বুধবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০ পৌষ ১৪৩২
বুধবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
 
সারাবাংলা
স্টেশনে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ২৮ বছর পর ফিরে পেলেন বাবা-মা





দ্য ডেইলি স্টার
Sunday, 31 August, 2025
9:35 PM
 @palabadalnet

উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেফরা গ্রামে ২৮ বছর পর বাবার সঙ্গে ছেলের দেখা। ছবি: সংগৃহীত

উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেফরা গ্রামে ২৮ বছর পর বাবার সঙ্গে ছেলের দেখা। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রাম: ঘটনাটি প্রায় তিন দশক আগের, ১৯৯৭ সালের। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার আব্দুল লতিফ ও আমেনা বেগমের ৯ বছরের শিশু সাইফুল। অভাবের সংসারে একটুখানি সচ্ছলতার আশায় এক প্রতিবেশীর হাত ধরে চট্টগ্রামের পথে পা বাড়ায় সে। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় ছিল না। যাত্রা পথে স্টেশনে কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়েছিল ট্রেন। সেই স্টেশনে নামতেই তাকে ফেলে চলে যায় ট্রেন। পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ভাটিয়ারি স্টেশনের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় হয় তার। তবে ঠিকানা জানা না থাকায় সেখান থেকে আর ফিরতে পারেনি।

এরপর কেটে গেছে ২৮টি বছর। সাইফুল হয়তো নিজেও হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে কাকতালীয় এক সাক্ষাতে বদলে যায় সবকিছু। গ্রামের এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হলে ভাঙা ভাঙা স্মৃতি থেকে বাবা-মায়ের নাম আর গ্রামের নামটি বলতে পারেন তিনি। এর সূত্র ধরেই গত সপ্তাহে গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেফরা গ্রামে বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে পারেন তিনি।

ছেলের হাত ধরে বাবা আব্দুল লতিফের চোখ থেকে ঝরছিল আনন্দাশ্রু। তিনি বলেন, “ছেলেকে দেখেই চিনতে পেরেছি। তার জন্য কত নামাজ পড়েছি, কত কেঁদেছি! আল্লাহ আজ আমার ডাক শুনেছেন।”

ছেলের হাত ধরে মা আমেনা বেগমের বলেন, “অভাবের জন্যি বাচ্চাটাক পাঠাইছিলাম। সেই যে হারালো, আর খোঁজ পাই নাই। কত জায়গায় যে খুঁজছি, কবিরাজের কাছে গেছি, আল্লাহর কাছে দিন-রাত কানছি। ২৮ বছর পর আল্লাহ আমার বুকের ধন ফিরাইয়া দিছে, এর চেয়ে বড় সুখ আর কী আছে!”

সাইফুলের বড় ভাই মাহফুজার রহমান বলেন, “ভাইকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। স্টেশনের চায়ের দোকানেই ওকে খুঁজে পাই।”

সাইফুলের ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়তেই আব্দুল লতিফের ছোট্ট উঠান হয়ে ওঠে উৎসবের কেন্দ্র। শত শত মানুষ একনজর তাকে দেখতে ভিড় করেন। তাকে দেখতে এসে অশ্রুসিক্ত হন গ্রামবাসীরাও।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, “সাইফুলকে হারিয়ে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। ছেলে ফিরেছে, কিন্তু তাদের দারিদ্র্য কাটেনি।”

পরিবারটির দারিদ্র্যের কথা প্রশাসনেরও কানে গেছে। উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, “এই পুনর্মিলন অত্যন্ত আনন্দের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com