প্রত্যাঘাত করতে কোমর বাঁধছে ইরান। ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডকে উদ্ধৃত করে আল-জাজিরা জানিয়েছে, নির্দিষ্ট জায়গায় নিজেদের অত্যাধুনিক ‘খায়বার শেকান’ ক্ষেপণাস্ত্রকে মোতায়েন করছে তেহরান। এই ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)-র নজর এড়িয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম বলে দাবি ইরানের।
ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিছুক্ষণ আগেই ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। সেই বিবৃতিতেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, ইসরায়েলকে পাল্টা জবাব দিতে ‘খায়বার শেকান’ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
‘খায়বার শেকান’
ইরানের দাবি যদি সত্যি হয়, তবে ইসরায়েলের বিখ্যাত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম বা লৌহগম্বুজও ‘খায়বার শেকান’ ক্ষেপণাস্ত্রের নাগাল পাবে না। ২০২২ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের ৪৩তম বর্ষপূর্তিতে এই মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটিকে সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৪৫০ কিলোমিটারের মধ্যে যেকোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এটি। প্রসঙ্গত, ইরান থেকে ইসরায়েলের দূরত্ব ১৫০০ কিলোমিটার। এটি দুর্গের নামানুসারে ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম রাখা হয়েছে ‘খায়বার’। আর ‘শেকান’ শব্দের অর্থ ধ্বংসকারী।
‘আয়রন ডোম’
ইসরায়েলের আকাশের ‘নিশ্ছিদ্র রক্ষক’ ‘আয়রন ডোম’ মূলত তিনটি স্তরে কাজ করে-রাডারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করা, দ্রুত সেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য তৎপর হওয়া এবং ‘ইন্টারস্পেটর ক্ষেপণাস্ত্র’ ছুড়ে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করা। এ ছাড়া, তেল আভিভের কাছে রয়েছে আমেরিকায় তৈরি বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘থাড’। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এড়িয়েই ‘খায়বার শেকান’ হামলা চালাতে সক্ষম বলে দাবি ইরানের। এর আগে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কাসিম বশির ব্যবহার করে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বোকা বানিয়েছিল ইরান।
শনিবার (স্থানীয় সময়) ইরানের অন্তত তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমেরিকার সেনাবাহিনী ইরানের ফোর্দো, নাতান্জ় ও ইস্পাহানে অবস্থিত তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে ‘সফল ভাবে’ হামলা চালিয়েছে। তার পরেই পাল্টা জবাব দিতে ইসরায়েলে নয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে তেহরান।
আজ তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বেশ কয়েকটি ভবনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জরুরি উদ্ধারকারীরা।
জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড আদম (এমডিএ) বলছে, “এটি এখন একটি বৃহৎ ধ্বংসস্তূপের এলাকা। একাধিক দ্বিতল আবাসিক ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু ভবন ধসে পড়েছে।”
জরুরি সেবার প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ভবনের একাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আশপাশের অন্যান্য ভবনেরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
সিএনএন জানিয়েছে, জরুরি উদ্ধারকারীদের বড় একটি দলকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের জায়গায় পুলিশ ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলকে মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।
উত্তরের শহর হাইফাতেও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন শহরের এক কর্মকর্তা।
ইসরায়েলের জরুরি সেবাদানকারীরা আগেই বলেছিলেন যে, তারা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাম্প্রতিক ঢেউয়ের পর অন্তত ১০টি স্থানে রওনা হয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, “ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের তথ্য পাওয়া গেছে, সারাদেশে এমন একাধিক স্থানে কাজ করছে উদ্ধারকারী বাহিনী।”