শনিবার ২২ নভেম্বর ২০২৫ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
শনিবার ২২ নভেম্বর ২০২৫
 
পরিবেশ
কম মাত্রার ভূমিকম্পেও কেন বেশি ঝাঁকুনি অনুভূত হয়?





পালাবদল ডেস্ক
Saturday, 22 November, 2025
12:20 AM
 @palabadalnet

 ভূমিকম্পের পর আতঙ্কিত রাজধানীবাসী। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্পের পর আতঙ্কিত রাজধানীবাসী। ছবি: সংগৃহীত

দেশে এখন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ভূমিকম্প। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে এই ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এই উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে নরসিংদীর মাধবদী এলাকায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। এর কেন্দ্রের গভীরতা ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার।

ভূমিকম্প কেন হয়

পৃথিবীর মহাদেশগুলো স্থির নয়। এগুলোর নিচে থাকা অতিকায় শিলাস্তরগুলো উত্তপ্ত তরল ম্যাগমার ওপর ভাসছে। এগুলোকে বলা হয় টেকটনিক প্লেট। প্লেটগুলো একটানা নড়াচড়া করতে থাকে। এই প্লেটগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে ঠোকাঠুকি হয়। কখনো কখনো একটি প্লেট আরেকটির ওপর উঠে যায়। এতে দুই প্লেটের মাঝে চাপ হিসেবে শক্তি সঞ্চিত হয়।

যখন এই চাপ হঠাৎ মুক্ত হয়, তখন বিপুল শক্তি বেরিয়ে আসে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠকে কাঁপিয়ে দেয়। এছাড়া ফল্টলাইন বা শিলাচ্যুতিতেও ভূমিকম্প তৈরি হয়।

মাটির নিচে যেখানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় তাকে বলা হয় কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে শক্তি সিসমিক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই তরঙ্গ এপিসেন্টার বা উপকেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়। এপিসেন্টার হলো মাটির ওপরের সেই স্থান, যা ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে সোজা ওপরে অবস্থিত।

ভূমিকম্পের মাত্রা কীভাবে মাপা হয়

ভূমিকম্প ঠিক কতটা শক্তিশালী সেটি যে এককে প্রকাশ করা হয় তাকে রিখটার স্কেল বলা হয়। এটি বলে দেয় ভূমিকম্প কতটা শক্তিশালী। ভূমিকম্প মাপা হয় সিসমোমিটার নামে একটি যন্ত্র দিয়ে। এই যন্ত্র দিয়ে কম্পনের যে রেখাচিত্র পাওয়া যায় তাকে সিসমোগ্রাফ বলে।

রিখটার স্কেল সাধারণত ১ থেকে ১০ পর্যন্ত ধরা হয়, যদিও এর কোনো প্রকৃত সর্বোচ্চ সীমা নেই। এই স্কেলটি লগভিত্তিক, অর্থাৎ ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ৪ মাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় দশ গুণ বেশি শক্তিশালী।

রিখটার স্কেলে ১ থেকে ২ মাত্রার কম্পন নিয়মিতই ঘটে এবং এগুলো এত ছোট যে মানুষ টেরও পায় না।

৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প কম ঘটে, কিন্তু সেগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে।

এ পর্যন্ত রেকর্ড হওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প ঘটেছিল ১৯৬০ সালে চিলিতে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫।

কম মাত্রার ভূমিকম্পেও বেশি ঝাঁকুনি লাগে কেন

ভূমিকম্প সাধারণত পৃথিবীর ভূত্বক বা উপরের স্তরে ঘটে। এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার (প্রায় ৫০০ মাইল) গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত।

ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে যতই দূরে যাওয়া যায় এর বিধ্বংসী ক্ষমতা ততই কমতে থাকে। তাই, যদি একই মাত্রার ভূমিকম্প ৫০০ কিলোমিটার গভীরে ঘটে, তাহলে ভূপৃষ্ঠে এর ঝাঁকুনি ২০ কিমি গভীরে ঘটা ভূমিকম্পের তুলনায় অনেক কম অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পের গভীরতা পৃথিবীর গঠন এবং টেকটোনিক পরিবেশ বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। ভূমিকম্পের গভীরতা নির্ধারণ করা সাধারণত অবস্থান নির্ধারণের চেয়ে বেশি জটিল, যদি না কোনো সিসমিক স্টেশন সরাসরি এপিসেন্টারের ঠিক ওপরে থাকে। তাই সাধারণত গভীরতা নির্ধারণের ত্রুটির মাত্রা অবস্থান নির্ধারণের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে।

ভূমিকম্প কেমন অনুভূত হবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির অবস্থান, ভূমিকম্প কোথায় ঘটছে এবং এর শক্তি ও স্থায়িত্বের ওপর।

কাছের বড় ভূমিকম্প হঠাৎ একটা বড় ধাক্কার মতো লাগে, তারপর কয়েক সেকেন্ড বা কখনও কয়েক মিনিট পর্যন্ত শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়। শক্তিশালী ভূমিকম্পে মাটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকাই কঠিন হয়ে যেতে পারে।

দূরের বড় ভূমিকম্প প্রথমে হালকা ধাক্কা লাগে, তারপর কয়েক সেকেন্ড পর ধীরে-ধীরে শক্তভাবে কেঁপে ওঠে।

কাছের ছোট ভূমিকম্প ছোট তীক্ষ্ণ ধাক্কা দেয়, এরপর শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়। দূরের কম মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত টের পাওয়া যায় না। অনেক সময় স্থির অবস্থায় সামান্য কম্পন অনুভূত হতে পারে।

কম্পনের শক্তি মাটির ধরন ও নিচের ভূত্বকের ধরনের ওপরও নির্ভর করে। নরম, পুরু মাটি কাঁপন বাড়িয়ে দেয়, আর কঠিন পাথর তা কমিয়ে দেয়। কখনো তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় কেন্দ্রীভূত হলে তীব্র কম্পন হতে পারে।

উঁচু ভবনে কম্পন তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হয়। আর কম্পনের স্থায়িত্ব বেশি হলে তাতে বেশি ঝাঁকুনি অনুভূত হতে পারে।

পালাবদল/এসএস


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com