়।

কিন্তু মধ্যরাতে এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তারা অংশগ্রহণ করবে না। দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াঁজো প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, যেহেতু এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আইনি ভিত্তি অর্জন হবে না। এটা কেবল আনুষ্ঠানিকতা। আমরা বহুবার আইনি ভিত্তির কথা বলেছি। তাই আইনি ভিত্তির পূর্বে এই ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ মত আরেকটি একপাক্ষিক দলিলে রুপান্তর হবে।

তিনি আরও জানান, ঐকমত্য কমিশন যেহেতু সময় বৃদ্ধি করেছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে আমাদের অবস্থান তুলে ধরবো। দাবি পূরণ হলে পরবর্তীতে স্বাক্ষর করবে এনসিপি।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন জানান, তারা মনে করে, এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোনো আইনি ভিত্তি অর্জিত হবে না; এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এনসিপি বহুবার স্পষ্টভাবে আইনি ভিত্তির প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে। আইনি ভিত্তি নিশ্চিত হওয়ার পূর্বে এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এর মতো আরেকটি একপাক্ষিক দলিলে পরিণত হবে।

তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশন যেহেতু সময় বৃদ্ধি করেছে, এনসিপি কমিশনের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে। দাবি পূরণ হলে, পরবর্তীতে এনসিপি স্বাক্ষর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে।

সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পরবর্তীতে কিছু জানানো হয়নি। তবে গতকাল সন্ধ্যায় কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন। অনুষ্ঠানে কেউ স্বাক্ষর করতে না পারলে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুক্রবার সব দলের স্বাক্ষর নিতে পারলে ভালো। তবে যদি কোনো দল পরে স্বাক্ষরের কথা বলে, তারা তো সনদ প্রক্রিয়ার অংশীদার। শরিক হিসেবে তারা সেটা করতে পারবে। তবে কমিশন আশা করে, সবাই একসঙ্গে বসে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাক্ষর করবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর জুলাই সনদের যে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, শুক্রবারের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর সেটির আর সংশোধনের সুযোগ থাকবে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আলী রীয়াজ।

মধরাতে কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরী এক বার্তায় জানান, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির শীর্ষ নেতাদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম-এর কাছে এই আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করা হয়।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com