শুক্রবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১ আশ্বিন ১৪৩২
শুক্রবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
 
ধর্ম ও জীবন
সৌদি আরবের সদ্যপ্রয়াত গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শেখ কে?





বিবিসি নিউজ আরবি
Thursday, 25 September, 2025
4:34 AM
 @palabadalnet

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শেখ

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শেখ

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি, আব্দুল আজিজ আল শেখ ৮২ বছর বয়সে মারা গেছেন।

সৌদি রয়্যাল কোর্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “মহামান্য শেখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আল শেখ, সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি, সিনিয়র আলেম পরিষদের চেয়ারম্যান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ইফতা বিভাগের সভাপতি এবং মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের সুপ্রিম কাউন্সিলের সভাপতি, মঙ্গলবার (১ রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ) সকালে ইন্তেকাল করেছেন।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “তার ইন্তেকালে রাজ্য এবং সমগ্র ইসলামি বিশ্ব হারালো এক প্রাজ্ঞ আলেমকে, যিনি জ্ঞান, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।”

বিবৃতিতে প্রয়াত মুফতিকে বর্ণনা করা হয় এইভাবে: “তিনি ছিলেন রাজ্য ও ইসলামী বিশ্বে ফিকহ ও ফতোয়ার ক্ষেত্রে একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম। ধর্মের সেবা, ফতোয়া প্রদান এবং জাতি ও শাসকদের উপদেশ দেওয়ার জন্য তিনি সারাজীবন উৎসর্গ করেছিলেন সিনিয়র আলেম পরিষদ ও অন্যান্য সরকারি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।”

সৌদি আরবের সদ্যপ্রয়াত গ্র্যান্ড মুফতির পুরো নাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল লতিফ বিন আব্দুর রহমান বিন হাসান বিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব।

তিনি ছিলেন শেখ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব ইবনে সুলাইমান ইবনে আলী আত-তামীমি (১৭০৩–১৭৯১ খ্রি.)-এর বংশধর। শেখ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব ছিলেন  ‘ওহাবি আন্দোলন’-এর প্রতিষ্ঠাতা, যিনি দিরইয়াহ আমির মুহাম্মদ ইবনে সউদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ১৭২৭ সালে প্রথম সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ১৮১৮ সালে উসমানি আমলে মিশরের গভর্নর মুহাম্মদ আলীর পুত্র ইব্রাহিম পাশার সেনারা সে রাষ্ট্রের অবসান ঘটায়।

আব্দুল আজিজ আল শেখ ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কেউ বলেন মক্কায়, আবার কারও মতে তিনি রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র আট বছর বয়সে (১৯৫১ সালে) পিতৃহীন হন। অল্প বয়সেই শেখ মুহাম্মদ বিন সিনানের তত্ত্বাবধানে কোরআন মুখস্থ করেন।

জন্মগতভাবে তার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল ছিল এবং বিশের কোঠায় গিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান। তবুও ইসলামি জ্ঞান অর্জন অব্যাহত রাখেন এবং তৎকালীন সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি শেখ মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আল শেখের অন্যতম বিশিষ্ট ছাত্র হয়ে ওঠেন।

আব্দুল আজিজ আল শেখ ছিলেন সৌদি আরবের একজন প্রখ্যাত শরিয়া আলেম। তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন ফতোয়া, আকিদা, হালাল-হারাম বিষয়ে। তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তার চার সন্তান রয়েছে।

শিক্ষা জীবন

আব্দুল আজিজ আল শেখ শৈশব থেকেই পরিশ্রমী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১১ বছর বয়সে শেখ মুহাম্মদ বিন সিনানের কাছে কোরআন মুখস্থ সম্পন্ন করেন। চোখের দৃষ্টি হারালেও জ্ঞান অর্জন বন্ধ করেননি। তিনি শিক্ষা লাভ করেন শীর্ষ আলেমদের কাছ থেকে-যেমন শেখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল শেখ, শেখ আব্দুল আজিজ বিন বাজ, শেখ আব্দুল আজিজ আল শাথ্রি।

১৯৫৪ সালে রিয়াদের ইমাম আদ-দাওয়াহ সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে স্নাতক হন। এরপর ১৯৬০ সালে ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সউদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৬৪ সালে শরিয়া বিজ্ঞান ও আরবি ভাষায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন

১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত রিয়াদের ইমাম আদ-দাওয়াহ ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেন। পরে ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া কলেজে যোগ দেন এবং সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বহু মাস্টার্স ও ডক্টরেট থিসিস তত্ত্বাবধান করেন।

১৯৮৬ সালে তাকে সিনিয়র আলেম পরিষদের সদস্য করা হয়। এরপর তিনি স্থায়ী ফতোয়া কমিটির সদস্য এবং রাজ্যের উপ-গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৯ সালের ১৪ মে শেখ আব্দুল আজিজ বিন বাজের মৃত্যুর পর তিনি সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি ও সিনিয়র আলেম পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। প্রায় এক-চতুর্থাংশ শতাব্দী ধরে তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন, ২০২৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

তার কর্মজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল হজের দিন আরাফার খুতবা প্রদান। সৌদি যুগে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ খতিব, যিনি আরাফায় খুতবা দেন। ১৯৮২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি টানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে নামিরাহ মসজিদে হাজিদের উদ্দেশে খুতবা প্রদান করেন, যা ইসলামের ইতিহাসে দীর্ঘতম মেয়াদ।

আব্দুল আজিজ আল শেখকে ফতোয়া ও ইসলামী শরিয়া আইনের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে ধরা হয়। তিনি ছিলেন এই পদে অধিষ্ঠিত তৃতীয় ব্যক্তি—শেখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল শেখ এবং শেখ আব্দুল আজিজ বিন বাজের পর।

গ্র্যান্ড মুফতি সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও বিচারিক পদ। তিনি রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং সিনিয়র আলেম পরিষদ ও স্থায়ী ফতোয়া কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৩ সালে রাজা আব্দুল আজিজ আল সউদ এক ফরমান জারি করে প্রথমবারের মতো এ পদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং শেখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল শেখকে গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত করেন।

এরপর থেকে সাধারণত আল শেখ পরিবার (মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাবের বংশধর) এই পদে আসীন হন। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল শেখ আব্দুল আজিজ বিন বাজ, যিনি ১৯৯৩ সালে এ পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

তবে ১৯৬৯ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় এ পদ খালি ছিল, কারণ রাজা ফয়সাল পদটি বাতিল করে বিচার মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন। পরে রাজা ফাহদের আমলে ১৯৯৪ সালে পুনরায় গ্র্যান্ড মুফতির পদ চালু হয় এবং শেখ আব্দুল আজিজ বিন বাজ নিয়োগ পান।

তার উত্তরসূরি কে হবেন?

রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ শিগগিরই রাজকীয় ফরমান জারি করে নতুন গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি, ধারণা করা হচ্ছে নতুন নিয়োগ আসবে ফতোয়া প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকেই, বিশেষ করে সিনিয়র আলেম পরিষদ বা স্থায়ী ফতোয়া কমিটি থেকে।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় আছেন শেখ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আল শেখ (সিনিয়র আলেম পরিষদের সদস্য ও আল শেখ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত), শেখ সালেহ বিন ফাওজান আল ফাওজান, এছাড়াও শেখ আব্দুল্লাহ বিন সুলায়মান আল মানিয়া এবং শেখ সাদ বিন নাসির আল শাথ্রি।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com