শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫ ৩ শ্রাবণ ১৪৩২
শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
 
রাজনীতি
সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আবার ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে: জামায়াত





নিজস্ব প্রতিবেদক
Thursday, 17 July, 2025
6:38 PM
 @palabadalnet

আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে জামায়াতে ইসলামীর সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে জামায়াতে ইসলামীর সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সাত দফা দাবিতে ১৯ জুলাই (শনিবার) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করা। এ প্রসঙ্গে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জামায়াত মনে করে, সংস্কার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন হলে আবার ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে। তাই কোনো ষড়যন্ত্র যাতে সংস্কারকে বিঘ্নিত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবি নিয়ে কথা বলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, জামায়াতের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা, নির্বাচনের আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, জুলাই আহতদের চিকিৎসা, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তার দল জামায়াত মনে করে, সংস্কার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন হলে পুনরায় ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে। তাই কোনো ষড়যন্ত্র যাতে সংস্কারকে বিঘ্নিত করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

জুলাই শহীদ ও আহতদের অবদানের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, শহীদ এবং আহতদের পুনর্বাসন এখনো শেষ হয়নি। তাদের চোখের পানি, তাদের কান্না, তাদের আহাজারি এখনো চলছে। অনেকেই বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় আছেন। অনেকেই হাসপাতালে আছেন। কিছু আহত বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও আমরা জাতীয় সমাবেশ থেকে জানাব। 

পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আমরা আগেই জানিয়েছি। আমাদের সমাবেশ থেকে এই দাবি আবারো জানানো হবে। আমরা মনে করি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কালো টাকা ও পেশি শক্তির দৌরাত্ম্য কমবে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে। সংসদে অভিজ্ঞ ও যোগ্য লোকদের যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। একটি কোয়ালিটি সম্পন্ন সংসদ গঠিত হবে। 

তিনি বলেন, আমাদের এক কোটিরও বেশি প্রবাসী রয়েছেন। তাদের ভোটপ্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সরকারকে লিখিতভাবে বিষয়টি আগেই জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এব্যাপারে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। 

তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের যুক্তিও আমরা এই সমাবেশ থেকে জাতির সামনে তুলে ধরব। আমরা দেখতে পাচ্ছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। নিষ্ঠুরভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ভিন্নমত সহ্য করা হচ্ছে না। এইসব সমস্যা সমাধানে আমাদের সমাবেশ থেকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ তাদের মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরবেন।” তিনি বলেন, “এইসব গণদাবি, গণআকাক্সক্ষাগুলো সামনে রেখেই আগামী ১৯ জুলাই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে।” 

তিনি জানান, জাতীয় সমাবেশ সফল করে তোলার লক্ষ্যে একটা মূল বাস্তবায়ন কমিটি এবং এর অধীনে আরও ৮টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, “সারাদেশে লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন এর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, শপিং মলসহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমান মাইকের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সারাদেশে পাড়া ও মহল্লায় মহল্লায় মিটিং ও মিছিল চলছে। ভ্রাম্যমান সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গানের সুর ও নাটিকার মাধ্যমে সমাবেশের বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “২০টি পয়েন্টে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করবে। স্বেচ্ছাসেবক পরিচয়ের জন্য আলাদা ড্রেস থাকবে। ঢাকা শহরের বাইরে থেকে ঢাকা এবং পাশ্ববর্তী জেলা থেকে যারা আসবেন তাদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য আমরা কমপক্ষে ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছি। আমরা সারাদেশ এবং পাশ্ববর্তী জেলা থেকে যেভাবে সাড়া পাচ্ছি তাতে রেলপথ, নৌপথ এবং সড়কপথ সবপথেই এই সমাবেশের দিকে মানুষের ঢাল নামবে রাজধানী অভিমুখে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি এই পার্কিং স্থানগুলো কিভাবে সেইফ রাখা যায়। সেখানেও আমাদের স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকে ভিতরে এবং বাইরে মিলিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আমাদের ১৫টি মেডিকেল বুথ থাকবে। একাধিক বেড সম্বলিত প্রতিটি বুথে দুই জন করে ডাক্তার থাকবেন।  সমাবেশের কার্যক্রমে আইটি টিম এবং লাইভ প্রচারের জন্য ড্রোন টু ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে সমাবেশে উচ্চমানের ভিডিও ধারণ এবং সমাবেশস্থলে এলইডি স্ক্রিনে প্রদর্শন করা এবং ফেসবুক, ইউটিউবসহ সকল সামাজিক মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার করা হবে। জনসভার শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজধানীর বাইরে থেকে আগত সাধারণের জন্য সড়ক, নৌ ও রেলপথে নিরাপদে যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য আমরা মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেছি। আমাদের নেতৃবৃন্দ তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে লিখিতভাবে প্রয়োজনীয় চাহিদা জানিয়েছেন এবং তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ”

সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে সম্ভাব্য দুর্ভোগের জন্য সংবাদ সম্মেলন থেকে নগরবাসীর কাছে আগাম ক্ষমা প্রার্থনা করে দলটি। দুর্ভোগের বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য তারা নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

দুর্ভোগ কিছুটা কমাতে জামায়াত কোনো রাস্তায় সমাবেশের আয়োজন করেনি বলে উল্লেখ করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, এই সমাবেশ হয়তো নগরজীবনে কিছুটা দুর্ভোগ ও যানজট সৃষ্টি করতে পারে। তারা জামায়াতের পক্ষ থেকে দেশবাসী, নগরবাসীর কাছে অগ্রিম বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ আয়োজনকে ব্যয়বহুল বলে উল্লেখ করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, তারা মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণে কাজ করছেন। কিন্তু গত ৫৪ বছরে দল হিসেবে জামায়াত সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দল রাস্তায় সমাবেশ করে। কিন্তু মানুষের কিছু দুর্ভোগ কমাতে ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও তারা মাঠে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শনিবার বেলা দুইটায় মূল সমাবেশ শুরু হবে। তবে জামায়াতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পক্ষ থেকে সকাল দশটা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। মূল সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন ইসলামি দল ও রাজনৈতিক দলের নেতারা, জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যরা ও জুলাই আহত ব্যক্তিরা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোঃ সেলিম উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ইয়াসিন আরাফাত, দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, উত্তরের প্রচার সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, দক্ষিণের সহকারী প্রচার সেক্রেটারি আবদুস সাত্তার সুমন প্রমুখ। 

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com