শনিবার ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ২ কার্তিক ১৪৩২
শনিবার ১৮ অক্টোবর ২০২৫
 
বিদেশ
সন্তান গ্রহণে কেন আগ্রহী নন দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা





বিবিসি
Wednesday, 28 February, 2024
1:50 PM
 @palabadalnet

দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা নানা কারণে সন্তান জন্ম দিতে চান না। ছবি: সিএনএন

দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা নানা কারণে সন্তান জন্ম দিতে চান না। ছবি: সিএনএন

বৃষ্টিস্নাত কোনো এক মঙ্গলবার ইয়েজিন তার অ্যাপার্টমেন্টে বন্ধুদের জন্য দুপুরের খাবার তৈরি করছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের উপকণ্ঠে এ বাড়িতে একাই থাকেন ‘সুখি’ মানুষটি।

বন্ধুরা মিলে যখন খাওয়া–দাওয়া শুরু করেন, তখন তাদের একজন কার্টুন ডায়নোসরের একটি সুপরিচিত মিম মুঠোফোনে বের করে দেখান। সেখানে ডায়নোসরটি বলছিল, “সাবধান। আমাদের মতো তোমরা নিজেদের বিলুপ্ত করে ফেল না।”

মিমটি দেখে হেসে দিলেন উপস্থিত সব নারীরা।

বিশ্বে সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। এ পতন চলছেই। এ ক্ষেত্রে বছরের পর বছর নিজের রেকর্ড পেছনে ফেলছে দেশটি। জন্মহারের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ দেশটির জনসংখ্যা আনুমানিক অর্ধেকে নেমে আসবে।

ইয়েজিন ৩০ বছর বয়সী একজন টেলিভিশন প্রযোজক। মিমটির বিষয়ে তিনি বলছিলেন, “এটি মজার, কিন্তু অন্ধকারও। কেননা, আমরা জানি, আমরা নিজেরাই নিজেদের বিলুপ্তির কারণ হয়ে উঠতে পারি।”   

ইয়েজিন বা তার বন্ধুদের কারও সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা নেই। দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব নারী সন্তানবিহীন জীবন বেছে নিচ্ছেন, ইয়েজিন ও তার বন্ধুরা ক্রমবর্ধমান সেই সমাজের অংশ।

বিশ্বে সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। এ পতন চলছেই। এ ক্ষেত্রে বছরের পর বছর নিজের রেকর্ড পেছনে ফেলছে দেশটি।  

গত বুধবার প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় গত বছর জন্মহার আরও ৮ শতাংশ কমে শূন্য দশমিক ৭২ এ দাঁড়িয়েছে।

একজন নারী তার জীবনে কত সংখ্যক সন্তান নিতে চান, জন্মহার সেই বিষয়টি নির্দেশ করে। কোনো দেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে এ হার ২ দশমিক ১ হওয়া উচিৎ।

দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মহারের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ দেশটির জনসংখ্যা আনুমানিক অর্ধেকে নেমে আসবে।

‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’

বিশ্বজুড়ে উন্নত দেশগুলোতে জন্মহারের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে কোনো দেশের অবস্থা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো নয়। দেশটির ভবিষ্যৎ অনুমিত পরিস্থিতি ভয়ানক।

আগামী ৫০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে, সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য জনগোষ্ঠী ৫৮ শতাংশ সংকুচিত হবে এবং জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষের বয়স হবে ৬৫ বছরের বেশি।

এটি দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি, পেনশনগ্রহীতা ও দেশের নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই খারাপ পূর্বাভাস দেয় যে, রাজনীতিবিদেরা এ অবস্থাকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ বলে ঘোষণা করেছেন।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেসব দম্পতির সন্তান রয়েছে, তাদের মাসে মাসে ভর্তুকি মূল্যে আবাসন ও বিনা মূল্যে ট্যাক্সিতে যাতায়াতের সুবিধা থেকে শুরু করে নগদ অর্থ পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে। শুধু বিবাহিতদের জন্য হলেও দেওয়া হয় হাসপাতালের বিল পরিশোধসহ অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধা।

কিন্তু এমন আর্থিক সুবিধা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে জন্মহার বৃদ্ধিতে কাজে আসছে না। এ অবস্থায়  রাজনীতিবিদেরা ‘জরুরি অবস্থা’ মোকাবিলায় আরও ‘সৃজনশীল’ সমাধানের পথ খুঁজছেন। যেমন: দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে নার্সদের ধার করা, তাদের ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম অর্থ পরিশোধ করা এবং ৩০ বছর বয়সের আগে তিন সন্তানের বাবা হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া।  

কোরিয়ায় মনের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। যে গৃহস্থালির কাজ করবে ও সমানভাবে সন্তানের যত্নও নেবে।

সমস্যা সমাধানে নীতি নির্ধারকেরা এত সব পথ খুঁজলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা তরুণ জনগোষ্ঠী বিশেষত নারীদের চাহিদার বিষয়ে শুনছেন না। তাই গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া ঘুরে বিবিসির সাংবাদিক নারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সন্তান গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের কারণ জানার চেষ্টা করেছেন।

ইয়েজিন তার বয়স যখন কুড়ির কোঠায় তখনই একা থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সামাজিক রীতিনীতি উপেক্ষা করা শুরু করেন। সেখানে একা থাকার বিষয়টিকে কারও জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ের একটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

এরপর, পাঁচ বছর আগে ইয়েজিন বিয়ে না করার ও সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘কোরিয়ায় মনের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। যে গৃহস্থালির কাজ করবে ও সমানভাবে সন্তানের যত্নও নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর যে নারীদের শুধু সন্তানই আছে (উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত নন) তাদের প্রতি সদয় আচরণ করা হয় না।’

‘কাজের বিরতিহীন চক্রে বাঁধা জীবন’

বিয়ে, সন্তানগ্রহণ-এসবের চেয়ে টেলিভিশন চ্যানেলে পেশাজীবন গড়াতেই মনোযোগ দিয়েছেন ইয়েজিন। তার যুক্তি, চাকরি করতে গিয়ে তার হাতে এমন সময় নেই যে, তিনি সন্তান নেবেন বা সন্তান লালন-পালনের কাজ করবেন।

ইয়েজিন তার অফিসে ৯টা-৬টা কাজ করেন। তবে বলেন, সাধারণত রাত ৮টার আগে বের হতে পারেন না। এর বাইরে আছে অতিরিক্ত সময়ের কাজ। যখন বাড়িতে ফেরেন, তখন ঘরদোর পরিষ্কার ও ঘুমানোর আগে কিছু শরীরচর্চা করার সময় পান।

“আমি আমার কাজকে পছন্দ করি। এটি আমাকে দারুণ পূর্ণতা এনে দেয়। তবে কোরিয়ায় কাজ করাটা কঠিন। আপনি কাজের এক বিরতিহীন চক্রে বাঁধা পড়বেন”, বলেন ইয়েজিন।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com