ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শরিক দলগুলোর সঙ্গে ১০টি আসনে নির্বাচনী সমঝোতা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এর মধ্যে সাতটি আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেবে না; শরিক নেতারা সেখানে নিজ নিজ প্রতীকে লড়বেন। বাকি তিনটি আসনের প্রার্থীরা বিএনপিতে যোগ দিয়ে “ধানের শীষ“ নিয়ে নির্বাচন করবেন।
আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব তথ্য জানান। এ সময় শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি যে ৭ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে না
সমঝোতা অনুযায়ী, সাতটি আসনে বিএনপি নিজেদের কোনো প্রার্থী রাখবে না। এই আসনগুলোতে শরিক দলের নেতারা নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন। আসনগুলো হলো-নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২), গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী-৩) ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন (ঝিনাইদহ-৪), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক (ঢাকা-১২), জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর-১) এবং ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা রশিদ বিন ওয়াক্কাস (যশোর-৫)।
উল্লেখ্য, ঢাকা-১২ আসনে এর আগে বিএনপি সাইফুল আলম নীরবকে মনোনয়ন দিয়েছিল। শরিকদের সঙ্গে সমঝোতার কারণে এখন এই আসনে সাইফুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ধানের শীষ প্রতীকে ৩ নেতা
তিনটি আসনে জোটের শরিক নেতারা বিএনপির প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে লড়বেন। এর মধ্যে এলডিপির (অলি আহমদ) মহাসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দেওয়া রেদোয়ান আহমেদ কুমিল্লা-৭ আসনে এবং এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ঢাকা-১৩ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
এ ছাড়া নড়াইল-২ আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ধানের শীষ নিয়ে ভোট করবেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনে তার দলের নিবন্ধন না থাকায় আইনি বাধা এড়াতে তিনি বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন রেদোয়ান আহমেদ। আজ বিকেলে গুলশান কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে তিনি দলে যোগ দেন।
রেদোয়ান আহমেদকে স্বাগত জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তার বিএনপিতে ফেরা ‘ছেলের ঘরে ফেরার“’মতো। এতে বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে।
যোগদান অনুষ্ঠানে রেদোয়ান আহমেদ বলেন, এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় রাজি হননি। তবে দলের অধিকাংশ স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তৃণমূল নেতাকর্মী তার সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, “অলি আহমদ নির্বাচন করুন বা না করুন, আমি বিএনপির সমঝোতা অনুযায়ী নির্বাচন করব।”
জমিয়ত পেয়েছে ৪ আসনে ছাড়
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে চারটি আসনে সমঝোতার কথা জানান। আসনগুলো হলো-সিলেট-৫ (উবায়দুল্লাহ ফারুক), নীলফামারী-১ (মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (জুনায়েদ আল হাবীব) ও নারায়ণগঞ্জ-৪ (মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী)। তারা দলীয় প্রতীক “খেজুরগাছ“ নিয়ে নির্বাচন করবেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জুনায়েদ আল হাবীবকে ছাড় দেওয়া হলেও সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সমঝোতা হওয়া আসনগুলোতে বিএনপির কোনো নেতা (স্বতন্ত্র বা অন্য কোনোভাবে) প্রার্থী হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তিনি বলেন, একটি মহল দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র করছে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি এরই মধ্যে ২৭২টি আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। অন্য ২৮টি থেকে সমঝোতার মাধ্যমে শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে চারটি আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আসন চারটি হলো সিলেট-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, নীলফামারী-১ ও নারায়ণগঞ্জ-৪। আজ আরও ১০টি আসন ছেড়ে দেওয়া হলো।
পালাবদল/এসএ