
নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ। ফাইল ছবি
নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বহুমাত্রিক শিল্পস্রষ্টা। গল্প বলার ভাষা আর ভঙ্গিকে আরও সহজ, আরও জীবন্ত করেছেন তিনি। তাঁর লেখায় সাধারণ মানুষের হাসি-কান্না, স্বপ্ন-বাস্তবতা আর জীবনের টানাপোড়েন এমনভাবে ফুটে উঠেছে যে পাঠক মনে করে-এই গল্পগুলো যেন তাদেরই জীবন থেকে উঠে এসেছে। তার লেখা উপন্যাস ও গল্পে এমন অনেক কালজয়ী উক্তি রয়েছে, যেগুলো ‘হুমায়ূন আহমেদ এর উক্তি’ নামেই সবার কাছে বেশি পরিচিত।
আজকের লেখাটিতে আমরা হুমায়ূন আহমেদের কিছু স্মরণীয় উক্তি শেয়ায় করবো।
ভোরবেলা মন ভালো থাকে, কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খারাপ হতে থাকে। বিকেলের দিকে মেজাজ থাকে সবচেয়ে খারাপ, আর সন্ধ্যার পর তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।
নারীদের দুঃখ প্রকাশের নয়, লুকিয়ে রাখার বিষয়।
বড় বড় সমস্যার সমাধান সহজেই হয়। কিন্তু ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করাটাই সবচেয়ে কঠিন।
বিত্তবানরা কল্পনা করতে পারেন না। বাস্তবের হিসাব-নিকাশে তারা এত ব্যস্ত থাকেন যে কল্পনার জগতে প্রবেশ করার সময়ই পান না। ধীরে ধীরে তাদের কল্পনার শক্তিও হারিয়ে যায়।
যারা কম বোঝে, তারাই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী।
বসন্তের দিন কি সত্যিই চলে যায়? কিছুই তো হারিয়ে যায় না। এক বসন্তের বিদায়ের পর আরেকটি এসে দাঁড়ায়। স্বপ্নও ঠিক তেমনই, হারিয়ে যায়, আবার ফিরে আসে নতুন রূপে।
আমরা বলে থাকি, সব মানুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে তা কখনো দেখা যায় না। কেবল মৃত্যুর দোরগোড়ায় এসে সবাই এক হয়ে যায়, সেখানে প্রধানমন্ত্রী আর ইট ভাঙা শ্রমজীবী নারীর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না।
রাগলে মানুষের চোখ ছোট হয়ে আসে, আর আনন্দের মুহূর্তে চোখ হয় বড় বড়।
পুরুষদের এক অদ্ভুত দুর্বলতা হলো, তারা ভাবে, সব নারীই তার প্রেমে পড়তে উন্মাদ হয়ে আছে।
প্রেমের ক্ষেত্রে ভাগ্যের সহায়তা পাওয়া যায় না। গল্প কিংবা সিনেমায় হয়তো দেখা যায়, কিন্তু বাস্তব জীবন গল্প নয়। জীবনের নায়িকারা নায়কদের রাস্তায় দেখলেও চিনতে পারে না।
তাৎক্ষণিকভাবে প্রেমে পড়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর অতিরূপবতীদের প্রেমে পড়ারও দরকার নেই, কারণ নিয়ম অনুযায়ী অন্যরাই তাদের প্রেমে পড়বে।
গভীর প্রেম মানুষকে নিয়ন্ত্রণের পুতুল বানিয়ে দেয়। কেউ প্রেমিকের হাতের পুতুল হয়, কেউ প্রেমিকার। তবে দুজন কখনো একসঙ্গে পুতুল হয় না। কে পুতুল হবে আর কে নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নির্ভর করে মানসিক ক্ষমতার ওপর। যার মানসিক শক্তি বেশি, পুতুলের সুতো থাকে তার হাতেই। বই: মিসির আলি! আপনি কোথায়?
ছেলে আর মেয়ে বন্ধুত্ব করতে পারে, কিন্তু একসময় তারা একে অপরের প্রেমে পড়বেই। হয়তো ক্ষণিকের জন্য, হয়তো ভুল সময়ে, কিংবা দেরিতে। আর না হয় আজীবনের জন্য।
প্রেম ও যুদ্ধ কখনো পরিকল্পনামাফিক হয় না।
বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় কুসংস্কার হলো প্রেম।
যে মানুষ স্বপ্ন দেখতে জানে না, সে কখনো বড় কিছু করতে পারে না।
মেয়েদের বোঝা সহজ নয়। যদি কেউ সত্যিই কোনো মেয়েকে পুরোপুরি বুঝতে চায়, তাহলে হয় সে পাগল হয়ে যাবে, নয়তো তার প্রেমে পড়ে যাবে। -হুমায়ূন আহমেদ
প্রায় সবাই তার বিপরীত স্বভাবের মানুষের প্রেমে পড়ে।
প্রেমে পড়া মানে কারো ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাওয়া। যার প্রেমে তুমি পড়বে, সে তোমার জীবনের বিশাল একটা অংশ দখল করে নেবে। আর যদি কোনোদিন সে তোমাকে ছেড়ে যায়, তাহলে সেই অংশটাও নিয়ে চলে যাবে, আর তুমি শূন্যতায় ডুবে যাবে।
রাগ থেকে প্রেম জন্ম নেয়, ঘৃণা থেকেও প্রেম হয়। এমনকি অপমান কিংবা লজ্জা থেকেও প্রেমের জন্ম হতে পারে।
ইউনিভার্সিটির পুরানো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে, হাসি হাসি করে জিজ্ঞেস করা হয়-তারপর কি খবর ভালো আছেন? এখন কি করছেন? কলেজের পুরানো বন্ধুর সঙ্গে বলা হয়-আরে তুমি? কেমন আছো? আর স্কুল লেভেলের বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে-একজন আরেকজনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে-তাই নিয়ম।
বউ মানেই এক কোমল অনুভূতি-যেখানে স্বপ্ন আর কল্পনা মিলেমিশে একাকার।
সুন্দরীদের হাতের লেখাও সুন্দর হয়-এটি যেন এক অমোঘ সত্য। তারা জানে, তারা সুন্দর। তাই তাদের চারপাশের সব কিছুতেই সৌন্দর্যের ছাপ রাখতে চায়।
প্রত্যেক মানুষ একেকটা বইয়ের মতো। কেউ সহজ, কেউ কঠিন, আবার কারও হরফই বোঝা যায় না। কিছু বই পড়তে গেলে প্রথমে ভাষা বুঝতে হয়, আর কিছু বইয়ের পৃষ্ঠা একেবারে শূন্য-নিরব, রহস্যময়। আমার বইটা কেমন? হয়তো সহজ ভাষায় লেখা, কিন্তু সত্যিই কি সহজ? কারণ সরলতার মাঝেও লুকিয়ে থাকে অসীম জটিলতা।
যাদের ঘরে কোনো আকর্ষণ থাকে না, তারা সন্ধ্যায় আর ঘরে ফিরতে চায় না। সেই সময়টায় তারা এক অদ্ভুত অস্থিরতায় ভুগতে থাকে।
যে পাখি একবার উড়ে যায়, তাকে ফিরে আসতেই হয়। কিন্তু খাঁচায় বন্দি পাখির কোনো গন্তব্য থাকে না-তার ফেরারও প্রয়োজন হয় না।
মেয়েদের হাসি সুন্দর, কিন্তু তাদের হাসি চেপে রাখার সময়ের সৌন্দর্য আরও দশগুণ বেশি।
ঘুমানোর আগে আয়নায় নিজেকে দেখার ইচ্ছে প্রায় সব তরুণীর মনেই জাগে।
অল্পবয়সী মেয়েদের প্রেম আবেগনির্ভর হয়, যুক্তিনির্ভর নয়। তাদের চোখে কোনো অসুবিধা ধরা পড়ে না, তারা শুধু দেখবে মানুষের মানসিক শক্তি আর মানসিক সৌন্দর্য।
প্রেম আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর যদি সেটা একতরফা হয়, তবে তার গুরুত্ব আরও বেশি।
মেয়েদের এক ধরনের তৃতীয় নয়ন থাকে, যার মাধ্যমে তারা মুহূর্তের মধ্যে বুঝে যায় কেউ তাদের প্রেমে পড়েছে কি না।
ভালোবাসা আর ঘৃণা আসলে একই মুদ্রার দুই পিঠ। প্রেমিক-প্রেমিকার সামনে সেই মুদ্রা ঘুরতে থাকে। যাদের প্রেম যত গভীর, তাদের মুদ্রার ঘূর্ণন তত বেশি। একসময় মুদ্রা থেমে যায়-কখনও ভালোবাসা লেখা পিঠ ওপরে থাকে, কখনও ঘৃণা। তাই প্রেমের মুদ্রাকে সবসময় ঘুরতে দিতে হয়, ঘূর্ণন থামানো যাবে না।
প্রেমের শক্তি কতটা প্রবল হতে পারে, তা প্রেমে না পড়লে বোঝা যায় না।
প্রেম আর করুণা এক জিনিস নয়। প্রেমের প্রকৃতি সর্বগ্রাসী। আগুন যেমন সবকিছু পুড়িয়ে ফেলে, প্রেমও সবকিছু গ্রাস করে নেয়।
সাধারণ মেয়েরা ছালবাকলহীন, সাধারণ ছেলের প্রেমে পড়বে না। তারা খুঁজবে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, টাকা-পয়সা, ঢাকায় বাড়ি আছে কি না। কিন্তু অতি বিত্তবান মেয়েরা এসব ছেলেদের প্রতি করুণা অনুভব করবে, আর সেই করুণা থেকেই জন্ম নেবে প্রেম।
ক্লাস টেনের মেয়েরা পাত্রী হিসেবে শ্রেষ্ঠ। কারণ এই বয়সে তারা প্রথমবার পুরুষের প্রতি কৌতূহলী হয় এবং প্রেম করতে চায়। বিয়ের পর তারা স্বামীকে হাতের কাছে পায়, তাই প্রথম প্রেমটাও হয় স্বামীর সঙ্গে। আর এই প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হয়।
যদি কোনো মেয়ে সত্যিকারের প্রেমে পড়ে, সে শুধু ছেলেটিকেই ভালোবাসবে না-তার চারপাশের সবকিছুর প্রতিও মুগ্ধতা জন্ম নেবে।
প্রেম করার জন্য মেয়েরা স্মার্ট ছেলেদের খোঁজে, কিন্তু বিয়ের জন্য পছন্দ করে শান্ত-ভদ্র ছেলেদের। এই ছেলেদের পোশাক হয় পাজামা-পাঞ্জাবি, পায়ে স্যান্ডেল। তারা হাঁটে মাটির দিকে তাকিয়ে, লাজুক ভঙ্গিতে হাসে এবং নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না।
মেয়েরা বিয়ের আগে কোনো পুরুষকে স্বামী হিসেবে কল্পনা করে আনন্দ পায় না। এমনকি প্রেমিককেও তারা বিয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বামী ভাবে না।
ছেলে পাগলের চেয়ে মেয়ে পাগল অনেক বেশি ভয়ংকর।
গুণী মানুষের প্রেমে যুগে যুগে মেয়েরা পাগল হয়েছে। কারণ প্রকৃতি চায়, পুরুষের গুণ যেন পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। মানবজাতির ভালো গুণগুলো যেন হারিয়ে না যায়, বরং ক্রমে পূর্ণ বিকাশ লাভ করে।
কিছু মানুষ মনে করে, নারীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা শুধু সময়ের অপচয়। তাই তারা সে কাজটি করতেই চায় না।
প্রকৃতি যাকে দিতে চায়, তাকে উজাড় করেই দেয়। আর যাকে দিতে চায় না, তাকে কিছুই দেয় না। তাই একজন হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথ, আরেকজন হয় ঠেলাগাড়ির চালক মুকাদ্দেছ।
প্রত্যেক মানুষের ভেতরে কিছু আদিম ভয় লুকিয়ে থাকে। মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেই ভয় নিজের ভেতরে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। খুব কম সংখ্যক মানুষই সেই ভয়কে মোকাবিলা করতে পারে।
ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য হলেও পুরুষদের বিয়ে করা উচিত। কথায় আছে না-স্ত্রীভাগ্যে ধন।
সব দলের মন্ত্রীরা একই রকম। তাদের মধ্যে কোনো গুণগত পার্থক্য নেই, আবার দোষের দিক থেকেও কেউ কম নয়। তাদের সঙ্গে গ্রাম্য বাউলদের মিল রয়েছে। যেমন বাউলরা বন্দনা ছাড়া মূল গান গাইতে পারে না, তেমনি মন্ত্রীরাও নেত্রীর বন্দনা ছাড়া কোনো বক্তব্য দিতে পারে না।
পুরুষদের ভালোবাসা অনেকটা খেলার মতো-ভাবনা, আবেগ আর রোমাঞ্চ মিশ্রিত। কিন্তু মেয়েদের ভালোবাসা ভিন্ন, তারা এটাকে খেলা হিসেবে নেয় না। যখন একটি মেয়ে ভালোবাসে, তখন সেই ভালোবাসার সঙ্গে স্বপ্ন জুড়ে যায়-একটি ঘর, একটি সংসার, এবং সেই সংসারের মধ্যে এক শিশুর উপস্থিতি। পুরুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন সে কেবল তার প্রেমিকাকেই দেখে, কিন্তু একজন মেয়ে তার প্রেমের সঙ্গে গোটা ভবিষ্যৎ দেখতে পায়।
প্রেম সম্পূর্ণভাবে একটি জৈবিক বিষয়। এটিকে কোনো অলৌকিক কিছু ভাবার প্রয়োজন নেই।
পৃথিবীর সব নারীদের মধ্যে এক ধরনের অলৌকিক ক্ষমতা থাকে। কোনো পুরুষ যদি তাদের প্রেমে পড়ে, তারা সঙ্গে সঙ্গে তা বুঝতে পারে। কিন্তু পুরুষদের এই ক্ষমতা নেই। যদি কোনো মেয়ে তার কানেকাছে মুখ এনে বলে, ‘আমি প্রচণ্ড কষ্টে আছি, আমি মরে যাচ্ছি’, তাহলেও পুরুষ বুঝতে পারে না। সে ভাবে, মেয়েটির হয়তো এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হয়েছে।
প্রেমের প্রকাশ ঘটে বিভিন্নভাবে, তার মধ্যে চুমু হলো অন্যতম। শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিরাও চুমু খায়। বিড়াল, শিম্পাঞ্জি কিংবা আরও অনেক প্রাণী তাদের অনুভূতি প্রকাশের জন্য চুমু খেয়ে থাকে। এতে মন হালকা হয়ে যায়।
মাতাল হতে শুধুমাত্র মদের প্রয়োজন হয় না। কেউ ভালো কবিতা পড়ে মাতাল হতে পারে, কেউ অসাধারণ সুর শুনে মাতাল হতে পারে, আর কেউ প্রেমে পড়ে মাতাল হতে পারে।
ভদ্র ছেলেদের প্রতি মেয়েরা প্রেম অনুভব করে না, বরং তাদের জন্য সহানুভূতি জন্মায়।
কঠোর রক্ষণশীল পরিবারে হুট করেই প্রেম হয়ে যায়। এসব পরিবারের মেয়েরা সাধারণত ছেলেদের সঙ্গে মিশতে পারে না। কিন্তু হঠাৎ যদি সুযোগ ঘটে যায়, তাহলে তারা সহজেই প্রেমের ফাঁদে আটকে যায়।
একটি মেয়ের জন্য তোমার নিখুঁত হওয়ার দরকার নেই, কারণ মেয়েরা কখনো নিখুঁত ছেলেদের প্রেমে পড়ে না।
প্রেমের প্রকৃতি আগুনের মতো। যেমন আগুন সবকিছু পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয়, তেমনি প্রেমও সবকিছু গ্রাস করে নেয়। বই: তন্দ্রাবিলাস -হুমায়ূন আহমেদ
মানুষ যখন একা থাকে, তখন আসলে সে একা নয়। তার মনের ভেতরে বহু অদৃশ্য মানুষ তাকে ঘিরে রাখে। সত্যিকারের একাকীত্ব অনুভব করতে হলে অনেক মানুষের ভিড়ে থাকতে হয়, কারণ ভিড়ের মাঝেই প্রকৃত নির্জনতা লুকিয়ে থাকে।
যারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে, তারা কখনোই উপার্জন বন্ধ করতে পারে না। তাদের জন্য অবসর নেওয়া এক ধরনের অসম্ভব ব্যাপার।
মানুষের আগ্রহকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।
একজন খারাপ মানুষ খুব দ্রুত একজন ভালো মানুষকে প্রভাবিত করে খারাপ বানিয়ে ফেলতে পারে।
সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে হলে একা বা দুইজন যথেষ্ট নয়, তিনজন লাগে। কারণ তিনজন থাকলেই পূর্ণতা আসে। Three is company.
অর্থ বোকা মানুষকেও বুদ্ধিমান বানিয়ে দেয়।
ভালো কাজ করার জন্য বেশি ভাবার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু খারাপ কাজ করতে হলে মানুষ অনেক ভেবেচিন্তে করে।
তুমি কি জানো, তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি? জানো না, তাই তো? আমিও জানি না। যদি ভালোবাসা তরল পানির মতো কিছু হতো, তাহলে সেই ভালোবাসায় পৃথিবী ডুবে যেত, এমনকি হিমালয় পর্বতও।
মাঝেমধ্যে চিন্তার জগতে হারিয়ে যেতে হয়। কারণ এই জগতটিই সবচেয়ে রহস্যময়।
হে মানব সন্তান, তোমার ভালোবাসা গোপন রাখো। তোমার প্রিয়জনদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করো, যাতে তারা তোমার আসল অনুভূতি বুঝতে না পারে। কিন্তু দুর্জনদের সঙ্গে করো মধুর ব্যবহার। নিজেকে লুকিয়ে রাখার এটাই প্রথম পাঠ। বই: হিমুর বাবার কথামালা -হুমায়ূন আহমেদ
ভালোবাসা হাততালির মতো, দুটো হাত না মিললে তালি বাজে না। একতরফা ভালোবাসায় কিছুই হয় না। বই: রূপা -হুমায়ূন আহমেদ
যে জিনিস সবসময় চোখের সামনে থাকে, মানুষ সেটাকে ভুলে যায়। যে ভালোবাসা প্রতিনিয়ত আমাদের ঘিরে রাখে, তার মূল্য আমরা বুঝি না। বরং যেটা হঠাৎ আসে, সেটাই আমাদের মনে থাকে। বই: বহুব্রীহি -হুমায়ূন আহমেদ
ভালোবাসা একটা পাখির মতো। যখন সে খাঁচায় থাকে, মানুষ তাকে মুক্ত করতে চায়। আর যখন সে মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তখন মানুষ তাকে খাঁচায় বন্দি করতে চায়।
অল্প বয়সের ভালোবাসা এক অন্ধ গণ্ডারের মতো। এটি এক দিকেই ছুটে চলে। যুক্তি, বুদ্ধি কিংবা ভালোবাসা দিয়েও একে থামানো যায় না।
ভালোবাসা ও ঘৃণা দুটোই মানুষের চোখে লেখা থাকে।
ভুল করে ভালোবাসা যায়, কিন্তু ভুল করে ভালোবাসাকে ভুলে যাওয়া যায় না।
মানুষ জন্মায় এমন মানুষদের ভালোবাসতে, যারা সেই ভালোবাসার যোগ্য নয়। প্রকৃত অর্থে, ভালোবাসা সবচেয়ে বেশি অপাত্রেই বিলিয়ে দেওয়া হয়।
সারা জীবনে কখনো ভালো না বেসে থাকার চেয়ে একবার ভালোবেসে তাকে হারানো অনেক ভালো।
মানবজাতির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো-তাকে সারাজীবন কিছু না কিছু খুঁজতে হয়। কখনো অর্থ, কখনো বিত্ত, কখনো সুখ, কখনো ভালোবাসা, আবার কখনো ঈশ্বর।
ঢাকা শহরের রাস্তায় চাকরি পড়ে থাকে না যে কেউ এসে কুড়িয়ে নেবে। বি.এ., এম.এ. পাস করা শত শত ছেলে শুকনো মুখে পথে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু চাকরির দেখা পায় না।
কোনো কিছু দেখে চমকে গেলেই যে তা সত্যি, তা নয়। যেমন ম্যাজিক শোতে আমরা দেখি, জাদুকর করাত দিয়ে একজন মানুষকে কেটে ফেলছে। ঘটনাটি চোখের সামনে ঘটলেও তা সত্য নয়।
একজন মানুষের অনেকগুলো চেহারা থাকে, আর প্রতিটি চেহারার সঙ্গে অন্য চেহারার কোনো মিল থাকে না।
মন খারাপের অনুভূতিটা একটা গ্যাসের মতো, যা বন্ধ ঘরে আটকে থাকে। কারও সঙ্গে সেই মন খারাপের কথা বললেই যেন জানালা খুলে যায়, আর গ্যাসটা বেরিয়ে গিয়ে মনটা হালকা হয়।
আমি মানুষ, আমি ভুল করবই। আমি কি ফেরেশতা যে আমার কোনো ভুল হবে না? বই: আমার আপন আঁধার -হুমায়ূন আহমেদ
মিথ্যা দুই ধরনের হয়। এক ধরনের মিথ্যা হঠাৎ করেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, আরেক ধরনের মিথ্যা চিন্তাভাবনা করে বলা হয়। হুট করে মিথ্যা বলতে গেলে কোনো পরিশ্রম হয় না, কিন্তু চিন্তা করে মিথ্যা বলা কঠিন কাজ।
এ যুগের মেয়েরা অনেক চালাক, তারা সহজ কথাকেও তিন রকম অর্থ করে মজা পায়।
মেয়েরা খুশি হলেও তা সহজে প্রকাশ করে না। একবার এক মেয়ে ইন্টারমিডিয়েটে প্রথম হয়েছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “খুশি তো?” সে ঠোঁট উল্টে বলল, “উঁহু, বাংলা সেকেন্ড পেপারে এত কম নাম্বার পেয়েছি, মার্কশিট দেখে কেঁদেছি!”
যাকে ভালো লাগে, তাকে চোখের আড়াল করতে মন চায় না। কিন্তু ভালোবাসার মানুষরা একসময় চোখের আড়ালে হারিয়ে যায়। বই: এই মেঘ, রৌদ্রছায়া -হুমায়ূন আহমেদ
সত্যিকারের ভালোবাসার একটা বৈশিষ্ট্য হলো, ভালোবেসে সুখ পাওয়া যায় না, কখনও না।
যদি ভালোবাসা তরল পানির মতো হতো, তাহলে সেই ভালোবাসায় পুরো পৃথিবী তলিয়ে যেত, এমনকি হিমালয়ও।
মানুষ তার আবেগ, ভালোবাসা আর ঘৃণার স্থান হিসেবে হৃৎপিণ্ডকে নির্ধারণ করেছে-হার্টই যেন সব অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু।
একঘেয়েমি কোনো আকর্ষণকেই টিকিয়ে রাখতে পারে না। মায়ের প্রতি মানুষের অন্ধ ভালোবাসাও একসময় একঘেয়েমির কারণে ফিকে হয়ে যায়।
পৃথিবীতে সাধারণত দু’ধরনের মানুষ খুন হয়-প্রবল ঘৃণার মানুষ এবং প্রচণ্ড ভালোবাসার মানুষ।
অভিমান ভালোবাসার মতোই, কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা আসলেই অদ্ভুত বিষয়। এগুলোকে কোনো নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে বাঁধা যায় না।
‘I love you’ যত সহজে বলা যায়, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলা তত সহজ নয়। কথাটা মুখের কাছে এসেও আটকে যায়। ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশের জন্য যদি কোনো ভিন্ন ভাষা থাকত, যেখানে শুধু চোখ দিয়ে বলা যেত!
পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে, কিন্তু ভালোবাসার অত্যাচার সবচেয়ে ভয়ংকর। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়।
মোটামুটি ভালোবাসা নিয়ে চল্লিশ বছর পাশাপাশি থাকার চেয়ে গভীর ভালোবাসা নিয়ে মাত্র চার বছর একসঙ্গে থাকা অনেক ভালো।
পুরুষেরা শরীরের ভালোবাসার জন্য সবসময় কাতর থাকে।
মেয়েরা সত্যিকার অর্থে অনেক শক্ত হয়। ছেলেরা বাইরে থেকে কঠিন মনে হলেও, ভেতরে তারা এতটা শক্ত নয়।
যে মানুষ নিঃশব্দে হাসে, তার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। দুই ধরনের মানুষ নিঃশব্দে হাসে-অতি উচ্চস্তরের সাধক এবং নিম্নশ্রেণীর পিশাচ স্বভাবের মানুষ।
গল্প-উপন্যাসে চোখের দেখাতেই প্রেম হয়, কিন্তু বাস্তবে প্রেমে পড়তে হলে একজনকে আরেকজনের কাছাকাছি আসতে হয়। বই: আশাবরী -হুমায়ূন আহমেদ
অস্বস্তি কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি। তারা দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এবং এমনকি পরম শত্রুকেও হাসিমুখে বলতে পারে-‘তারপর ভাই, কী খবর?’
আজকাল অধিকাংশ মা-ই তাদের মেয়েদের ভয় পায়।
রুচির মূল রহস্য লুকিয়ে আছে ক্ষুধায়। যেখানে ক্ষুধা নেই, সেখানে রুচিও থাকে না।
সব কষ্ট একসময় শেষ হয়ে যায়। মানুষের দুঃখ অনেকটা গ্যাস বেলুনের মতো-প্রথমে উঁচুতে উঠে থাকে, কিন্তু একসময় তা ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসে। বেলুনে গ্যাস থাকলেও, সেটাকে সবসময় উড়িয়ে রাখার শক্তি আর থাকে না।
সময় নিজেই নেতা তৈরি করে। সঠিক সময়ে সঠিক নেতা আবির্ভূত হয়।
আলো যেমন চারপাশ উজ্জ্বল করে তোলে, তেমনি একজন পবিত্র মানুষও তার চারপাশ আলোকিত করে তোলে।
রিকশায় চড়ার মধ্যে এক ধরনের রাজকীয় অনুভূতি আছে। সামান্য মাথা উঁচু করলেই আকাশ দেখা যায়।
হঠাৎ দেখলাম তোমার চোখে পানি! তখন আমার যে কী আনন্দ হলো! ভাবলাম, তোমাকে আরও কিছুদিন কষ্ট দিয়ে দেখি। কারণ আনন্দকে তীব্র করার জন্য কষ্টের প্রয়োজন আছে, তাই না?
মেঘ দেখতে সব মেয়েদেরই ভালো লাগে।
আমরা যাদের পছন্দ করি, তাদের কড়া কথাও আমাদের ভালো লাগে।
পুরুষ ও নারীর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। একজন পুরুষের রাগ করার যতটা অধিকার আছে, একজন নারীর ততটা নেই।
খুব ঘনিষ্ঠ দুজন মানুষের মাঝেও হয়তো একটা অদৃশ্য পর্দা থাকে। কেউ কারও একদম ভেতরটা দেখতে পারে না, কিছু না কিছু আড়াল রয়ে যায়।
ভদ্রলোকেরা লজ্জা পেলে দেখতে ভালো লাগে। চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়, ঠিকমতো কথা বলতে পারে না, তোতলাতে শুরু করে।
প্রেম বলে আসলে কিছু নেই, এটা শুধুই শরীরের আকর্ষণ। প্রকৃতি এই আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে তার সৃষ্টি বজায় রাখার জন্য।
মানুষের করুণা গ্রহণ করার মতো লজ্জা পৃথিবীর অন্য কোনো কিছুর মধ্যে নেই।
ঢাকা শহরের বাতাসে টাকাপয়সা ওড়ে। কেউ সেটা ধরতে পারে, কেউ পারে না।
মেয়েদের ওপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা উচিত না। কারণ ভুল করাই তাদের স্বভাব, তারা ভুল করবেই।
প্রেমিকা হাত ধরে রাখলে সেটা ছাড়ানো যায়, কিন্তু পুলিশের হাত ধরলে ছাড়ানো যায় না।
বিয়ে করার জন্য দরকার এমন একটি মেয়ে, যে খুব হাসিখুশি থাকবে, প্রচণ্ড রাগ করলেও পরক্ষণে ভুলে গিয়ে হাসবে। যে রাত ১টার সময় ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভিজতে আপত্তি করবে না।
দেশে প্রেমের অভাব নেই, অভাব শুধু ভাতের।
পুলিশের কি কিছু ঠিক আছে? এরা সবকিছুতেই জুলুম করে!
বুড়ো মানুষের রক্তে আর কোনো টান থাকে না। শরীরে মশা বসে ঠিকই, কিন্তু কামড়ায় না।
কারণে মিথ্যা বলার চেয়ে, অকারণে মিথ্যা বলা মানুষ বেশি পছন্দ করে।
একদল মানুষ আছে, যারা শুধু অন্যদের বিরক্ত করেই আনন্দ পায়।
মেয়েরা যদি জানত, গোসলের পর মাথায় তোয়ালে জড়িয়ে রাখলে তাদের সবচেয়ে সুন্দর লাগে, তাহলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বা বিয়ের আসরে তারা তোয়ালে পরে আসত।
বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গে কথা বলে আনন্দ পাওয়া যায়, আবার একেবারে বোকা মানুষের সঙ্গেও আনন্দ হয়। কিন্তু মাঝামাঝি বুদ্ধির মানুষের সঙ্গে কথা বললে কোনো আনন্দ নেই।