
সংগৃহীত ছবি
ঢাকা: ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
দফাটিতে আগে ছিল, “গণঅভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।”
সংশোধিত দফায় বলা হয়েছে, “গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব বাংলাদেশে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান কালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারকে এবং জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর, আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান যেমন মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।”
আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সংশোধনের কথা জানানো হয়।
দফাটি নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন নিজেদের ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা। তারা গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভ করেন। আজ সকালে তারা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নেন। দুপুরের দিকে অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে থেকে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। সেখানে অবস্থানকারীদের লাঠিপেটা করতে দেখা যায় পুলিশকে। পরে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ, বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এই ঘটনায় ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ কয়েকজন আহত হন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
বিক্ষোভ চলার মধ্যে দফাটি সংশোধন করা উচিত বলে আজ বেলা ১১টা ৮ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে মত দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
সালাহউদ্দিন আহমদ তার পোস্টে লিখেন, দফাটি সংশোধিত হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। কারণ, ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এ আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও তাদের অনুগত কতিপয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিরীহ-নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হানাদার বাহিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে, নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। তবে জনগণের প্রতিরোধের মুখে হানাদার বাহিনীর কিছু লোকও প্রাণ হারায় (তারা গাদ্দার, বিশ্বাসঘাতক)। জনতার আদালতে তাদের বিচার হয়ে গেছে। সুতরাং, যৌক্তিক কারণে তাদের বিচার গন-অভ্যুত্থানের যুদ্ধের ময়দানে সম্পন্ন হয়ে গেছে। তাই দফাটি নিম্নলিখিতভাবে সংশোধন করা উচিত: গণঅভ্যুত্থানপূর্ব বাংলাদেশে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান কালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী কতিপয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের দ্বারা সংঘঠিত সকল হত্যাকান্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবার, আহত বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান যেমন মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।
ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই বীর যোদ্ধাদের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধন করা হয়েছে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, জুলাই বীর যোদ্ধাদের সঙ্গে গতকালের আলোচনাসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফার পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জুলাই বীর যোদ্ধাদের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় জরুরি সংশোধন করা হয়েছে।
আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আন্দোলনরত জুলাই বীর যোদ্ধাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ। এ সময় কমিশনের সদস্যদের মধ্যে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া ও ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আলী রীয়াজ অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফার সংশোধিত ভাষ্যটি পাঠ করেন।
কমিশনের সহসভাপতি জানান, কমিশন এই অঙ্গীকারনামা বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারকে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের কোনো মতপার্থক্য নেই।
পালাবদল/এসএ