
যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা: রাজধানীর পল্লবীর যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার সঙ্গে অপরাধী চক্র ‘ফোর স্টার গ্রুপ’-এর সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেফতারের পর র্যাব এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়।
গ্রেফতার দুজন হলেন-মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাটা সোহেল (৩০) এবং সুজন ওরফে বুকফাটা সুজন (৩৫)। এর মধ্যে সাভারের বিরুলিয়া থেকে সোহেলকে এবং টঙ্গী থেকে সুজনকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব জানায়, এরা পেশাদার খুনি এবং প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূলত দুটি কারণ কাজ করেছে। একটি হলো মিরপুরে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আধিপত্য বজায় রাখা। অপরটি রাজনৈতিক বিরোধ।
তিনি বলেন, গোলাম কিবরিয়া পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব ছিলেন। তিনি সম্প্রতি তার একসময়ের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। যতটুকু জানা গেছে, তিনি এলাকায় চাঁদাবাজি বা মাদক ব্যবসাকে সমর্থন করতেন না। এই বিরোধ থেকেই তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।
‘ফোর স্টার গ্রুপ’-এর সংশ্লিষ্টতা
গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে র্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে মিরপুরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে “ফোর স্টার গ্রুপ“-এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এই গ্রুপের চারজন মূল হোতা—মামুন, ইব্রাহিম, শাহাদাত ও মুক্তার। তারাই মিরপুরের অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করেন। মিরপুর এলাকাকে চারটি ভাগে ভাগ করে তারা কার্যক্রম চালান।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার দুজন এই গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য। তারা ইব্রাহিম ও মামুনের হয়ে কাজ করতেন।
সিসিটিভি ফুটেজে যে অস্ত্রধারীদের গুলি করতে দেখা গেছে, গ্রেফতার সোহেল ও সুজন তারা নন। তবে তারা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা বলে র্যাব ধারণা করছে। লে. কর্নেল মাহবুব বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পাটা সোহেল খুনিদের টাকা দিয়েছিলেন এবং জনি ৩০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তবে সোহেল কোথা থেকে এই টাকা পেলেন বা তার পেছনে কে আছেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় পল্লবী এলাকায় নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন তার স্ত্রী পল্লবী থানায় সোহেলসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও সাত-আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন-জনি ভূঁইয়া (২৫), সোহাগ ওরফে কাল্লু (২৭), মাসুম ওরফে ভাইগ্না মাসুদ (২৮) এবং রোকন (৩০)।
ঘটনার সময় কিবরিয়াকে গুলি করে পালানোর সময় স্থানীয় জনতা জনি ভূঁইয়াকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার সোহেলের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি ও মাদকসংক্রান্ত ৮টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে সুজনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে ১৮টি মামলা রয়েছে। সুজন দীর্ঘ দিন ধরে পলাতক থেকে মিরপুরে অপরাধীদের অস্ত্র সরবরাহ ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র পরিচালনা করে আসছিলেন।
পুলিশ সূত্র বলছে, সম্প্রতি মিরপুর ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, যার সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারের যোগসূত্র রয়েছে। আদালতের কাছে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে দিনদুপুরে গুলি করে হত্যার কয়েক দিনের মধ্যেই কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডটি ঘটল।
পালাবদল/এসএ