গাজা ভূখণ্ডের গাজা শহরের উপকন্ঠে সোমবার দেখা গিয়েছে ইসরাইলের মেরকাভা সামরিক ট্যাঙ্ক। প্যালেস্তিনীয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে আল-জাজিরা জানাচ্ছে, গাজা শহরের উত্তরে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটের অদূরে বেশ কয়েকটি মেরকাভা ট্যাঙ্ক দেখা গিয়েছে। এই ট্যাঙ্কগুলি গাজার সীমান্ত পেরিয়ে তিন কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়ে বলে খবর।
গাজার এক বাসিন্দাকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, সালাহ আল-দিন স্ট্রিট অবরুদ্ধ করে ফেলেছে ইসরাইলের ট্যাঙ্ক। কোনো চলন্ত গাড়ি দেখলেই গোলা ছুঁড়ছে ইসরাইলিরা।
যদিও সোমবার দুপুর নাগাদ ফিলিস্তিনের তরফে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরাইলের মূল বাহিনীর অগ্রগামী বা ভ্যানগার্ড অংশের কয়েকটি ট্যাঙ্ক ঢুকে পড়ে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধে পিছু হটে তারা।
হামাসের অন্যতম শীর্ষনেতা সালামা মারুফ আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, ‘‘মূল গাজা শহরে কোনো রকমের ইসরাইলি অনুপ্রবেশ ঘটেনি। সালাহ আল-দিন স্ট্রিটে যেটা ঘটেছে, সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আক্রমণকারীরা কয়েকটি ট্যাঙ্ক এবং বুলডোজার নিয়ে এসে আমাদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছিল। আমাদের প্রতিরোধে পিছু হটতে হয়েছে তাদের।’’
মারুফ জানিয়েছেন, ইসরাইলের অনুপ্রবেশকারী বাহিনী ২টি গাড়ি লক্ষ্য করে ট্যাঙ্কের গোলা ছুঁড়েছে।
৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত আপাতত থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে ফিলিস্তিনিদের গাজার ৮ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের অর্ধেক মহিলা এবং শিশু। অপরদিকে ইসরাইলের দাবি, হামাসের হামলায় তাদের ১৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
ইতিমধ্যেই গাজা সীমান্তে কয়েক লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে ইসরাইল। ইসরাইলের নেতানিয়াহু সরকার হুমকি দিয়েছে, গাজার মাটিতে সেনা অভিযান শুরু করা হবে। পাল্টা হুমকি ভেসে এসেছে হামাসের তরফেও। লেবাননের হেজবোল্লা এবং ইরানের তরফে বলা হয়েছে, গাজার মাটিতে ইসরাইলের সামরিক অভিযান শুরু হলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যেই ইসরাইলের পাশে দাঁড়াতে ভূমধ্যসাগরে নৌবহর মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজায় পুরদস্তুর অভিযান চালানোর মতো রাজনৈতিক পুঁজি নেই নেতানিয়াহু সরকারের। কারণ, ভোটমুখি আমেরিকায় এই অভিযানের খেসারত দিতে হতে পারে জো বাইডেন প্রশাসনকে। তাই তারা এর সবুজ সঙ্কেত দেবেন না। আর আমেরিকার সবুজ সঙ্কেত ছাড়া গাজায় অভিযান শুরু করা অসম্ভব ইসরাইলের পক্ষে।
বিভেদের রাজনীতিতে ব্যাহত সুরক্ষা, বিতর্ক ইসরাইলে
হামাস হামলার দায়ভার নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আমেরিকার ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’। সেখানে ইসরাইলের গোয়েন্দা বিভাগের একটি রিপোর্টের নির্যাস তুলে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ইসরাইলি গোয়েন্দাদের তরফে নেতানিয়াহুকে সতর্ক করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল যে তার বিভেদের রাজনীতির জন্য দেশে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি বাইরের শত্রুরা এর সুযোগ নেবে।
রোববার নেতানিয়াহু এক্সে পোস্ট করে হামাসের হামলার দায় ঠেলেছেন নিজের মন্ত্রিসভার দিকে। সেই পোস্টে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইসরাইলের সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়ে পোস্ট ডিলিট করেন নেতানিয়াহু।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে, কীভাবে হামাস ইসরাইলের বুকে এতবড় হামলা সংগঠিত করতে পারল। সেখানে উঠে এসেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে হামাসের সম্ভাব্য হামলা সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন ইসরাইলের এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা। অভিযোগ, তার সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেন নেতানিয়াহু।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখছে, ইসরাইলের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির তরফে ধারাবাহিক ভাবে হামাসের শক্তিকে দুর্বল করে দেখা হয়েছে। তাদের বোঝাপড়া ছিল, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরানের থেকে ইসরাইলের বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বরং ইসরাইলি সুরক্ষা সংস্থাগুলি মনে করেছিল, ২০২১ সালের পরে আর গাজা থেকে হামাস কোনো বড় ধরণের হামলা করবে না ইসরাইলে। বরং হামাস ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে ফাতাহ পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুৎ করতে বেশি আগ্রহী। সেই মতো রাজনীতির ঘুঁটি সাজিয়েছিল নেতানিয়াহু সরকার।
৭ অক্টোবরের প্রায় ১ মাস আগে, সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ইসরাইলের গোয়েন্দারা অপর একটি খবর পাঠায় নেতানিয়াহুকে। সেখানে বলা হয়, ইরানের মদতপুষ্ট গোষ্ঠীগুলি ইসরাইলের উপর একাধিক দিক থেকে বড়সড় আঘাত হানতে চলেছে। যদিও সেখানে গাজা থেকে হামলা হওয়ার কোনো পূর্বাভাস ছিল না।
এই অবস্থায় ইসরাইলি গোয়েন্দা মহল নিজেদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু নেতানিয়াহু কোনোরকম দায় স্বীকারের রাস্তায় হাঁটতে নারাজ। তিনি ধারাবাহিক ভাবে সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষকর্তাদের দিকে আঙুল তুলে চলেছেন।