
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
ঢাকা: জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি প্রায় চূড়ান্ত করেছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তা অনুমোদনের পর দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তা জানাতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গণভোট কখন হবে, গণভোটের প্রশ্নের ধরন এবং সংসদের উচ্চকক্ষ কীভাবে গঠিত হবে-এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে। এরপর এ-সংক্রান্ত আদেশ ও অধ্যাদেশ জারি করবে সরকার। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সরকারের সিদ্ধান্ত আসলে কী, তা খোলাসা করতে চায়নি সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রগুলো।
তবে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে, এটা মোটামুটি চূড়ান্ত। গণভোটের প্রশ্ন সহজ করার চেষ্টা থাকবে। এ ছাড়া সংসদের উচ্চকক্ষ সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে গঠনের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার বাসভবন যমুনায় কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন-এমন উপদেষ্টারা এতে অংশ নেন। সেখানেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন–সংক্রান্ত সরকারের সিদ্ধান্তের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে তা জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
গত ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে সুপারিশ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো বিপরীতমুখী অবস্থান নেয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ পরামর্শ সরকারকে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তবে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেনি। ঐক্যবদ্ধ পরামর্শও দেয়নি।
ফলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জট ছোটানোর দায়িত্ব পড়ে সরকারের ওপর। সরকারের একাধিক উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা চালিয়েছেন। আজ সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হলে রাজনৈতিক দলগুলো তা কীভাবে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।
সরকারের চেষ্টার মধ্যেও বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। সব দলই সরকারকে চাপে রেখে নিজেদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে।
বিএনপি বলছে, জুলাই সনদের অনেক বিষয়ে তাদের ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) ছিল। বাস্তবায়নের সুপারিশে সে বিষয়টি রাখা হয়নি। এ ছাড়া দলটি একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট চায়। পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন চায় না।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দল সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট চায়। তাদের দাবি, সংসদের উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে গঠিত হতে হবে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে ১৪ নভেম্বর দেশব্যাপী জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে চাপ প্রয়োগ করলেও তাদের সঙ্গে উপদেষ্টাদের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ইতিবাচক ছিল। সরকারও চাইছে সব পক্ষের দাবি সমন্বয় করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে। ফলে আজ উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরও রাজনৈতিক দলগুলো ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে বলেই সরকারের প্রত্যাশা।
পালাবদল/এসএ