
রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে দলীয় সভায় বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা: আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ রাখা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
জাতীয় পার্টি সম্পর্কে এনসিপির এই নেতা বলেছেন, ৫ আগস্টের পর উচিত ছিল জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) দোসরদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা দেশবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, যদি কোনোভাবে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়, বাংলাদেশকে তারা আর বাংলাদেশ রাখবে না, ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত করবে।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এনসিপির এক দলীয় সভায় এ কথা বলেন এনসিপির নেতা আখতার হোসেন। এনসিপির ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) এবং ঢাকা জেলার এ সমন্বয় সভায় তিনি সমাপনী বক্তব্য দেন।
সভায় আখতার হোসেন বলেন, “কোনো পরিকল্পিত নির্বাচন, ডিজিএফআইয়ের পূর্বপরিকল্পিত নির্বাচন, বিদেশের চাপিয়ে দেওয়া কোনো ফলাফল, সাজানো কোনো নির্বাচন বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই না। আমরা বাংলাদেশে আর বিশ্বশক্তির রাজনীতি দেখতে চাই না, মারামারি-দলবাজির রাজনীতি দেখতে চাই না।”
এনসিপির চাপেই ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সংস্কারের বিষয়গুলো আড়াল হতে পারেনি দাবি করে এই নেতা বলেন, “এনসিপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তী ধাপে কমিশন আবার আলোচনায় বসে। সেই আলোচনায় শুরুতে আইনি ভিত্তির দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকের আপত্তির জায়গা থাকলেও শেষে এসে আমরা একমত হয়েছি যে একটা আদেশ জারি করা হবে, গণভোট হবে, সামনের সংসদকে দ্বৈত ক্ষমতা দেওয়ার মধ্য দিয়ে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অনেক দিন পার হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, কীভাবে আইন ভিত্তি দেওয়া হবে, সে বিষয়টা সরকার খোলাসা করতে পারেনি। এনসিপি যদি সেদিনই (১৭ অক্টোবর) সেই সনদে স্বাক্ষর করত, সেদিনই জুলাই সনদের অপমৃত্যু সংঘটিত হয়ে যেত। জুলাই সনদ যতটুকু জীবিত রয়েছে, তা এনসিপির দাবির কারণেই। এনসিপি এই সনদ বাস্তবায়নের পথ সুনির্দিষ্ট করতে চাওয়ার কারণেই জুলাই সনদ এখনো জনমানুষের কাছে উজ্জ্বল অবস্থায় রয়েছে।
অতিদ্রুত জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং বাস্তবায়নের পথ পরিষ্কার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আখতার। তিনি বলেন, “টেবিলের আলোচনাতেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। যদি জুলাই সনদকে আবারও নব্বইয়ের মতো কাগুজে দলিলে পরিণত করার কোনো চক্রান্ত হয়, বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব। আর কোনোভাবেই কোনো ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামোকে বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রকাঠামোতে স্থান দেওয়া হবে না।”
এ সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আসা সংশোধনী নিয়েও কথা বলেন এনসিপির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, “সংশোধনীতে অনেকগুলো ভালো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা যাতে টেকসই না হয়, সে ব্যাপারে একটা দল পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। যদি একটা দলের সিদ্ধান্তের কারণে আরও সংশোধনী বাতিল করা হয়, তাহলে আমরা বুঝে নেব, সরকার লন্ডনে যে বৈঠক করেছিল, সেই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাকে কারও কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, মানুষ এনসিপির ওপর আস্থা রেখেছে উল্লেখ করে সভায় দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে এনসিপির নীতিনির্ধারণী রাজনীতির কারণে। দেশ গঠনের যে পরিকল্পনাগুলো আছে, সেগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
ঢাকা জেলা ও মহানগরকে এনসিপির অভেদ্য দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলতে দলীয় শৃঙ্খলাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং ভদ্রোচিত উপায়ে রাজনীতি করতেও নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আখতার।
পালাবদল/এসএ