
২০২৫ সালের মে মাসে সৌদি সফর করেন ট্রাম্প। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বিন-সালমান। ছবি: রয়টার্স
গত এক দশকে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে রিয়াদ-ওয়াশিংটন সম্পর্ক। ২০১৮ সালে প্রবাসী সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ডের জেরে দুই দেশের সম্পর্কে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
পরবর্তী সাত বছরে সম্পর্ক জোড়া দেওয়ার একাধিক উদ্যোগ নেন দুই দেশের নেতারা। সেই উদ্যোগের ফল হিসেবে আজ যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসছেন সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ-বিন সালমান।
সালমানকে লাল গালিচা বিছিয়ে ওয়াশিংটনে স্বাগতম জানাবেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ট্রাম্প তার 'বন্ধু' সালমানকে বিলাসবহুল সম্বর্ধনা দেবেন।
তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও পরমাণু সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি সই হবে বলে আশার করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিন সালমানের সম্মানে 'ফ্লাই বাই' (অতিথির মাথার ওপর দিয়ে মার্কিন বিমানবাহিনীর জেট বিমান উড়ে যাওয়ার রীতি), কামানের গোলা ও বিলাসবহুল নৈশভোজের আয়োজন করছেন ট্রাম্প। সাধারণত কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের জন্যই এরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
তবে বিন-সালমান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি আরবের শাসনভার নেননি। তাকে পরবর্তী শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজার অনুপস্থিতিতে তিনি শাসকের ভূমিকা পালন করে থাকেন।
যেসব বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে
ট্রাম্প তেল-সমৃদ্ধ সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে তার প্রাধান্যের তালিকায় রেখেছেন।
সোমবার ট্রাম্প জানান, তিনি রিয়াদের কাছে বিশ্বসেরা এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে রাজি। ইতোমধ্যে এই উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল।
এই আলোচনার বিষয়ে অবগত আছেন এমন এক সূত্র এএফপিকে জানান, দুই নেতা বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতার অবকাঠামো নিয়ে একটি চুক্তিতে সই করবেন। এ বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
ট্রাম্প আবারও বিন সালমানকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অনুরোধ জানাবেন। গাজার যুদ্ধ অবসানের পর মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর পরিসরে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন ট্রাম্প।
গত শুক্রবার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, 'এটা শুধু বৈঠক নয়। আমরা সৌদি আরব ও যুবরাজকে সম্মান জানাচ্ছি।'
খাসোগি হত্যার পর প্রথম সফর
এই সফরের মাধ্যমে ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছেন বিন-সালমান।
মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের দূতাবাসে খাসোগির হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন দেন বিন-সালমান স্বয়ং। সেই নির্দেশ পালন করে সৌদি এজেন্টরা তাকে হত্যা করেন।
তবে এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে সৌদি আরব।
দীর্ঘ সময় ধরে ৪০ বছর বয়সী যুবরাজ ট্রাম্প ও তার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সৌদি সফরে গেলে বিন-সালমান তাকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানান এবং ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন।
বিন সালমান ও ট্রাম্পের যত চাহিদা
এবারের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশেষ নিরাপত্তার অঙ্গীকার আদায় করতে চাইবেন বিন-সালমান। বিশেষত, গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র কাতারের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বেপরোয়া হামলার পর এ ধরনের নিরাপত্তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে আলোড়ন তৈরি করেছিল।
এফ-৩৫ জেটের পাশাপাশি রিয়াদ অত্যাধুনিক আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে আগ্রহী।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এআই খাতে আরও এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে উচ্চ-প্রযুক্তির চিপ কেনার জন্যেও ওয়াশিংটনকে চাপ দেবেন সালমান।
ট্রাম্প বরাবরই বলে এসেছেন, রিয়াদকে দিয়ে আব্রাহাম চুক্তি সই করাতে চান তিনি। তবে আপাতত তার এই লক্ষ্যপূরণ হচ্ছে না বলেই মত দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, এ মুহূর্তে সৌদি আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এ মাসের শুরুতে ট্রাম্প বলেন, 'অনেকেই আব্রাহাম চুক্তিতে সই দিতে যাচ্ছে। আশা করছি শিগগির সৌদি আরবকেও সই দিতে রাজি করাতে পারব।'
এর আগে সৌদি আরবকে নিরাপত্তা ও জ্বালানি সংক্রান্ত সহযোগিতা দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে ২০২৩ এর ৭ অক্টোবর গাজার ভয়াবহ যুদ্ধ শুরুর পর সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
বস্তুত, আন্তর্জাতিক মহলে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রকৃত ও বড় ধরনের উদ্যোগ না আসা পর্যন্ত সৌদি আরব এ ধরনের উদ্যোগে সাড়া দেবে না।
পালাবদল/এসএ