
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা: বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা গভীর উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ আইরিন খান।
তিনি বলেছেন, এসব ঘটনার দ্রুত, কার্যকর ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিলম্ব না করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের এক প্রভাবশালী যুবনেতা শরিফ ওসমান হাদি দিনদুপুরে সশস্ত্র হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে যে গণবিক্ষোভ শুরু হয়, তার মধ্যেই দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর কার্যালয় এবং ছায়ানট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একই সময়ে নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদকের ওপরও হামলা হয়।
আইরিন খান বলেন, “একজন অনুপ্রেরণাদায়ী নেতার পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। সেইসঙ্গে তার মৃত্যুর ঘোষণার পর স্বাধীন সাংবাদিক ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত সংঘবদ্ধ সহিংসতারও তীব্র নিন্দা জানাই।”
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে জনরোষকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা সবসময়ই বিপজ্জনক, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। এতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘু কণ্ঠস্বর ও ভিন্নমতের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে-যা গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর পরিণতি ডেকে আনবে।
জাতিসংঘের এই বিশেষ প্রতিবেদক বলেন, “এই সংঘবদ্ধ হামলাগুলো হঠাৎ করে ঘটেনি। দায়মুক্তির সংস্কৃতি দূর করতে এবং গণমাধ্যম ও শিল্পের স্বাধীনতা রক্ষা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার ফলেই এসব ঘটনা ঘটেছে।”
তিনি বলেন, “গত এক বছরে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা-বিশেষ করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উভয় পক্ষের মাধ্যমেই অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কয়েক শ সাংবাদিককে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সন্দেহজনক’ হত্যা, সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে দীর্ঘ সময় ধরে ইচ্ছামতো আটক রাখা হয়েছে।
এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার আগের মতোই দায়মুক্তির ধারা অনুসরণ করেছে। ফলে হামলা ও হুমকিকে কার্যত স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছে। সেইসঙ্গে অপরাধীরাও জবাবদিহিতার বাইরে থেকে গেছে।
আইরিন খান বলেন, “যখন ঘৃণামূলক বক্তব্য ও মানহানিমূলক প্রচারণা গণমাধ্যম, সম্পাদক, সাংবাদিক, শিল্পী ও নাগরিক সমাজের নেতাদের নিরাপত্তা ও সুনামকে হুমকির মুখে ফেলে, আর সরকার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয় না তখন-তা সহিংসতায় রূপ নিতে বেশি সময় লাগে না।”
তিনি সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, হাদীর হত্যাকাণ্ড এবং গণমাধ্যমের ওপর হামলার ঘটনাগুলো দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে তদন্ত করে পূর্ণ আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
নির্বাচন সামনে রেখে সাংবাদিকসহ নাগরিক সমাজের সদস্যদের সুরক্ষায় কার্যকর প্রতিরোধ ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণের আহ্বানও জানান তিনি।
আইরিন খান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চাইলে তাকে অবশ্যই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের নেতা, রাজনৈতিক প্রার্থী, নারী ও সংখ্যালঘুরা প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই যেন তাদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন-তা নিশ্চিত করতে হবে।”
পালাবদল/এসএ