
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
ঢাকা: আগামী নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কারও সঙ্গে জোট গড়বে কি না, তা নিয়ে যখন চলছে কৌতূহল, তখন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্যদের অধিকাংশ এককভাবে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। তাদের যুক্তি, এনসিপির স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি এবং ভবিষ্যতে একটি শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এটি প্রয়োজন।
রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্প্রতি প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দলের কাউন্সিলের সভা হয়। সেখানে এনসিপির নির্বাচনী চিন্তা, সম্ভাব্য জোট-সমঝোতা এবং দলকে নিয়ে নানা প্রচার নিয়ে চলে আলোচনা।
জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, এনসিপি একটি কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে। প্রার্থী নির্ধারণ ও মনোনয়ন জমার প্রক্রিয়া নিয়ে নির্বাহী কাউন্সিলে আলোচনা হয়েছে। সভায় বেশির ভাগ সদস্য মত দিয়েছেন, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে এনসিপি এককভাবে নির্বাচনে যাক।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া দল এনসিপি সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। নতুন দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নিতে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক নিয়েছে তারা।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে এনসিপির নেতারা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী উভয় দলের সমালোচনা করে গেলেও এই দল দুটির কোনোটির সঙ্গে তাদের জোট বেঁধে ভোটে যাওয়ার আলোচনাও চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এর মধ্যেই গত বুধবার রাতে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসে এনসিপির ৫১ সদস্যের নির্বাহী কাউন্সিল। সভায় ৩০ জনের বেশি উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ ঢাকার বাইরে থাকায় সভায় থাকতে পারেননি।
নির্বাহী কাউন্সিলের সভায় অংশ নেওয়া তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় দলের নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোন নেতা কোন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে কথা হয়েছে। এনসিপির সব আসনেই প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে মত এসেছে সভায়। নেতাদের অনেকেই বলেছেন, নির্বাচনী আমেজকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করার সুযোগ রয়েছে।
একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, “বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দুই দলই আগামী নির্বাচনে এনসিপিকে সঙ্গে রাখতে চায়। কিন্তু কোনো দলের ছায়া নিয়ে কয়েকটি আসনে জেতা সম্ভব হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এনসিপির আলাদা রাজনীতি দাঁড়াবে না। আবার বিএনপির চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের যেসব সমালোচনা গত এক বছরে এনসিপির নেতারা করেছেন, তাদের সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় গেলে তার দায় নিতে হবে। অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে গেলে তাদের ঐতিহাসিক দায়ভার বহন করতে হবে। সার্বিক বিবেচনায় এনসিপির স্বতন্ত্র অবস্থানে থাকাই ভালো হবে, এই আলোচনা নির্বাহী কাউন্সিলে হয়েছে।”
তবে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দল, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের সমন্বয়ে সম্ভাব্য তৃতীয় জোটের একটি সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয় এনসিপির সভায়।
এনসিপির ওই নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, শীর্ষ নেতারা নির্বাহী কাউন্সিলকে জানান যে জোটের বিষয়ে অনেক দলই আগ্রহী। কিন্তু এই দলগুলোর অনেকেই বিএনপির সঙ্গে একধরনের সমঝোতায় আছে। তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এলে তৃতীয় জোট হতে পারে। পাশাপাশি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ৯ দল যৌথভাবে কিছু করতে পারে কি না, সেই আলোচনাও রয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এনসিপিকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে সেগুলোও পর্যালোচনা করা হয় দলটির নির্বাহী কাউন্সিল সভায়।
পালাবদল/এসএ