বৃটিশ পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি এবং বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক বারবার নিজেকে শুধুমাত্র বৃটিশ নাগরিক বলে দাবি করলেও তার নামে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে।
দৈনিক প্রথম আলো এবং বৃটিশ দৈনিক দ্য টাইমসের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে যে, টিউলিপ বাংলাদেশের একজন নিবন্ধিত ভোটার এবং বাংলাদেশি পাসপোর্টও করেছিলেন তিনি।
প্রথম আলো বৃটিশ দৈনিক দ্য টাইমস-এর সঙ্গে যৌথভাবে টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়ে কাজ করেছে। তারা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে যাচাই করে এসব নথির সত্যতা পেয়েছে।
নথিপত্রে দেখা যায়, টিউলিপ সিদ্দিকের নামে ২০১১ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হয়। এনআইডিতে তিনি ঠিকানা হিসেবে তার খালা, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কের সুধা সদন বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করেছেন।
টিউলিপের এনআইডিতে পেশা হিসেবে বেসরকারি চাকরি এবং জন্মস্থান ঢাকা উল্লেখ করা হয়েছে। তার এনআইডিতে 'মাইগ্রেটেড' বা 'অভিবাসী' ট্যাগও রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভারে তার বাংলাদেশি পাসপোর্টের নম্বরও উল্লেখ আছে।
গত ১২ আগস্ট টিউলিপ সিদ্দিকের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউডের একজন মুখপাত্র যুক্তরাজ্যের 'ফিন্যান্সিয়াল টাইমস'-কে জানান, টিউলিপ কখনো বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি পাননি এবং শৈশবের পর থেকে তার কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টও ছিল না।
গতবছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন কমিশন (ইসি) শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ তাদের পরিবারের ১০ সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র 'লক' করে দেয়, যার মধ্যে টিউলিপের এনআইডিও ছিল।
প্রথম বাংলাদেশি পাসপোর্ট হয় ১৯ বছর বয়সে
বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টিউলিপ সিদ্দিকর ১৯ বছর বয়সে অর্থাৎ ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে তার নামে একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পাসপোর্টটি ইস্যু করে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
প্রথম পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ২০১১ সালে টিউলিপ ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে তার দ্বিতীয় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। এরপর তার নামে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পাসপোর্ট অফিসের তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য অনুসারে, দ্বিতীয় পাসপোর্টে তার জাতীয়তা বাংলাদেশি এবং জন্মস্থান লন্ডন হিসেবে উল্লেখ আছে।
টিউলিপের পাসপোর্টের ফরমে জরুরি যোগাযোগের জন্য তার চাচা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের নাম রয়েছে। তিনি শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
২০১১ সালে যখন টিউলিপের দ্বিতীয় পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়, তখন তার খালা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এই পাসপোর্টের মেয়াদ ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি শেষ হয়ে যায়।
প্রমাণ নেই নাগরিকত্ব ত্যাগের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কেউ পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র ধারণ করলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও টিউলিপ যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন, তার বাবা-মা দুজনই বাংলাদেশের নাগরিক। এ কারণে তিনি বৃটিশ ও বাংলাদেশি-উভয় দেশের নাগরিকত্ব ধারণ করতে পারেন, যেহেতু উভয় দেশেই দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণের আগে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়। তবে যুক্তরাজ্যে এর প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশ সরকারের বিধি অনুযায়, একজন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশি নাগরিক থাকেন যতক্ষণ না তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের প্রতি তার আনুগত্য প্রত্যাহার না করেন। বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, “যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তি দুই দেশের নাগরিক হতে পারেন। এতে আইনি কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তিনি সেটা স্বীকার করছেন না। বোঝা যাচ্ছে টিউলিপ সিদ্দিক অসত্যের আশ্রয় নিয়েছেন।”