সোমবার ২ জুন ২০২৫ ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
সোমবার ২ জুন ২০২৫
 
পরিবেশ
ঈদের দিন ও তার আগে কেমন থাকবে আবহাওয়া?





বিবিসি
Saturday, 31 May, 2025
6:54 PM
 @palabadalnet

আজ সকাল থেকে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে ঢাকায়। ফাইল ছবি

আজ সকাল থেকে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে ঢাকায়। ফাইল ছবি

ঢাকা: রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েকদিন ধরে টানা বা থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আট বিভাগেই আকাশের একই অবস্থা বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমন এক সময় এই মেঘবৃষ্টি চলছে যখন মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে দেশজুড়ে।

ঈদের ছুটি শুরু হলেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরতরা নিজ নিজ জেলায় ফিরতে শুর করবেন। তবে অনেকের পরিবার-পরিজন চলে যাচ্ছেন আগেই।

বাড়ি ফেরা ছাড়াও অনেকে কেনাকাটা করছেন পরিবার-পরিজনের জন্য। আর কোরবানির পশু কেনার জন্য হাটে ঢুঁ মারা তো ঈদের প্রধান অনুষঙ্গ। কিন্তু এই টানা বৃষ্টির কারণে স্বাভাবিক চলাফেরাতেও ভোগান্তি হচ্ছে। যারা ঈদের জন্য দূরের পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাবেন তাদেরও শঙ্কা থেকে যাচ্ছে রাস্তায় নেমে বৃষ্টির কবলে পড়তে হবে কিনা।

আবহাওয়া কেমন থাকবে সামনের কয়দিন?

গত ২৭ মে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপ তৈরি হয়েছিলো, তার প্রভাবেই সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। লঘুচাপটি পরে আর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়নি, বরং গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর তা গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে।

আজ শনিবার দুপুরে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আগামী কয়েকদিনে ঘূর্ণিঝড় বা লঘুচাপ সৃষ্টির কোনো আভাস নেই। তবে এখন যেহেতু দেশব্যাপী মৌসুমি বায়ু বইছে, তাই আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

ঢাকায় আজ সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, “আগামীকালও ঢাকাসহ সিলেট, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় এক-দুই পশলা বৃষ্টি হবে,” বলেন মল্লিক।

তিনি জানান, দোসরা জুনের দিকে বৃষ্টিপাত কমে আসবে। কিন্তু একেবারে থেমে যাবে না। এই সপ্তাহ জুড়ে সারাদেশেই হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিপাত হবে।

তবে উত্তরাঞ্চলের বিভাগ রাজশাহী ও রংপুরে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা তুলনামূলক কম থাকবে।

“ঈদের দিন সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। তবে তিন দিন আগে আরও স্পেসিফিক করে বলা সম্ভব,” জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই পুরো সময়টা জুড়ে ভ্যাপসা গরম থাকবে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকবে বলে গরম পড়বে। মূলত, বাতাসে যখন জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বেশি থাকে, তখন গরম অনুভূত হয়। তিনি আরও জানান যে আগামী দুই তারিখের পর গরম কিছুটা বাড়বে এবং আগামী সাতই জুনের পর ৩২ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করবে।

এদিকে আজ শনিবার সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও বলা হয়েছে, এই সপ্তাহের শেষের দিকে সারাদেশেই তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

এতে আরও বলা হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

নেমে গেছে সমুদ্র বন্দরের সতর্কতা, আছে নদীবন্দরে

আজ সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

একারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।

তবে আজ শনিবার সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলে ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ভারী বর্ষণের এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলাগুলোর পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

সেইসাথে ভারী বর্ষণের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।

বন্যার আশঙ্কা কতটুকু?

গত বছর জুনের মাঝামাঝিতে কোরবানির ঈদ হয়েছিলো। তখন টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের অনেক অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল। ঘরবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় অনেকেই সেবার পশু কোরবানি দিতে পারেননি। পানি কমে গেলে ঈদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন অনেকে কোরবানি দিয়েছেন।

এ বছরও তেমন কোনো শঙ্কা আছে কি-না জানতে চাইলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

তবে টানা বৃষ্টির কারণে দেশের কোনো কোনো নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে।

আকস্মিক বন্যাপ্রবণ নদীগুলোতে পানি বাড়ার তথ্য সাধারণত তিনদিন আগে সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদীর পানি বাড়লেও আগামী ১০ দিনের মাঝে বন্যা হবে না।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল শুক্রবারের পূর্বাভাসে আগামী ২৪ ঘণ্টায় গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল বাড়ার কথা বলা হয়েছিলো।

বিশেষ করে মুহুরী নদীর পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা করা হচ্ছিলো। এটি হলে মুহুরী নদীর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির ঝুঁকি ছিল।

“ফেনীতে টানা বৃষ্টি হচ্ছিলো। কিন্তু এখন বৃষ্টি কমেছে। তাই ওই আশঙ্কা আর নেই। সিলেটে আরও দুইদিন ভারী বৃষ্টি থাকবে, সেখানে নদীর পানির সমতল বাড়ছেও। কিন্তু এ থেকে বন্যার সম্ভাবনা নেই। কারণ এই বৃষ্টিও কমে যাবে,” বলছিলেন সরদার উদয় রায়হান।

তার বক্তব্য, “নেত্রকোনার সোমেশ্বরী, সিলেটের সারিগোয়াইন, সুনামগঞ্জের যাদুকাটা, মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদীর পানি আগামী দুইদিনে বাড়তে পারে। এরপর কমবে।’

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের আজ শনিবারের পূর্বাভাসেও ওই নদীগুলোর পানি সমতল বেড়ে আজ থেকে আগামী দুই দিনে ওই চার জেলায় বন্যা ঝুঁকি থাকার কথা বলা হয়েছে।

তবে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং ওই পানি ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দিকে যাচ্ছে। তাই, এই সময়ে যমুনা ও ব্রহ্মাপুত্র নদীর পানি বাড়ার কথা জানিয়েছেন সরদার উদয় রায়হান।

উল্লেখ্য, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৯টার পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রটিটি বিভাগেরই কোথাও না কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে চট্টগ্রামের বান্দরবানে, ১৪১ মিলিমিটার। এরপরই আছে সিলেট, ১৩২ মিলিমিটার।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com