ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ফাইল ছবি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ১৫ মে ইস্তাম্বুলে মস্কোর সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে কিয়েভ রাজি। কিন্তু তার আগে রাশিয়াকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিতে হবে-এবং তা সোমবার থেকেই কার্যকর হতে হবে।
আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
এর আগে তিন বছরের যুদ্ধ শেষে মস্কোর কাছ থেকে আসা ‘সরাসরি শান্তি আলোচনার’ প্রস্তাবকে ‘ইতিবাচক’ বলে অভিহিত করেন জেলেনস্কি।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া প্রসঙ্গে ইউক্রেনের নেতার এ ধরণের ইতিবাচক মন্তব্য খুবই বিরল।
অপরদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, তিনি ‘আলোচনার আয়োজক হতে প্রস্তুত’। এরদোয়ান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোন কলে মন্তব্য করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার ‘সুযোগ এসেছে’।
সর্বশেষ ২০২২ সালের মার্চে মস্কো-কিয়েভ সরাসরি আলোচনা হয়েছিল। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে মস্কো।
ঘটনাচক্রে, ওই আলোচনাও ইস্তাম্বুলেই হয়েছিল। সে সময় একটি শান্তি চুক্তির খসড়া নিয়ে আলাপ হয়েছিল। চুক্তির শর্ত ছিল, কিয়েভ নিরপেক্ষ থাকবে এবং কখনোই ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেবে না। তবে ওই আলোচনা সাফল্যের মুখ দেখেনি।
এরপর থেকেই অব্যাহত রয়েছে রুশ আগ্রাসন। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে উভয় পক্ষে হাজারো প্রাণ ঝরে গেছে। পাশাপাশি, অসংখ্য ইউক্রেনীয় শহর ধ্বংস হয়েছে এবং মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কে বড় ধরণের ফাটল দেখা দিয়েছে।
এ মুহূর্তে মস্কোর দখলে রয়েছে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূখণ্ড। ক্রেমলিনের দাবি, তারা ইউক্রেনের চার প্রদেশে নিজেদের দখলে নিয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে জেলেনস্কি বলেন, “আর একদিনও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকার পেছনে কোনো যুক্তি নেই। আমরা আশা করব রাশিয়া যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করবে-স্বয়ংসম্পূর্ণ, টেকসই ও নির্ভরযোগ্য (যুদ্ধবিরতি)-যা আগামীকাল, ১২ মে থেকেই শুরু হবে। এবং তখনই ইউক্রেন বৈঠকের জন্য প্রস্তুত থাকবে।”
“অবশেষে রুশরা যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়েছে, যা একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত”, যোগ করেন তিনি।
“বিশ্ব এই মুহূর্তটির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছিল। এবং প্রকৃত অর্থে যেকোনো যুদ্ধ বন্ধের প্রথম ধাপ হলো যুদ্ধবিরতি।”
আগে যুদ্ধবিরতি, তারপর বাকি সব
কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের ভাষ্য একই-তাদের মতে, তিন বছরের এই সংঘাত বন্ধের কূটনৈতিক সমাধান পাওয়ার পূর্বশর্ত হল অবিলম্বে ও বিনা শর্তে যুদ্ধবিরতি চালু।
শনিবার কিয়েভ সফরে এসে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও পোল্যান্ডের মিত্ররা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আশীর্বাদ নিয়ে রাশিয়ার ওপর চাপ দেন। তারা দাবি করেন, রাশিয়াকে সোমবার থেকে বিনা শর্তে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে বিরতি দিতে হবে।
জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক ও জেলেনস্কির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, “আগে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি, তারপর বাকি সবকিছু।”
“যুদ্ধবিরতি হলো যুদ্ধ বন্ধের প্রথম ধাপ এবং এই উদ্যোগ নিশ্চিত করবে, রাশিয়া হত্যাকাণ্ড বন্ধে ইচ্ছুক।”
গতকাল স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ১টায় ক্রেমলিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিনকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও জবাব দেননি তিনি।
বরং তিনি ২০২২ সালে অসমাপ্ত থাকা ইস্তাম্বুল আলোচনা আবারও শুরুর সুপারিশ করেন।
“আমরা কিয়েভকে ২০২২ সালের আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি, যা তারা শেষ করেনি। এবং আমি জোর দিয়ে বলছি, এ ক্ষেত্রে কোনো পূর্বশর্ত থাকছে না“, যোগ করেন পুতিন।
পুতিন বলেন, “আমাদের প্রস্তাব হলো অনতিবিলম্বে বৃহস্পতিবার ১৫ মে থেকে ইস্তাম্বুলে (দরকষাকষি) শুরু করা হোক“।
পুতিন আরও জানান, ইস্তাম্বুলে নতুন করে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং এতে রাশিয়া সম্মতিও দিতে পারে। বিষয়টিকে তিনি আলোচনার বাইরে রাখবেন না।
তবে তিনি আরও দাবি করেন, ইউক্রেনের পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকরা “রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে“ আগ্রহী। তিনি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা সরাসরি উল্লেখ না করলেও ইউরোপের “বেঁধে দেওয়া সময়সীমা“ ও “রাশিয়া-বিরোধী অপপ্রচারের“ প্রতি নিন্দা জানান।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান রোববার পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “টেকসই সমাধান নিশ্চিতের লক্ষ্যে আলোচনার আয়োজন করতে আঙ্কারা প্রস্তুত।”
ইউক্রেন থেকে ফিরে ফরাসি নেতা ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, তিনি আশা করছেন কোন ধরণের শর্ত জুড়ে না দিয়েই রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেবে।
নবনির্বাচিত জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্জ জানান, রাশিয়ার সরাসরি আলোচনা করতে চাওয়া ‘ভালো লক্ষণ’ তবে মস্কোকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে এখনো অনেক দেরি রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “সম্ভবত এটা রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্য খুব ভালো একটি দিন ছিল। ”তিনি যুদ্ধ বন্ধে দুই দেশের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।