জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জাতীয় সমন্বয় সভায় বক্তব্য দেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগের শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারেছবি: এনসিপির সৌজন্যে
ঢাকা: জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দলের আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, “আমরা নিম্নকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) চাই না, আমরা শুধু উচ্চকক্ষে পিআর চাই। এ ছাড়া আমরা মনে করি, এখনো সম্পূর্ণভাবে ঐকমত্য কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করে রাজপথে যাওয়ার সময় আসেনি।”
রাজধানীর শাহবাগের শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আজ শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাতীয় সমন্বয় সভা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই সভা শেষে সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তেই কোনো বড় দলের সঙ্গে জোটভিত্তিক চিন্তাভাবনা আমরা করছি না; বরং এনসিপি তার স্বতন্ত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এগোবে।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, যেসব ইস্যুতে আন্দোলনগুলো হচ্ছে, সেই ইস্যুগুলো সামগ্রিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। সমাধান করতে পারত গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধানের দাবি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণপরিষদ ছাড়া আর কোনো বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না, যেটা সবাই গ্রহণ করছে। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করছে এনসিপি।
এনসিপির এই নেতা বলেন, “আমরা ধরে নিচ্ছি, গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের একসঙ্গে নিতে হবে।”
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতে ৭টি দল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। দলগুলো হলো জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও খেলাফত আন্দোলন।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ঝটিকা মিছিল বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে প্রশ্ন করা হয়। তখন তিনি বলেন, সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতর থেকে আশকারা পাচ্ছে বলেই আওয়ামী লীগ এসব তৎপরতার সুযোগ পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সব দল ও শক্তির ঐক্য প্রয়োজন। যদি কোনো দল সে ক্ষেত্রে আপসও করে, এনসিপি আপস করবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার শুরু করা উচিত।
জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন,“জি এম কাদেরসহ জাতীয় পার্টি অবশ্যই ফ্যাসিবাদের দোসর। তাদের বিচার ও গ্রেপ্তারের আওতায় আনা উচিত।”
সমন্বয় সভায় তিন বার্তা
এর আগে এনসিপির দিনব্যাপী এনসিপির জাতীয় সমন্বয় সভায় দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা এবং জেলা, মহানগর ও উপজেলা-থানা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারীরা অংশ নেন।
সমন্বয় সভায় এনসিপির আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কেও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অবহিত করা হয়। অক্টোবরের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দলের আহ্বায়ক কমিটি করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এখন এনসিপির যে সমন্বয় কমিটিগুলো আছে, সেগুলো আহ্বায়ক কমিটিতে রূপান্তরিত হবে।
সমন্বয় সভার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, মোটাদাগে তিনটি বার্তা দেওয়া হয়েছে সভায়। প্রথমত, গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একসঙ্গে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়া। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদের দোসর ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তৃতীয়ত, এক মাসের মধ্যে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত এনসিপির সাংগঠনিক বিস্তার ঘটানো।
নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ যাতে দেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে তৈরি হয়, সে বিষয়ে সমন্বয় সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু ‘দালাল গণমাধ্যমে’ এনসিপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচারের বিষয়ে নেতা–কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলেনে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।