সোমবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৭ আশ্বিন ১৪৩২
সোমবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
 
রাজনীতি
টিউলিপ বাংলাদেশের করদাতাও ছিলেন





প্রথম আলো
Sunday, 21 September, 2025
12:07 PM
 @palabadalnet

শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক। ফাইল ছবি

শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক। ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিকের কেবল বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্টই ছিল না, তিনি এ দেশের একজন নিয়মিত করদাতাও ছিলেন।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, তিনি অন্তত এক দশক ধরে বাংলাদেশে নিয়মিত আয়কর বিবরণী জমা দিয়েছেন। তাতে তিনি আয়ের খাত হিসেবে ‘ব্যবসা/পেশার আয়’ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কী ব্যবসা বা পেশা, সেটার উল্লেখ নেই। কেবল একটি অর্থবছরে মাছের ব্যবসার কথা উল্লেখ রয়েছে।

টিউলিপের নামে ঢাকার গুলশানে একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে। কিন্তু আয়কর নথিতে ওই ফ্ল্যাটের কথা তিনি উল্লেখ করেননি। প্রায় দুই যুগ আগে তার নামে নিবন্ধিত ওই ফ্ল্যাট একটি আবাসন কোম্পানি থেকে টিউলিপ ‘অবৈধ সুবিধা’ হিসেবে নিয়েছেন, এমন অভিযোগে গত এপ্রিলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে।

টিউলিপ বাংলাদেশি নাগরিক নন, কেবলই ব্রিটিশ—তিনি অনেক দিন ধরে এমন দাবি করে আসছেন। প্রথম আলো ও যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য টাইমস গত বৃহস্পতিবার টিউলিপের বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্ট থাকার সত্যতার বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে টিউলিপ-কেন্দ্রিক আলোচনা নতুন করে শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নিয়মিত আয়কর দেওয়া, নিজ নামে ফ্ল্যাট নিবন্ধন করাসহ নাগরিকত্বসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রমাণের বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বক্তব্য জানতে চেয়ে যুক্তরাজ্যে তার আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউডের কাছে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গত ৩১ আগস্ট ই-মেইল করা হয়। এরপর দুই দফা তাগাদা দিয়ে ই-মেইল করা হয়। কিন্তু কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

তবে বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্ট থাকা প্রশ্নে যুক্তরাজ্যের দ্য টাইমসকে টিউলিপের পক্ষ থেকে তার একজন মুখপাত্র বক্তব্য দিয়েছেন। তাতে তিনি বাংলাদেশে এনআইডি ও পাসপোর্ট থাকার কথা স্বীকার করেননি। টিউলিপের দাবি, প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ টিউলিপের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুৎসা রটাচ্ছে।

প্রথম আলো স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান করে টিউলিপের এনআইডি ও পাসপোর্টের সত্যতার পাশাপাশি তার আয়করবিষয়ক বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে। এ-সংক্রান্ত নথিপত্রে দেখা যায়, টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) নিয়মিত আয়কর বিবরণী জমা দিয়েছেন। বছর বছর করও দিয়েছেন তিনি।

দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতির মামলার তদন্তের সময় টিউলিপের আয়কর নথি জব্দ করেছে দুদক। জব্দ নথির মধ্যে ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত হিসাব বিবরণী রয়েছে।

এরপরের অর্থবছরগুলোতে টিউলিপ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগে হিসাব বিবরণী দিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া জানা যায়নি।
এনবিআর সূত্র জানায়, আয়কর বিবরণী দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে, এমন কোনো ব্যক্তি সেটা জমা না দিলে সাধারণত তাকে নোটিশ পাঠানো হয়। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে অনিবাসী করদাতাদের এখানে আয় না থাকলে এবং জমি, ফ্ল্যাট বা গাড়ি না থাকলে তাদের জন্য আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে না। টিউলিপের আয়কর বিবরণীতে কোনো জমি, ফ্ল্যাট বা গাড়ি থাকার কথা উল্লেখ নেই।

ব্যবসা/পেশার আয়

টিউলিপ তার আয়কর বিবরণীতে ঢাকার দুটি ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। একটি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ৬৭৭ নম্বর বাড়ি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি)। অপরটি গুলশানের ৪ নম্বর রোডের একটি ফ্ল্যাট (এটা তার বাবা শফিক সিদ্দিকের)।

টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর বিভাগে ২০০৫-০৬ অর্থবছরের যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে তিনি ব্যবসা/পেশা থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। আসবাব ছিল ১০ হাজার টাকার। ওই অর্থবছরে তিনি বাংলাদেশ সরকারকে আয়কর দিয়েছেন ৪ হাজার ২০০ টাকা। জমা দেওয়া হিসাব বিবরণী অনুযায়ী, ২০০৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত টিউলিপের হাতে নগদ ও ব্যাংক হিসাবে তার জমা ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা।

এরপরের অর্থবছর (২০০৬-০৭) ব্যবসা/পেশার আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ব্যাংকের জমা টাকার ওপর সুদ পেয়েছেন ২৫ হাজার ১১৬ টাকা। হাতে নগদ ও ব্যাংকে জমা ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬১৬ টাকা। ১০ ভরি সোনার গয়নার কথা উল্লেখ করেছেন, যা দাদার কাছ থেকে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করেন, যার দাম লিখেছেন ১ লাখ টাকা।

টিউলিপ ২০১২-১৩ অর্থবছরের আয়কর বিবরণীতে মাছের ব্যবসা থেকে ৯ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। সেই মাছের ব্যবসা কোথায়, সেটা আর জানা যায়নি। এর বাইরে ব্যবসা/পেশা থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক সুদ বাবদ ১ লাখ ১৭ হাজার ১৬১ টাকা আয় করেছেন। ওই অর্থবছরে মোট আয় উল্লেখ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৬১ টাকা। আর কর দিয়েছেন ৪৮ হাজার ৭০৬ টাকা।

২০১২-১৩ অর্থবছরের পর মাছের ব্যবসার কথা আর উল্লেখ করেননি টিউলিপ। এরপর টিউলিপ সবচেয়ে বেশি আয় দেখিয়েছেন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। এই সময়ে তিনি মোট আয় দেখিয়েছেন ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮০ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা/পেশা থেকে আয় ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বাকি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যাংকের সুদ বাবদ আয়। আয়কর দিয়েছেন ৪২ হাজার ৬৩৭ টাকা। এই হিসাব আয়কর বিভাগে জমা দিয়েছেন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে।

নাগরিকত্বের প্রমাণ আদালতকে দেবে দুদক

টিউলিপ সিদ্দিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুদক। ইতিমধ্যে কয়েকটি মামলা হয়েছে, যাতে মা ও খালার সঙ্গে টিউলিপও আসামি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে তার খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর প্রভাব বিস্তার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে মা, বোন ও ভাইকে প্লট পাইয়ে দেন।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রুজু হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। একটি মামলা তদন্তাধীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবেই টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা প্রমাণের জন্য টিউলিপের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পাসপোর্ট ও আয়করের নথি আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক ওই দেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’-এর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে গত ১৪ জানুয়ারি ওই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।

বাংলাদেশের মামলা ও বিচার বিষয়ে গত ১২ আগস্ট ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এক খবরে বলা হয়েছে, টিউলিপ এই বিচারকে ‘হয়রানি ও প্রহসন’ আখ্যায়িত করছেন।

টিউলিপের গুলশানের ফ্ল্যাট নিয়ে প্রশ্ন

টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের ৭১ নম্বর রোডে ২৪৩৬ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাটের মালিক। ‘ইস্টার্ন হারমনি’ নামে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের তৈরি আবাসিক ভবনের এই ফ্ল্যাটটির (ফ্ল্যাট নং-বি/২০১) মালিক টিউলিপ কীভাবে হলেন।

এ বিষয়ে জানতে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তারা টিউলিপের ফ্ল্যাট থাকার কথা স্বীকার করলেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানাননি। তাদের ভাষ্য, টিউলিপের ফ্ল্যাটসংক্রান্ত সব নথি দুদক জব্দ করে নিয়ে গেছে। তাই তারা সুনির্দিষ্টভাবে সব তথ্য দিতে পারছেন না।

তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এই ইস্টার্ন হাউজিংয়ের প্রকল্পটির জমি হস্তান্তরবিষয়ক জটিলতার কারণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ফ্ল্যাট বিক্রয়ের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছিল না। টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার প্রথম দফা প্রধানমন্ত্রিত্বের শেষ দিকে (১৯৯৬-২০০১) ওই অনুমতি পাওয়া যায়। এর বিনিময়ে ইস্টার্ন হাউজিং এই ফ্ল্যাট টিউলিপকে দেয়।

দুদকের করা মামলায় বলা হয়, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের জব্দ করা নথিপত্রে দেখা যায়, ওই ফ্ল্যাট নিজ নামে রেজিস্ট্রি (নিবন্ধন) করার আগেই টিউলিপ ২০০১ সালের ১৯ মে ফ্ল্যাটটি দখলে নেন। ২০০২ সালের ৩০ অক্টোবর গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিসে টিউলিপের নামে দলিল (দলিল নং-১৪০৭১) রেজিস্ট্রি করা হয়। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবেই এই দলিল সম্পাদিত হয়।

ইস্টার্ন হাউজিংয়ের এ-সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করেছে দুদক। এসব নথিপত্র অনুযায়ী, (২৪ বছর আগে) এই ফ্ল্যাটের মূল্য ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ৯২০ টাকা। এর মধ্যে গ্যারেজের (গাড়ি রাখার জায়গা) মূল্য ৬ লাখ টাকা। টিউলিপ কেবল গ্যারেজের দামের ৬ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা পরিশোধ করে ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ও দখল বুঝে নেন।

আবাসন প্রতিষ্ঠানের নথিতে এ রকম উল্লেখ থাকলেও দুদক সূত্র বলছে, তাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, টিউলিপ তার খালা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে ইস্টার্ন হাউজিংকে রাজউকের অনুমতি আদায় করে দেন। এর বিনিময়ে বিনা মূল্যে ফ্ল্যাটটি নিয়েছেন। গত এপ্রিলে এ বিষয়ে মামলার পর আদালতের নির্দেশে টিউলিপের এই ফ্ল্যাট জব্দ করে দুদক।

দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক গুলশানের ফ্ল্যাটটি আবাসন প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঘুষ হিসেবে নিয়েছিলেন। পরে সেটা তিনি ছোট বোনের নামে দেখাতে একটি হেবা দলিল তৈরি করেন।

প্রথম আলোর হাতে আসা নথিপত্রে দেখা যায়, গুলশানের ফ্ল্যাটটি ২০১৫ সালের ৯ জুন নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বোন আজমিনা সিদ্দিককে হেবা (দান) করেন টিউলিপ। এর এক মাস আগে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে টিউলিপ প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।

তবে দুদকের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, এই হেবাসংক্রান্ত নোটারি নথি জাল। ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিকানা গোপন রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে ওই ভুয়া নোটারি করা হয়েছিল।

গত ১৪ মার্চ যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এক খবরে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই অভিযোগগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এই বিষয়গুলো নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি এবং তিনি এই দাবিগুলো পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।

অবশ্য এর আগে লন্ডনেও বিধিবহির্ভূতভাবে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টিউলিপ ফ্ল্যাট নেন বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদনে উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিককে ফ্ল্যাটটি দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তবে ওই ফ্ল্যাটের বিনিময়ে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি তাকে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ ওই ব্যবসায়ীর। বিনা মূল্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্রে। (ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, ৩ জানুয়ারি ২০২৫)

আয়কর দিতে বাধ্য কিনা

বাংলাদেশের ২০২৩ সালের আয়কর আইন অনুসারে করদাতাদের দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। নিবাসী করদাতা ও অনিবাসী করদাতা। বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এমন প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি নাগরিকেরা অনিবাসী করদাতা। অনিবাসীদের বাংলাদেশে কোনো আয় থাকলে তাকে আয়কর বিবরণী (রিটার্ন) জমা দিতে হয় এবং করযোগ্য আয় থাকলে কর দিতে হয়। অনিবাসী করদাতার বাংলাদেশে স্থায়ী স্থাপনা থাকলেও রিটার্ন দিতে হয়।

একজন অনিবাসী করদাতা সাধারণত বাংলাদেশে চাকরি ও ব্যবসা করে আয় করতে পারেন। চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগদাতার মাধ্যমে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। ব্যবসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরসহ (আরজেএসসি) সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হয়।

টিউলিপের ক্ষেত্রে এমন কোনো অনুমতির কথা সরকারি কোনো সূত্র থেকে জানা যায়নি। তিনি নিজেও এমন দাবি করেননি।

তদন্ত এড়াতে অসত্য বলছেন

রাজউকের প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলায় গত ১৩ এপ্রিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং শেখ রেহানার তিন সন্তান টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে তখন টিউলিপের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউড এক বিবৃতিতে বলেছে, দুদক তাকে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি’ করছে। পরবর্তী সময়ে টিউলিপের আইনজীবী এ নিয়ে দুদককে চিঠিও পাঠান।

এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গত ২৪ জুন গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘টিউলিপ আমাদের কাছে একজন বাংলাদেশি নাগরিক। তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও টিআইএন নম্বর রয়েছে। তাই বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের আয়কর নথি, টিআইএন ও ব্যাংকে টাকা লেনদেনের নথি যদি সঠিক হয়, তাতে পরিষ্কার হয় তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি তদন্ত এড়াতে ও আইনের মুখোমুখি না হতে অসত্য বলছেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিউলিপ ব্রিটিশ নাগরিক, মন্ত্রী ছিলেন, এখনো এমপি রয়েছেন। এটা ব্রিটিশ সরকারের জন্য বিব্রতকর। ব্রিটিশ সরকার যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, তাহলে টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com