মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ৯ পৌষ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
 
বিদেশ
নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয়: মার্কিন মানসে পরিবর্তনের হাওয়া?





পালাবদল ডেস্ক
Thursday, 6 November, 2025
8:36 AM
 @palabadalnet

 নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর স্ত্রী সিরীয়-মার্কিন শিল্পী রামা দুয়াজিকে সঙ্গে নিয়ে ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানির উল্লাস। ছবি: এএফপি

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর স্ত্রী সিরীয়-মার্কিন শিল্পী রামা দুয়াজিকে সঙ্গে নিয়ে ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানির উল্লাস। ছবি: এএফপি

মাত্র এক বছর আগের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিউইয়র্ক শহরের প্রতিটি অঞ্চলে (বোরো) ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোট বেড়েছিল। কিন্তু, বছর ঘুরতেই সেই শহরের বাসিন্দারা যেন তার কথা কানেই তুললেন না। ট্রাম্প আহ্বান জানিয়েছিলেন জোহরান মামদানিকে ভোট না দেওয়ার জন্য, কিন্তু ভোটাররা তা শোনেননি। ট্রাম্প হুমকি দিলেন-জোহরান মামদানি বিজয়ী হলে তিনি নিউইয়র্কের জন্য সরকারি বরাদ্দ বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু, তাও আমলে নিলেন না ভোটাররা। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় মার্কিন মনজগতে পরিবর্তন এসেছে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের হিসাবে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রায় ৬৫ শতাংশ বাসিন্দা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতি অনুগত। তবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট নেতাদের অনেকে ধনকুবের রিপাবলিকানদের হাতে বাঁধা।

নিউইয়র্ক মহানগরীর নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি ঐতিহাসিক বিজয়ের পর বললেন, ‘জনতার এই রায় পরিবর্তনের জন্য’ এবং এটি “নিউইয়র্ক নগরীকে বাসযোগ্য করে তোলার রায়“।

তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তা হলো-“বন্ধুরা আমরা রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র উৎখাত করেছি।”

জোহরানের দ্বিতীয় বাণীটি ছিল মূলত তার প্রধান নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে উদ্দেশ্য করে বলা। নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর বাবা মারিও কুয়োমোও একসময় এই অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ছিলেন এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তার ওপর ভর করে তিনবার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ায় অ্যান্ড্রু কুয়োমো নিউইয়র্কবাসীর কাছে পরিচিত মুখ ছিলেন। কিন্তু যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে তাকে গভর্নরের পদ ছাড়তে হয়। এরপর তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হতে চেয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনও।

কিন্তু, নিজ দলের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন অ্যান্ড্রু কুয়োমো। প্রার্থী বাছাই পর্বে হেরে যান তরুণ ও অপেক্ষাকৃত অপরিচিত মুখ জোহরান মামদানির কাছে। তারপরেও হাল ছাড়েননি কুয়োমো। ভেবেছিলেন, ধনকুবেরদের টাকায় ভোটের সমীকরণ বদলে দেবেন। কিন্তু, বাস্তবে তা হলো না।

এবার আসা যাক জোহরান মামদানির প্রথম কথায়। অর্থাৎ, ‘জনতার এই রায় পরিবর্তনের জন্য’।

ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইলন মাস্ক বা মাইক ব্লুমবার্গের মতো যারা মনে করেন অর্থ দিয়ে সবকিছু জয় করা যায়, জোহরান মামদানির বিজয় তাদের সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে। অ্যান্ড্রু কুয়োমোর নির্বাচনী প্রচারণায় মার্কিন ধনকুবেররা দুহাতে টাকা ঢাললেও জোহরানের নির্বাচনী খরচ জুগিয়েছেন সাধারণ মানুষ। শুধু নিউইয়র্ক নয়, বিশ্ববাসী দেখল-সাধারণ মানুষের অর্থ ও পরিশ্রমে, সাধারণ মানুষের ভোটে একজন সাধারণ মানুষই নির্বাচিত হলেন।

এ কথা বলা যায় কি-অর্থের বাহাদুরি দেখানো মার্কিন মুলুকের বাসিন্দাদের পুরোনো মনোভাব পাল্টে যাচ্ছে?

মার্কিন টেলিভিশনগুলোয় প্রচারিত তরুণ ও সাধারণ নাগরিকদের বক্তব্যে বোঝা গেল, তারা এখন দুর্নীতিবাজ-অর্থলোভী ও পুরোনো ধ্যানধারণায় আটকে থাকা রাজনীতিকদের নেতা হিসেবে মানতে নারাজ।

তারা এমন নেতা চান যিনি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন, গৃহহীনদের মাথার ছাদ নিশ্চিত করবেন এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও সাশ্রয়ী মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করবেন। তারা চান তাদের করের অর্থ দেশের বাইরে সামরিক আধিপত্য বিস্তারে খরচ না হোক।

মাত্র এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ যখন রেকর্ড সংখ্যক ভোট দিয়ে রিপাবলিকান ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচিত করলেন তাদের অনেককে সম্প্রতি দেশজুড়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘রাজা চাই না’ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মার্কিন তরুণদের মোহ ভঙ্গ হয়েছে। তারা ধনকুবের নেতাদের পেছনে ছোটাকে মরীচিকার পেছনে ছোটা বলে মনে করছেন। গত এক বছরে তারা অন্তত এটুকু বুঝতে পেরেছেন যে ধনীরা শুধু নিজেদের ভাগ্যের উন্নতির কথাই ভাবেন। তারা সাধারণ মানুষের মঙ্গলের কথা ভাবেন না।

প্রভাবশালী মার্কিন রাজনীতিক বার্নি স্যান্ডার্স মনে করেন-তরুণ প্রজন্ম বুঝতে পারছে যে মার্কিন শাসন ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং এটি কেবল ধনীদের স্বার্থ রক্ষা করে। সাধারণ মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। এই ব্যবস্থায় ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন। স্বল্প আয়ের মানুষদের ভাগ্য-উন্নয়নের কথা ভাবা হচ্ছে না। অর্থ ও ক্ষমতালোভী নেতাদের কথায় সাধারণ মানুষ বারবার প্রতারিত হচ্ছেন। তারা এখন পরিবর্তন চান।

সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্যান্ডার্স বলেন, “জোহরান মামদানি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের ধনী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তরুণরা এমন নেতা চান যিনি বলবেন, তোমার ঘর নেই, সরকার ঘর দেবে; তোমার চিকিৎসার সামর্থ্য নেই, রাষ্ট্র সেই ব্যবস্থা করবে। জোহরান সেই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন।”

এখন দেখার বিষয়, নিউইয়র্কের ভোটারদের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বাকি অংশের মানুষও জোহরান মামদানির মতো নেতাদের গ্রহণ করেন কি না, যারা নিজ এলাকার মানুষের কল্যাণকে সবার ওপরে স্থান দেন।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com