
পুতিনকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা দেন মোদি। ছবি: এএফপি
বহুল আলোচিত দুই দিনের সফরে ভারত গেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সশরীরে উপস্থিত হয়ে তার 'বন্ধু' পুতিনকে বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছেন।
আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
এই সফরের মূল লক্ষ্য দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা।
উড়োজাহাজ থেকে নেমে আসার পর রুশ নেতাকে জড়িয়ে ধরেন মোদি। এরপর দুইজন একই গাড়িতে উঠে পড়েন।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটাই পুতিনের প্রথম ভারত সফর। এই সফরে তার সঙ্গী হয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোউসভ।
ধারণা করা হচ্ছে যুদ্ধবিমান ও আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে।
ইন্ডিয়া টুডেকে কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন জানান, তিনি ‘তার প্রিয় বন্ধু’ মোদির সঙ্গে দেখা করতে পেরে 'খুবই আনন্দিত'।
পুতিন জানান, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা অনেক বিস্তৃত”।
রুশ নেতা জাহাজ ও উড়োজাহাজ নির্মাণ, পরমাণু শক্তি ও মহাকাশ অভিযানের কথা উল্লেখ করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানান, “আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভারতে স্বাগত জানাতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।”
এক্সে দেওয়া পোস্টে মোদি বলেন, “আজ সন্ধ্যায় ও আগামীকাল আমাদের আলোচনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।”
ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দু জানায়, সফরের প্রথম আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় মোদি লোক কল্যাণ মার্গে তার রাষ্ট্রীয় বাসভবনে পুতিনের সঙ্গে নৈশভোজ করেন।
আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে পুতিনকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এরপর তিনি রাজঘাটে যেয়ে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
হায়দ্রাবাদ হাউসে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা বেজে ৫০ মিনিটে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলন শুরু হবে। সম্মেলন শেষে দুই নেতা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হবে।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত সফর করেন পুতিন। সেবারের সফর সংক্ষিপ্ত ছিল। পুতিন গণমাধ্যমের সামনে উপস্থিত হননি।
মোদি বলেন, “ভারত-রাশিয়া বন্ধুত্ব দীর্ঘদিন ধরে টিকে আছে এবং এটা দুই দেশের জনগণের বিশেষ উপকারে এসেছে।”
এমন সময় পুতিন ভারতে এলেন, যখন রুশ তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পুতিনের এই সফরে বড় ভূমিকা রাখবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানির কৌশলগত দিকগুলো ঠিক রাখার পাশাপাশি শুল্ক আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তুষ্ট রাখার 'শাঁখের করাত' মানিয়ে চলাই এখন মোদির জন্য সবচেয়ে বড় ঝামেলা।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ার অত্যাধুনিক এস-৪০০ আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ বড় ভূমিকা রাখবে।
ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কো ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অত্যাধুনিক এসইউ-৫৭ যুদ্ধবিমান নির্মাণের প্রস্তাব দিতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া তাদের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছে ভারত।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০০৯-১৩ সালের ৭৬ শতাংশ থেকে রুশ অস্ত্র আমদানির পরিমাণ কমে ২০১৯-২৩ সালে ৩৬ শতাংশ হয়েছে।
আগস্টে বেশিরভাগ ভারতীয় পণ্য আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। ভারত এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে, যা ক্রেমলিনকে কিয়েভের বিরুদ্ধে হামলার খরচ যোগাচ্ছে-মূলত এই অভিযোগেই ট্রাম্প এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রুশ তেলের বড় ক্রেতা হয়ে উঠেছে ভারত। মস্কোর কাছ থেকে তেল কিনে লাখো কোটি ডলার সাশ্রয় করে ভারত। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলা শুরুর পর রাশিয়া তাদের প্রথাগত ইউরোপীয় ক্রেতাদের হারিয়ে বিকল্প রপ্তানি উৎস খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তাদের সেই চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসে ভারত।
তবে সম্প্রতি রসনেফট ও লুকওয়েলের মতো শীর্ষ রুশ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপের কারণে ভারত অপরিশোধিত তেল আমদানি কমাতে বাধ্য হয়েছে।
ভারত সরকারের আশঙ্কা, নতুন করে রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি বা প্রতিরক্ষা চুক্তি করলে তা ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে।
পালাবদল/এসএ