মুন্সিগঞ্জে মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার মরদেহটি নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের বলে নিশ্চিত করেছেন তার স্বজনরা।
আজ শুক্রবার রাতে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে গিয়ে বিভুরঞ্জনের ছেলে ঋত সরকার ও ভাই চিররঞ্জন সরকার মরদেহ শনাক্ত করেন।
চিররঞ্জন সরকার বলেন, “আমরা আসলে কোনো কিছু বলতে পারছি না কীভাবে কী হলো। সে মোটামুটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল। পুলিশ আমাদেরকে একটি মরদেহের ছবি পাঠায়। সেটা দেখে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করি। পরে মরদেহ দেখে নিশ্চিত হই।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। বউদি দুপুরে ফোন করে না পাওয়ায় আমরা তাকে খুঁজতে শুরু করি। রমনা থানায় জিডিও করা হয়। এটা আত্মহত্যা নাকি খুন, নাকি অন্য কোনো কিছু, তা আমরা জানি না।”
কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. সালেহ আহমেদ পাঠান বলেন, “আগামীকাল শনিবার ময়নাতদন্তের পর তার মরদেহ ঢাকায় নেওয়া হবে।”
৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন সরকার দৈনিক আজকের পত্রিকায় সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বেরোনোর পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তার নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়ে গতকাল রাতে রমনা থানায় জিডি করেছিল পরিবার।
আজ বিকেল পৌনে চারটার দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বলাকির চর এলাকার মেঘনা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে বলাকির চর এলাকার মেঘনা নদীতে লাশটি ভাসছিল। পরে স্থানীয় লোকজন জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোনে করে তাদের জানান। তারা ঘটনাস্থল গিয়ে বিকেল পৌনে চারটার দিকে লাশটি উদ্ধার করেন। সন্ধ্যার দিকে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা লাশের ছবি তুলে ঢাকার রমনা থানায় পাঠান। পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া বিভুরঞ্জন সরকারের ছবির সঙ্গে মরদেহের ছবির মিল পেয়ে এই সাংবাদিকের পরিবারকে জানায় পুলিশ। তারপর ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন বিভুরঞ্জন সরকারের ছেলে ঋত সরকার ও চিররঞ্জন সরকার।
বাবার নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়ে ঋত সরকার গত রাতে রমনা থানায় জিডি করেন। তাতে তিনি বলেন, গতকাল সকাল ১০টার দিকে কর্মস্থলে যাওয়ার কথা বলে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বের হন বিভুরঞ্জন সরকার। বিকেল পাঁচটার মধ্যে তার বাসায় ফেরার কথা ছিল। তিনি মুঠোফোনটি বাসায় রেখে গিয়েছিলেন। রাত ৯টার মধ্যে তিনি বাসায় না ফিরলে আজকের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলে জানতে পারেন যে তিনি (বিভুরঞ্জন সরকার) অফিসে যাননি। এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও বিভুরঞ্জনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ‘খোলা চিঠি’ শিরোনামে বিভুরঞ্জন সরকারের একটি লেখা প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় চিঠিটি তিনি তাদের মেইল করেছিলেন। ‘জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন’ ফুটনোট দেওয়া ওই লেখায় বিভুরঞ্জন সরকার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নানা ঘটনা, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও গণমাধ্যম পরিস্থিতি, নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, মেডিকেল পাস সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় ‘ফেল করা’, বুয়েটে থেকে পাস করা ছেলের ‘চাকরি না হওয়া’ এবং নিজের আর্থিক দৈন্য নিয়ে হতাশার কথা উল্লেখ করেন।