সুনামগঞ্জ: বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, প্রকাশ্যে তো নয়-ই, মনে মনে যারা আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের বিরোধী দল বানানোর চিন্তা করছেন, তারা সেই চিন্তা বাদ দিয়ে দেন। এই চিন্তা করে লাভ নাই। ছাত্র-জনতা এই দেশে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজড করে দিয়েছে।
সুনামগঞ্জে বুধবার বিকেলে সংগঠনের নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সারজিস। পৌর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সভা ও সংবাদ সম্মেলন হয়।
সারজিস আলম তার বক্তব্যে বলেন, “পৃথিবীর কোথাও বিপ্লবী ও পরাজিত খুনি ফ্যাসিস্ট একসঙ্গে রাজনীতি করতে পারেনি। হয় বিপ্লবীরা থাকবে, না হয় ফ্যাসিস্টরা থাকবে। বাংলাদেশে খুনি ও ফ্যাসিস্টদের রাজনীতির কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার হবে এবং নিষিদ্ধ হতেই হবে। আমরা সেদিকেই এগোচ্ছি।”
গত ১৬ বছরে দেশে হাজার হাজার মানুষকে গুম, খুন করা হয়েছে জানিয়ে সারজিস বলেন, “গণ–অভ্যুত্থানে এক হাজারের বেশি মানুষকে খুন করা হয়েছে। এই খুনিদের বিচার হতে হবে, না হলে দেশের মানুষ, শহীদ পরিবারের সদস্যরা আমাদের ক্ষমা করবেন না।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে আমাদের বাধা নেই। তবে এর আগে দৃশ্যমান বিচার ও সংস্কার দেখাতে হবে। এমন নয় যে এই সময়ের মধ্যে সবার বিচার করতে হবে বা শাস্তি দিতে হবে। তবে আমরা বলি, যারা মূল কালপ্রিট, তাদের বিচার করতেই হবে। শেখ হাসিনাসহ এ রকম ২৫ থেকে ৩০ জনের বিচার এই সময়ের মধ্যে করতে হবে। গণপরিষদ নির্বাচন, জুলাই সনদের মাধ্যমে এসবের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
বাংলাদেশে আর ভারতীয় আধিপত্যবাদের কোনো নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ভারতের আশীর্বাদে আর কোনো দল এই দেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কোনো এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে, আধিপত্য দেখিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে সারজিস আলম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে সফররত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “কোন প্রটোকলে গেলে আমাদের এই নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এই আচরণ ঠেকানো যেত, সে বিষয়ে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তাদের নিরাপত্তা দিতে না পারায় সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এর দায় সেখানে কর্মরত যারা আছেন, তাদের নিতে হবে। সেখানে খুনি, ফ্যাাসিস্টদের সহযোগী হিসেবে অনেকেই কাজ করছে। আমরা এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাই।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রীতম দাস ও এহতেশাম হক, সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী দেওয়ান সাজাউর রাজা চৌধুরী, যুগ্ম সমন্বয়কারী আবু ছালেহ নাসিম উপস্থিত ছিলেন। এনসিপিকে দেশজুড়ে সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে জেলায় জেলায় সংগঠকদের নিয়ে সমন্বয় সভা হচ্ছে বলে জানান সারজিস।
গণ অধিকার পরিষদ ও এনসিপির একত্র হওয়া প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, “মানুষ এটা চায়। কারণ, গণ অধিকার পরিষদ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য নিয়ে গড়ে ওঠা একটি দল। আমরা একসঙ্গে গণ–অভ্যুত্থানে ছিলাম, আন্দোলনে ছিলাম। এ বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে।”