বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা’ নিশ্চিতের লক্ষ্যে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে সাত হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে পদচ্যুত বা বহিষ্কার করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের অন্যতম দায়িত্ব হলো দেশের প্রতিটি ভোটারের আস্থা নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে, আজকের ও আগামী দিনের তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ছুটে যাচ্ছে তৃণমূল থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে; গ্রাম থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও মজবুত করছে। এই সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।”
এর আগে সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমত গঠন, বিরোধী দলের সমালোচনার জবাব ও সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করবে বিএনপি।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান।
ইতোমধ্যে সাত হাজারের বেশি দলীয় সদস্যের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান লিখেছেন, “দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অসদাচরণের দায়ে কেউ পদচ্যুত হয়েছেন; আবার অনেকেই বহিষ্কৃত হয়েছেন। বহুমুখী অপপ্রচারের মাঝেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না, তবে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এগুলো ছিল অপরিহার্য। শৃঙ্খলা কোনো দুর্বলতা নয়; বরং সেটিই আমাদের শক্তি।”
তিনি বলেন, “নিজেদের সদস্যদের দায়বদ্ধ করার মাধ্যমেই আবারও প্রমাণ হলো যে, বিএনপি সততার ব্যাপারে আন্তরিক এবং আমরা ক্ষমতাসীনদের কাছে যেসব মানদণ্ড দাবি করি, নিজেদেরও ঠিক সেই একই মানদণ্ডে দাঁড় করাই। এইভাবেই আমরা জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করতে চাই—বিশেষত তরুণদের, যারা রাজনীতিকে কেবলমাত্র ক্ষমতার খেলা হিসেবে দেখতে চায় না; বরং দেখতে চায় সবার অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা একটি মহৎ ক্ষেত্র হিসেবে।”
বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা অন্তর্ভুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আরও বেশি নারী, তরুণ নেতা ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছি, যাতে জাতি আরও এগিয়ে যায় এবং রাজনীতি মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকে। আমরা চাই, বিএনপির পরিচয় হোক, সেবা, ন্যায়বিচার ও দক্ষতার প্রতীক হিসেবে; বিভাজন কিংবা সুবিধাভোগের প্রতীক নয়।”
বাংলাদেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো আলাদা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেছেন, “নিজ ঐতিহ্যকে ধারণ করে, বিএনপি প্রাধান্য দিচ্ছে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ, ভবিষ্যতমুখী ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথযাত্রাকে। আমরা জানি, তরুণরা চায় বাস্তব সুযোগ, তারা ফাঁকা বুলি চায় না। জনগণ চায় স্থিতিশীলতা, তারা বিশৃঙ্খলা চায় না। আর বিশ্ব চায়, বাংলাদেশ হোক একটি বিশ্বাসযোগ্য ও সম্মানিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই প্রত্যাশাগুলো পূরণে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
সহকর্মী ও রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকি এবং জনগণের সেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি। আমি যেমন আপনাদের প্রত্যেকের ওপর আস্থা রাখি, আপনারাও তেমনি আমার ওপর আস্থা রাখুন। তাহলেই গণতন্ত্রের পথ হবে আরও উজ্জ্বল।”