বৃহস্পতিবার ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ২৯ কার্তিক ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১৩ নভেম্বর ২০২৫
 
আইন-আদালত
এক নজরে হাসিনার বিচার





Thursday, 13 November, 2025
9:40 AM
 @palabadalnet

ক্ষমতাচ্যুত ও  ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

ক্ষমতাচ্যুত ও ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

ঢাকা: গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত ও  ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আগামীকাল বৃহস্পতিবার মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের সময় ঘটা অপরাধের প্রথম বিচারের রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এই মামলার বিচার চলাকালে আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হন, যা ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ ধরনের প্রথম ঘটনা।

গণঅভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ জমা পড়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায়। সংস্থাটি অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১২ মে তদন্ত সংস্থা প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।

এর ভিত্তিতে ১ জুন ট্রাইব্যুনালে হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওই দিনই ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেন। এরপর ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ৪ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৮১ জনকে সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ৫৪ জন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা অভিযোগপত্রটি ছিল ১৩৫ পৃষ্ঠার। এর সঙ্গে ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার বিভিন্ন নথি ও তথ্যপ্রমাণ জমা দেওয়া হয়। মামলার বিচার চলাকালে আবদুল্লাহ আল-মামুন কারাগারে থাকলেও বাকি দুই আসামি পলাতক।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জানে আলম খান ও মো. আলমগীর।

যে ৫ অভিযোগে বিচার

হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, উসকানি ও ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়—এই পাঁচটি অভিযোগে বিচার হয়েছে। অভিযোগগুলো হলো:

গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে উসকানিমূলক বক্তব্য: ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা ও সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর ব্যপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে হামলা চালায়। এর মাধ্যমে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনায় আসামিদের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শান্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র ছিল বলে অভিযোগ আনা হয়।

হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আন্দোলনকারীদের দমনে হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। এর মাধ্যমে আসামিরা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে।

রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা: ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডে তাদের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন হয়েছে।

চানখাঁরপুলে হত্যা: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ছয়জন নিহত হন। এই ঘটনাতেও শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

আশুলিয়ায় হত্যা ও লাশ পোড়ানো: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা; তাদের মধ্যে পাঁচজনের লাশ পুড়িয়ে দেওয়া এবং একইসঙ্গে গুরুতর আহত একজনকে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনায় তিন আসামি কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com