ঢাকা: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের বকেয়া পাওনা মেটাতে অতিরিক্ত বন্ড ইস্যুর কথা ভাবছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদকদের (আইপিপি) ওপর আর্থিক চাপ কমানো এবং দেশের বিদ্যুৎখাতকে স্থিতিশীল করা এই উদ্যোগের লক্ষ্য।
সরকারি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিপিডিবি ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি উদ্যোগ নিয়েছে এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করেছে, যাতে তারা অর্থ বিভাগের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারে।
বিপিডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, 'স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) হিসেবে পরিচিত বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে বিপিডিবির বকেয়া হিসাব করছি।'
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বিপিডিবির মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে আইপিপিগুলো পাবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।
বাকি অর্থের মধ্যে গ্যাস বিল প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা, রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পাবে ১০ হাজার কোটি টাকা এবং আদানি গ্রুপসহ ভারতের সরকারি-বেসরকারি খাত পাবে আট হাজার কোটি টাকা।
এর আগে বিদ্যুৎখাতকে স্থিতিশীল করতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২০ হাজার ৬২০ কোটি টাকা পেয়েছিল। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া দায় পরিশোধের লক্ষ্যে এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ছিল সিটি ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
বিদ্যুৎখাতের আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে ২৫ জানুয়ারি একটি বিস্তৃত চুক্তি সই হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এই চুক্তি অনুযায়ী সরকার সিটি ব্যাংককে ১৯ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা এবং পূবালী ব্যাংককে ৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বন্ড ইস্যু করেছে।
সূত্র জানায়, ভর্তুকি তহবিল বিতরণে সরকারের অক্ষমতার কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তাদের আর্থিক বাধ্যবাধকতা পূরণে লড়াই করছে, যার ফলে কেউ কেউ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
এ সংকট মোকাবিলায় সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত রেপো রেটে অনুযায়ী আট শতাংশ হারে স্পেশাল বন্ড ইস্যু করছে।
মেয়াদ শেষে সরকার সুদসহ ব্যাংকের পাওনা মিটিয়ে দেবে এবং পরবর্তীতে এসব বন্ড পুনরুদ্ধার করবে। সাধারণত এসব বন্ডের মেয়াদ ১৫-২০ বছর পর্যন্ত হয়। তবে এই বিশেষ বন্ডগুলোর সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত ধরা হয়েছে। বিদ্যুৎখাতের জরুরি প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সামিট পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার, কনফিডেন্স পাওয়ার, বারাকা, কুশিয়ারা, ডরিন ও অ্যাক্রন পাওয়ারসহ বিদ্যুৎখাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই উদ্যোগের সুবিধাভোগীদের মধ্যে অন্যতম।
চুক্তির গুরুত্ব নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা আশাবাদী। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এসব বন্ড পেতে পারে, একই সঙ্গে সরকারও আর্থিক দিক দিয়ে কঠিন সময় মোকাবিলা করতে পারে।