সোমবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ৮ পৌষ ১৪৩২
সোমবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
 
রাজনীতি
এই অপশক্তিকে রুখে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: মির্জা ফখরুল





নিজস্ব প্রতিবেদক
Monday, 22 December, 2025
8:25 PM
Update: 22.12.2025
8:26:21 PM
 @palabadalnet

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয়ের ওপর হামলাকে গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে অভিহিত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, “এখন রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। কেবল মানববন্ধন বা সংহতি প্রকাশ নয়, এই অপশক্তিকে রুখে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

দেশের শীর্ষ দুই গণমাধ্যমের কার্যালয়ে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর সংঘবদ্ধ হামলার প্রতিবাদে এই সভার আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “আজকে যে বাংলাদেশ দেখছি, এই বাংলাদেশের স্বপ্ন আমি কোনো দিন দেখিনি। এটা অত্যন্ত পরিষ্কার, আজ ডেইলি স্টার বা প্রথম আলো নয়, আঘাত এসেছে গণতন্ত্রের ওপর। আমার স্বাধীনভাবে চিন্তা করার যে অধিকার, কথা বলার যে অধিকার, তার ওপর আঘাত এসেছে।”

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জুলাই যুদ্ধ ছিল এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আজ সেই জায়গায় আঘাত করা হচ্ছে। তাই কোনো রাজনৈতিক চিন্তা, দল বা সংগঠন নয়; গণতান্ত্রিকভাবে মানুষের এখন এক হওয়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, “আমরা যারা অন্ধকার থেকে আলোতে আসতে চাই, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই, তাদের আজ শুধু সচেতন থাকলে চলবে না, রুখে দাঁড়াতে হবে। এখন সর্বশক্তি নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসে গেছে।”

সভায় দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমাদের ২৬-২৭ জন সহকর্মী ছাদে আটকে পড়েছিলেন। অথচ ফায়ার ব্রিগেডকে আসতে দেওয়া হয়নি। তারা শধু ভবন পুড়িয়ে দিতে আসেনি, তারা সাংবাদিকদের হত্যা করতে চেয়েছিল। মতপ্রকাশ তো অনেক পরের বিষয়, এখন বিষয়টি বেঁচে থাকার অধিকারের প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে।”

হামলার সময় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে নিন্দা জানান নারী নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরীন হক।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোর কেন্দ্রস্থলে মবতন্ত্র শুরু হয়েছে, যা সচিবালয়ের অভ্যন্তরে বিকশিত হয়েছে।” যারা এখন ক্ষমতায় আছে তারা মবতন্ত্রের পেছনের শক্তিকে তাদের ক্ষমতাকাঠামোর স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করছে বলে মন্তব্য করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। একে প্রতিহত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

হামলার সময় সরকারের রহস্যজনক নীরবতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন—জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনী আসলে কী করছে?

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তার পরবর্তী সময়ে যে বাংলাদেশের প্রত্যাশা করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি সেদিকে যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও স্লোগান ব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমে হামলা চালানো কোনো সাধারণ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি একটি পরিকল্পিত অপরাধ।

বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, “ফ্যাসিবাদী শক্তি জুলাই অভ্যুত্থানকে ছোট করতে ‘মব ভায়োলেন্স’ বা ‘মবোক্রেসি’ শব্দগুলো ব্যবহার করত বলে আগে আমি এর সঙ্গে একমত ছিলাম না। কিন্তু বর্তমানে যা ঘটছে, তাকে মব ভায়োলেন্স বলা যায় না; এটি সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিত অপরাধ। এর উদ্দেশ্য দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করা।”

তিনি অভিযোগ করেন, শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালিয়েছে।

হামলার রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারায় নিজের অসহায়ত্বের কথা জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নামে মিডিয়ার ওপর আক্রমণ বা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। যারা এর পক্ষে সম্মতি তৈরি করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষা-সংস্কৃতি সবকিছুর ওপর আঘাত এসেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “ছায়ানট কেন ভাঙচুর হলো? ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কেন আক্রমণ আসছে?“ গত বছর সচিবালয় ঘেরাওয়ের সময় সরকার শক্ত হাতে দমন না করায় পরিস্থিতি এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি হামলার ঘটনাকে “পরিকল্পিত“ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্লোগান ব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমে হামলা চরম দুর্ভাগ্যজনক। সরকারের এই নীরবতা তাদের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

সভাপতির বক্তব্যে নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে আগুন দেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিচার ও সংবাদমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।

এ কে আজাদ জানান, আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সাংবাদিকদের নিয়ে একটি মহাসম্মেলন করা হবে এবং সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

পালাবদল/এমএম


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com