যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ও পরে স্যাটেলাইটে তোলা ইরানের ফর্দো ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনার দৃশ্য। কোম, ইরান, ২০ জুন ২০২৫ (বাঁয়ের ছবি) ও ২২ জুন ২০২৫
বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু দেশটির সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতের কী হয়েছে, তা নিয়ে জাতিসংঘ পরিদর্শকদের সামনে জটিল এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের মজুত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কিছু অংশ পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি মাত্রায় ছিল।
পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার আগে ইরান কি সেগুলো গোপনে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলেছে, নাকি সবই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে?
গত সপ্তাহান্তে ইরানের বড় তিন পারমাণবিক স্থাপনা-ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংকার–বিধ্বংসী বোমার ব্যবহার করেছে, বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায় ভূপৃষ্ঠের অনেক গভীরে অবস্থিত ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে এ বোমা ব্যবহার করা হয়। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোলাবারুদের আঘাতে ইরানের ওই সব স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু ট্রাম্পের এ দাবির সঙ্গে একমত হতে পারছে না আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।
এ হামলা ইরানের জন্য হয়তো তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত গোপন করে ফেলার একটি আদর্শ সুযোগ তৈরি করেছে। এখন এ বিষয়ে আইএইএর যেকোনো তদন্ত সম্ভবত আরও সময়ক্ষেপণকারী ও জটিল হয়ে যাবে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থাটি তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নজরদারি করে। সংস্থাটি বলেছে, ফর্দোতে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত এ স্থাপনা ইরানের সবচেয়ে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র।
রোববার আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, হামলায় ফর্দোর ভেতরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত সংবেদনশীল সেন্ট্রিফিউজগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। তবে ইরানের ৯ টন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম-যার মধ্যে ৪০০ কেজির বেশি পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি মাত্রায় সমৃদ্ধ, তা ধ্বংস হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তেমন কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই।
পশ্চিমা দেশগুলো এখন মরিয়া হয়ে ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামগুলো কোথায় গেল, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে জড়িত বর্তমান ও সাবেক এক ডজনের বেশি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে। তারা বলেছেন, এ বোমাবর্ষণ ইরানের জন্য হয়তো তাদের ইউরেনিয়াম মজুত গোপন করে ফেলার একটি আদর্শ সুযোগ তৈরি করেছে। এখন এ বিষয়ে আইএইএর যেকোনো তদন্ত সম্ভবত আরও সময়ক্ষেপণকারী ও জটিল হয়ে যাবে।
২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আইএইএর প্রধান পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অলি হেইনোনেন বলেন, এ অনুসন্ধানে সম্ভবত ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো থেকে উপাদান উদ্ধার, ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও পরিবেশগত নমুনা সংগ্রহের মতো জটিল প্রক্রিয়া জড়িত থাকবে, যা অনেক সময়সাপেক্ষ।
হেইনোনেন আরও বলেন, ধ্বংসস্তূপের এমন জায়গায় উপাদান থাকতে পারে, যেখানে পৌঁছানো কঠিন কিংবা সেগুলো হয়তো ধ্বংসস্তূপের নিচে ছড়িয়ে পড়েছে অথবা বোমাবর্ষণের সময় হারিয়ে গেছে।
আইএইএর দায়িত্ব পালনের সময় অলি হেইনোনেন ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ওয়াশিংটনে স্টিমসন সেন্টার থিঙ্কট্যাংকে কর্মরত।
আইএইএর নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী, ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মাত্রায় সমৃদ্ধ ৪০০ কেজির বেশি ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে, যা অস্ত্র তৈরি মানের খুব কাছাকাছি। অস্ত্র তৈরির জন্য প্রায় ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন হয়। ইরানের ওই মজুত নয়টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট।
এ মজুতের সামান্য একটি অংশের হিসাব না পাওয়া গেলে সেটাও গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হবে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য। যারা মনে করে, ইরান এখনই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করলেও এ অস্ত্র তৈরির পথ অন্তত খোলা রাখতে চাইছে।
আইএইএর প্রধান গ্রোসি বলেন, ১৩ জুন ইসরায়েলের প্রথম হামলার দিন ইরান তাকে জানিয়েছিল, তারা তাদের পারমাণবিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণ রক্ষায় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এ বিষয়ে ইরান বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি জানিয়ে গ্রোসি আরও বলেন, এতেই মনে হচ্ছে, হয়তো ইরান উপকরণগুলো সরিয়ে নিয়েছে।
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, স্যাটেলাইটের ছবিতে হামলার আগে ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার বাইরে ট্রাকসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনের একটি সারি দেখা গেছে। এ থেকে ইঙ্গিত মিলছে, হয়তো সেখানে থাকা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সম্পৃক্ত এক পশ্চিমা কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফর্দোতে থাকা অধিকাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হামলার কয়েক দিন আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে, যেন তারা আগেভাগেই জানত যে হামলা হতে চলেছে।
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, স্যাটেলাইটের ছবিতে হামলার আগে ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার বাইরে ট্রাকসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনের একটি সারি দেখা গেছে। এ থেকে ইঙ্গিত মিলছে, হয়তো সেখানে থাকা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তবে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ বলেছেন, এ–সংক্রান্ত কোনো গোয়েন্দা তথ্য তার জানা নেই। ট্রাম্পও ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত সরিয়ে ফেলা নিয়ে উদ্বেগ পুরো উড়িয়ে দিয়েছেন।
ফক্স নিউজ চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, “ইরানিরা কিছুই সরাতে পারেনি। এটা করা খুবই বিপজ্জনক। এটা খুব ভারী; খুব, খুবই ভারী। এ কাজ করা খুব কঠিন। তার ওপর আমরা খুব একটা আগেভাগে তাদের (সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে) জানাইনি। তারা জানত না যে আমরা আসছি, ঠিক তখন, তখনই জানতে পেরেছিল।”
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর রয়টার্সকে ট্রাম্পের সর্বসাধারণের সামনে দেওয়া বক্তব্য দেখতে বলেছে।
আরেক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেন, ইউরেনিয়াম মজুত কী অবস্থায় আছে, তা যাচাই করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তিনি আইএইএ ও তেহরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের কথা উল্লেখ করেন। যার মধ্যে রয়েছে ইরানের পক্ষ থেকে অবৈধ স্থানে পাওয়া ইউরেনিয়ামের নিদর্শনগুলো বিশ্বাসযোগ্যভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হওয়া।
ওই কূটনীতিক বলেন, এটা চোর-পুলিশ খেলা হতে চলেছে।
ইরানের দাবি, পরিদর্শক সংস্থা তাদের ওপর যত শর্ত আরোপ করেছিল, তার সবই তারা মেনে চলছিল।
এখন সবকিছু অস্পষ্ট হয়ে গেছে
ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে ইসরায়েল দেশটিতে হামলা শুরু করার আগে আইএইএ নিয়মিতভাবে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় প্রবেশাধিকার পেত এবং ২৪ ঘণ্টা সেখানে থেকে নজরদারি করতে পারত।
পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার প্রতিরোধে গৃহীত আন্তর্জাতিক অস্ত্রবিস্তার চুক্তির (এনপিটি) অংশ হিসেবে আইএইএ এটা করত। ১৯১টি দেশ এ চুক্তিতে সই করেছে, যাদের মধ্যে ইরান রয়েছে।
এখন ধ্বংসস্তূপ আর ছাইয়ের নিচে এসব চাপা পড়ে গেছে।
তার ওপর ইরান তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের হুমকি দিয়েছে। দেশটির পার্লামেন্টে এ–সংক্রান্ত বিষয়ে ভোট হয়েছে। অনেক দেশ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলাকে অবৈধ মনে করে।
ইরান বারবার বলেছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের লক্ষ্য বেসামরিক, অস্ত্র তৈরি নয়।
মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যও বলেছে, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে—এমন কোনো প্রমাণ তাদের হাতে নেই। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার আগে নিজেদের গোয়েন্দা তথ্য সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে গেছেন।
এনপিটির সদস্য হিসেবে ইরানকে তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতের হিসাব দিতে হয়। এরপর আইএইএর দায়িত্ব সেই হিসাব যাচাই করা, যার মধ্যে পরিদর্শনও অন্তর্ভুক্ত।
তবে সংস্থাটির ক্ষমতা সীমিত। তারা ইরানের ঘোষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় পরিদর্শন করতে পারে; কিন্তু অঘোষিত স্থানে আকস্মিক পরিদর্শন চালাতে পারে না।
আইএইএ জানিয়েছে, ইরানের কাছে কতসংখ্যক অতিরিক্ত সেন্ট্রিফিউজার রয়েছে, তা তাদের অজানা এবং এগুলো কোথায় সংরক্ষিত আছে, সে সম্পর্কেও জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থাটির কোনো ধারণা নেই। এসব সেন্ট্রিফিউজার ব্যবহার করে ইরান নতুন বা গোপন সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে ইসরায়েল দেশটিতে হামলা শুরু করার আগে আইএইএ নিয়মিতভাবে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় প্রবেশাধিকার পেত এবং ২৪ ঘণ্টা সেখানে থেকে নজরদারি করতে পারত। এ কারণে এমন উপাদান খুঁজে বের করাটা অতিমাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, এগুলো দিয়ে আরও সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করা সম্ভব, বিশেষ করে যেগুলো অস্ত্র তৈরির পর্যায়ের খুব কাছাকাছি হতে পারে।
আইএইএ যেসব দেশের কাছ থেকে গোয়েন্দা তথ্য পেতে পারে বা পায়, তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলও রয়েছে। তবে সংস্থাটি বলেছে, তারা কোনো তথ্যই সরাসরি গ্রহণ করে না, প্রতিটি তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখে।
কর্মকর্তারা বলেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রই ইরানের ইউরেনিয়াম সংরক্ষণের স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এখন এ দুই দেশই সবার আগে ইরানের বিরুদ্ধে ইউরেনিয়াম মজুত গোপন রাখা বা আবার সমৃদ্ধকরণ শুরুর অভিযোগ আনতে পারে।
ছায়ার পিছু ধাওয়া
গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিশাল মজুত আছে-এমন অভিযোগ করে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ওই হামলার আগে ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিশাল মজুতের খোঁজ পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন জাতিসংঘের পরিদর্শকেরা।
ওই ঘটনাই দেখিয়ে দিয়েছিল, যখন নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকে না, তখন কোনো বিদেশি শক্তির গোপন মজুত সম্পর্কে দাবির সত্যতা যাচাই করা কতটা কঠিন হতে পারে।
ইরাকের মতো এখানেও পরিদর্শকদের শেষমেশ ছায়ার পিছু ধাওয়া করতে হতে পারে।
তৃতীয় আরেক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, যদি ইরান তাদের ৪০০ কেজি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সম্পর্কে তথ্য দিতে স্বচ্ছতা দেখায়, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু যদি না দেখায়, সে ক্ষেত্রে কেউ–ই কোনো দিন নিশ্চিত হতে পারবে না, আসলে সেগুলোর কী হয়েছে।
আইএইএকে তাদের ১৮০ সদস্যরাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তারা নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারছে না। তারা যেমন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ, এটা বলতে পারছে না। আবার তাদের হাতে ইরানের সমন্বিত অস্ত্র কর্মসূচির পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণও নেই।
এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র আইএইএর যাচাই-বাছাই ও নজরদারি কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়ে তেহরানকে অনুরোধ করেছে, দেশের মধ্যে যেন তাদের পরিদর্শকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
আইএইএর মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতিটি গ্রাম সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হিসাব রাখা সত্যিই কঠিন। এ জন্য দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে।
আইএইএ বলেছে, ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক ক্ষেত্রটির ওপরের অংশ (যুক্তরাষ্ট্রের) হামলায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। নাতাঞ্জে দুটি পারমাণবিক স্থাপনায় ৬০ শতাংশের ওপরে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন ও মজুত করা হতো। ভূপৃষ্ঠের ওপরের স্থাপনাটি অপেক্ষাকৃত ছোট। এটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অর্থ, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ছোট একটি অংশ হয়তো ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফর্দো মাটির গভীরে স্থাপিত ইরানে সবচেয়ে গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এখানেই ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশ উৎপাদিত হতো। গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে হামলা চালায়। হামলায় ব্যবহার করা হয় বাংকার–বিধ্বংসী শক্তিশালী বোমা। হামলায় ভূগর্ভস্থ স্থাপনাটির কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী
ইসফাহানের ভূগর্ভস্থ যে এলাকায় বোমাবর্ষণ করা হয়েছে, সেখানে ইরানের সবচেয়ে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশ রাখা ছিল। এতে ওই এলাকায় প্রবেশের টানেলের মুখগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে আইএইএ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনে যেতে পারেনি। ফলে বাইরের বিশ্বের সামনে প্রশ্নের সংখ্যা অসংখ্য, যার সামান্য উত্তরই জানা আছে।
গত বুধবার গ্রোসি বলেন, বোমাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোর অবস্থা আইএইএর পরিদর্শকদের কাজ কঠিন করে তুলবে। কারণ, সেখানে ধ্বংসস্তূপ আছে, অবিস্ফোরিত গোলাবারুদও থাকতে পারে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, এতে সময় লাগবে।
আইএইএর সাবেক প্রধান পরিদর্শক হেইনোনেন বলেন, সংস্থাটির পরিদর্শকেরা স্বাধীনভাবে কী যাচাই করতে পেরেছেন, সে বিষয়ে যথাসময়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে তথ্য প্রকাশ করতে পারা আইএইএর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে, সেখানে তারা কোনো কিছু নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না কিংবা যা এখনো তাদের অজানা রয়ে গেছে—সবই তাদের স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে।
তবেই কেবল সদস্যরাষ্ট্রগুলো নিজেরা ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে পারবে বলে মনে করেন হেইনোনেন।