আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়। মঙ্গলবার বিকেলে এখানে নেতা-কর্মীদের মারধরে মৎস্যজীবী দলের এক নেতা খুন হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জ: আড়াইহাজার উপজেলায় বিএনপির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত দোকানঘরের ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনায় মৎস্যজীবী দলের এক নেতা মারা গেছেন।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের সালমদী বাজারে স্থানীয় বিএনপির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের (৫৭) বাড়ি উপজেলার সালমদী নয়াপাড়া গ্রামে। তিনি মাহমুদপুর ইউনিয়ন মৎস্যজীবী দলের সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ইউনিয়ন মৎস্যজীবী দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম তার দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
জাহাঙ্গীরের ছেলে মো. রাসেল জানান, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক দিন পর পাশাপাশি তিনটি দোকানঘর একত্র করে ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয় করা হয়। কার্যালয়টি করেছেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর ও তার চাচা মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তোতা মিয়া প্রধান। তোতা মিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য।
মো. রাসেল বলেন, তিনটি দোকানঘরের মধ্যে দুটি তার চাচার এবং একটি তার বাবার। দলীয় কার্যালয় করার পর দুটি দোকানঘরের ভাড়া নিয়মিত পরিশোধ করা হলেও তাদের ঘরের ভাড়া দেওয়া হচ্ছিল না। আজ তার বাবা ভাড়ার জন্য গেলে দলীয় কার্যালয়ে এ নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকের একপর্যায়ে দুই পক্ষ উত্তেজিত হলে তোতা মিয়া তার বাবাকে থাপ্পড় দেন। তখন তার বাবাও তোতা মিয়ার গায়ে হাত তোলেন। পরে তোতা মিয়ার ছেলে, ভাতিজাসহ অনুসারীরা এসে তার বাবাকে মারধর করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থানীয় দুজন নেতা বলেন, তোতা মিয়া জাহাঙ্গীরের গায়ে হাত তোলার পর তিনিও পাল্টা হাত তোলেন। হাতাহাতির বিষয়টি জানতে পেরে তোতা মিয়ার ছেলে খোকন প্রধান, ভাতিজা মো. জাহাঙ্গীরসহ তাদের অনুসারীরা এসে তাকে (জাহাঙ্গীর) মারধর করেন। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পর বিএনপি নেতা তোতা মিয়া ও মো. জাহাঙ্গীর এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। তোতা মিয়ার ছেলে খোকন প্রধান বলেন, “বৈঠকের একপর্যায়ে আমরা জানাই জাহাঙ্গীর হোসেনের মালিকানাধীন দোকানঘরটি আমরা ব্যবহার করব না। তখন জাহাঙ্গীর উত্তেজিত হয়ে কার্যালয়ের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। তখন বাবা উত্তেজিত হয়ে জাহাঙ্গীরকে একটি থাপ্পড় দেন। উনিও (জাহাঙ্গীর) বাবার গায়ে হাত তোলেন। ওখানে আরও মানুষ ছিল। পরে হাতাহাতির সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।” তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরকে মারধর করা হয়নি। হাতাহাতির সময় আঘাতে মারা গেছেন।
আড়াইহাজার থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, দোকানঘরের ভাড়া চাওয়াকে কেন্দ্র করেই তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে কার্যালয়ের ভেতরেই দোকানমালিককে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতা তোতা মিয়া প্রধান, তার ভাতিজা মো. জাহাঙ্গীর ও অনুসারী নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ পুলিশ পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।
পুলিশ জানায়, জাহাঙ্গীরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।