বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২ মাঘ ১৪৩১
বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
 
বিনোদন
এফডিসিতে অঞ্জনাকে সতীর্থদের শেষ শ্রদ্ধা





নিজস্ব প্রতিবেদক
Saturday, 4 January, 2025
4:40 PM
 @palabadalnet

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সত্তর ও আশির দশকের ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জনাকে চিরবিদায় জানাতে ভিড় করেছেন পরিচালক, নির্মাতা, অভিনেতা ও শিল্পী কলাকুশলীরা। চলচ্চিত্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন-বিএফডিসির ভেতরে আনা হলো অঞ্জনাকে।

পাঁচ দশক আগে যেখানে কিশোরী অঞ্জনা রহমান দাঁড়িয়েছিলেন লাইট, ক্যামেরার সামনে। সেখানেই এলেন শেষবারের মত কফিনবন্দি হয়ে। শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে অভিনেত্রীর মরদেহবাহী গাড়িটি প্রবেশ করে বিএফডিসিতে।

সেখানে অঞ্জনাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পরিচালক ছটকু আহমেদ, নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য ও অভিনেতা সনি রহমানসহ চলচ্চিত্র ও অভিনয় জগতের অনেকে।

মায়ের বিদায় ক্ষণে ছেলে নিশাত রহমান মনি জানান, বাদ জোহর এফডিসিতে জানাজা শেষে অভিনেত্রীর মরদেহ তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে দ্বিতীয়বার জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে শায়িত হবেন অঞ্জনা।

মায়ের অসুস্থতা নিয়ে মনি বলেন, আম্মু সুস্থ ছিল, জ্বর আসত আবার চলে যেত। ১৫ দিন আগে বাসায় মেহমান এসেছিল সবাইকে নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছে। তারপরই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। সাধারণ জ্বর ভেবে ওষুধ খাচ্ছিল, হাসপাতালে যেতে চাইত না। অসুস্থতা বাড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত চারদিন আগেও আইসক্রিম খেতে চেয়েছিল।

কান্নায় ভেঙে পড়ে মনি বলেন, আমার সারা জীবনের আফসোস থাকবে। আমি কখনো বুঝতেই পারিনি আম্মুর ভেতরে এমন অসুস্থতা ছিল। এমন সুস্থ একজন মানুষের ভিতরে এতটা অসুখ কীভাবে বাসা বাঁধল।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ১টা ২০ মিনিটে অঞ্জনা রহমান মারা যান।

অভিনেত্রীকে বুধবার রাত থেকে হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেই অঞ্জনা চলে যান না ফেরার দেশে।

এফডিসিতে অঞ্জনাকে শ্রদ্ধা জানান অভিনেত্রী পলি আক্তার, রোমানা ইসলাম মুক্তি, জয় চৌধুরী, নৃত্য পরিচালক ইউসুফ খান, শ্রাবণ সাহা প্রমুখ।

নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী বলেন, মিষ্টি হাসি আর কাজ অঞ্জনা আপাকে সবার মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে।

অভিনেত্রীর ছেলে মনি জানান, বাড়িতে জ্বর হওয়ার পর বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে অঞ্জনাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে রক্তের সংক্রমণ ধরা পড়লে ওই হাসপাতালেই তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে কিছুটা উন্নতি হলে সিসিইউতে আনা হয়। সেখানে নয় দিন চিকিৎসার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বুধবার রাতে বিএসএমএমইউ ভর্তি করা হয় অঞ্জনাকে। রক্তের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া, ফুসফুসে পানি আসা, ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া, এর মধ্যেই স্ট্রোক হওয়াসহ নানা জটিলতা তৈরি হয় অভিনেত্রীর। এক পর্যয়ে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়।

ঢাকায় এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে অঞ্জনার জন্ম। ছোটবেলা থেকে নাচের প্রতি তার আগ্রহের কারণে বাবা-মা তাকে নাচ শিখতে ভারতে পাঠান। সেখানে তিনি ওস্তাদ বাবুরাজ হীরালালের কাছে নাচের তালিম নেন, শেখেন কত্থক।

সিনেমায় আসার আগেই অঞ্জনা পরিচিতি পান নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি ঢাকাই সিনেমায় কাজ শুরু করলেও তার মুক্তি পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র ছিল শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’।

নায়ক সোহেল রানার বিপরীতে ওই সিনেমার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি অঞ্জনাকে। নিজের সেরা সময়ে ঢাকাই সিনেমার প্রথম সারির প্রায় সব নায়কের বিপরীতেই অভিনয় করেছেন তিনি।

নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে ৩০টি সিনেমায়, যার মধ্যে রয়েছে অশিক্ষিত, রজনীগন্ধা, আশার আলো, জিঞ্জির, আনারকলি, বিধাতা, বৌরানী, সোনার হরিণ, মানা, রামরহিমজন, সানাই, সোহাগ, মাটির পুতুল, সাহেব বিবি গোলাম ও অভিযান।

এছাড়া ভারতের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী, পাকিস্তানের অভিনেতা ফয়সাল, নাদিম, জাভেদ শেখ, ইসমাইল শাহ, নেপালের শীবশ্রেষ্ঠ ও ভুবন কেসির সঙ্গেও অভিনয় করেছেন এই নায়িকা।

চার দশকের ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন অঞ্জনা। ‘গাংচিল’ সিনেমার জন্য ১৯৮২ সালে এবং ‘পরিণীতা’ সিনেমার জন্য ১৯৮৬ সালে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পাশাপাশি তিনবার বাচসাস এবং নৃত্যে দুবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

১৯৯২ সালের পর থেকে সিনেমায় অনিয়মিত হয়ে যান অঞ্জনা। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় তার সর্বশেষ সিনেমা ‘ভুল’।

অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে গেলেও তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘অঞ্জনা ফিল্মস’ থেকে প্রাণ সজনি, বন্ধু যখন শত্রু, চালু সরদার প্রমুখ সিনেমা মুক্তি পায়।

পর্দায় সক্রিয় না হলেও চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিয়মিতই যাতায়াত ছিল তার। সর্বশেষ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2024
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : [email protected]