ফরাসি ওপেনের ট্রফি হাতে কার্লোস আলকারাজ। ছবি: রয়টার্স।
গত দুই দশকে প্যারিসের ফিলিপে শঁতিয়ে কোর্ট দেখেছে রাফায়েল নাদালের প্রচুর অবিস্মরণীয় ম্যাচ। পিছিয়ে পড়ে জেতা থেকে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়া, বাদ থাকেনি কোনও কিছুই। তবে রোববার নাদালের প্রিয় কোর্টে তার দেশীয় তরুণ কার্লোস আলকারাজ যে খেলাটা খেললেন, তাতে টুপি খুলে কুর্নিশ করার কথা নাদালের। ফরাসি ওপেনে ইতিহাসে পুরুষদের ফাইনালের দীর্ঘতম ম্যাচে ইটালির ইয়ানিক সিনারকে ৪-৬, ৬-৭, ৬-৪, ৭-৬, ৭-৬ গেমে হারিয়ে নতুন আখ্যান লিখলেন আলকারাজ। মনে পড়িয়ে দিলেন ছয় বছর আগে নোভাক জোকোভিচের ম্যাচকে।
ফরাসি ওপেন শুরু হওয়ার আগে নাদালকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল আয়োজকদের তরফে। তার পায়ের ছাপ নেওয়া হয়েছিল। মোবাইলে সেই ছবি তুলে রেখেছিলেন আলকারাজ। আলকারাজ নাদালের অ্যাকাডেমিতে টেনিস শিখলেও কখনও তার থেকে সরাসরি টেনিস শেখেননি। রোববার ফিলিপে শঁতিয়ে কোর্টে নাদাল হাজির ছিলেন না। তবে যেখানেই থাকুন, নিশ্চিতভাবেই চোখ রেখেছিলেন আলকারাজের ম্যাচে। নিশ্চিত হবেন এই ভেবে যে, তার উত্তরাধিকারী এসে গিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার পর অনিচ্ছাকৃত ডোপিংয়ের কারণে টেনিস থেকে তিন মাসের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন সিনার। তার আগে এবং পরে শুধুই শুনতে হয়েছে সমালোচনা। তিনি বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় বলে অতিরিক্ত প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, এমন কটাক্ষ ভেসে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। কেউ কেউ দু’-তিন বছর নির্বাসনের দাবিও তুলেছিলেন। সেই ‘পাপ’ থেকে মুক্তি পেতে ফরাসি ওপেনটা দরকার ছিল সিনারের। তা হাতের মুঠোয় এসেও ফস্কে গেল।
২০১৯ সালের উইম্বলডন ফাইনালে ঠিক এভাবেই রজার ফেডেরার ট্রফি হাতে তোলা থেকে এক পয়েন্ট দূরে ছিলেন। দু’টি চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। পঞ্চম সেটে ৭-৮ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ম্যাচ জিতে তার সামনে দিয়ে ট্রফি নিয়ে গিয়েছিলেন নোভাক জোকোভিচ। রোববার যেন সেই ম্যাচেই পুনরাবৃত্তি। চতুর্থ সেটে ৩-৫ গেম এবং ১৫-৪০ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ম্যাচ ঘুরিয়ে দিলেন আলকারাজ। সেই সেট এবং পরের সেট, দু’টিই জিতে টানা দ্বিতীয় বার ফরাসি ওপেন জিতলেন স্পেনীয় খেলোয়াড়।
সিনারের বয়স ২৩। আলকারাজের ২২। স্বাভাবিক ভাবেই রোববারের ম্যাচকে ‘দ্য ব্যাটল অফ ইয়ং জেনারেশন’ বা তরুণ প্রজন্মের দ্বৈরথ বলা হচ্ছিল। আক্ষরিক অর্থেই তা সাম্প্রতিক গ্র্যান্ড স্ল্যামের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্যাচ হয়ে থাকল। ফিলিপে শঁতিয়ে কোর্ট দেখল ফিরে আসার এক উপাখ্যান, যেখানে শেষ পয়েন্টের আগে পর্যন্ত খেলা শেষ হয় না। এক বার-দু’বার নয়, চতুর্থ সেটে তিন-তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্টের সামনে ছিলেন সিনার। একটি পয়েন্ট কাজে লাগাতে পারলেই ফরাসি ওপেন উঠত তার হাতে। তা হতে দিলেন না আলকারাজ। খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেট তো জিতলেনই, পরের গেমে সিনারকে ব্রেক করে সেটও সমান-সমান করে দিলেন। পঞ্চম সেটও জিতে নিলেন অনায়াসে। পঞ্চম সেটে ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেন সিনার। সুপার টাইব্রেকারেও নিয়ে গেলেন। কিন্তু সেখানে ন্যূনতম রক্ষণও দেখাতে পারলেন না।
টেনিস সার্কিটে দুই খেলোয়াড়ের ১১ বারের সাক্ষাতে এই ম্যাচের আগে আলকারাজ এগিয়ে ছিলেন ৭-৪ ব্যবধানে। শেষ চারটি দ্বৈরথেই জিতেছিলেন স্পেনীয় খেলোয়াড়, যার মধ্যে তিন সপ্তাহ আগে জেতা রোম মাস্টার্সও রয়েছে। তবে গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে প্রথম বার দুই খেলোয়াড় মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই দ্বৈরথে ট্রফি উঠল আলকারাজের হাতে।
রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল, নোভাক জোকোভিচের ‘বিগ থ্রি’ টেনিসে ইতিমধ্যেই অস্তমিত। ফেডেরার, নাদাল আগেই অবসর নিয়েছিলেন। জোকোভিচ সম্ভবত কেরিয়ারের শেষ মরসুম খেলছেন। অনেক দিন আগে থেকেই প্রশ্ন উঠছিল, ‘বিগ থ্রি’র বাইরে আগামী প্রজন্মের ব্যাটন কার হাতে থাকবে? রোববারের ফাইনালের পর বলে দেওয়াই যায়, আগামী বেশ কয়েক বছর সিনার এবং আলকারাজের বাইরে কাউকে ভাবতে হবে না। ভাবার দরকারও হবে না। পরের অন্তত দশটা বছর টেনিসবিশ্বে রাজ করবেন এই দু’জনই।
দক্ষিণ-পূর্ব স্পেনে এল পালমারে নামের একটি গ্রামে জন্ম আলকারাজের। পাহাড় ঘেরা যে গ্রামের বাসিন্দারা এক সময় শিকার করে দিন যাপন করতেন। না, হাজার বছর আগের কথা নয়। ঠিক ১০০ বছর আগে গ্রামবাসীরা তৈরি করেছিলেন একটি ক্লাব। নাম রিয়াল সোসিয়েদাদ ক্লাব ডে ক্যাম্পো। স্থানীয় শিকারিদের জন্যই তৈরি হয়েছিল এই ক্লাব। যেখানে গিয়ে শিকারিরা পায়রা এবং অন্যান্য পাখি শিকার করতেন। সেই ক্লাবই পরবর্তী সময়ে হয়ে উঠেছে টেনিস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ক্লাবের টেনিস ডিরেক্টর ছিলেন আলকারাজের বাবা কার্লোস আলকারাজ গঞ্জালেস। বাবার হাত ধরেই ক্লাবে চলে যেত ছোট্ট আলকারাজ। টেনিস ডিরেক্টরের ছেলে হওয়ায় একটু-আধটু খাতির, যত্নও পেত। সেই সুযোগের অপব্যবহার করেনি ২২ বছরের তরুণ। ছোট বয়সেই তার মধ্যে বড় খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা দেখেছিলেন ক্লাবের কোচেরা।
শুরুটা তেমন ঝকঝকে ছিল না আলকারাজের। জুনিয়র পর্যায়ে আলকারাজের সেরা আইটিএফ র্যাঙ্কিং ছিল ২২। শরীরে শিকারির রক্ত থাকা আলকারাজ ২০২০ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পেশাদার টেনিসে নাম লিখিয়ে ফেলেন। শিকারির কি আর বাগানে শিকার ধরে আশ মেটে! নেমে পড়েছিলেন রিয়ো ওপেনে। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মূলপর্বে খেলেন। সেটাই তার প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতা। প্রথম কয়েক বছর নিজেকে তৈরি করেছেন পেশাদার সার্কিটে ঘুরে। প্রথম খেতাব ২০২১ সালের ক্রোয়েশিয়া ওপেন। তার পর থেকে এগোচ্ছেন আলকারাজ। বাড়ছে ট্রফি শিকার। ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন শিকারি আলকারাজ। পাঁচটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ঢুকে গেল ট্রফি ক্যাবিনেটে।
বাবার সঙ্গে টেনিস খেলতে খেলতেই এক দিন চোখে পড়ে যান কোচ কিকো নাভারোর। আলকারাজের প্রথম কোচ বলেছিলেন, “খুব ছোট থেকেই নিখুঁত টেনিস খেলতে চাইত আলকারাজ। তখনই মনে হয়েছিল, ঠিকমতো খেললে এক দিন বিশ্বের এক নম্বরও হতে পারে।” রত্ন চিনতে ভুল করেনি জহুরির চোখ। সেই চোখকে কখনও ফাঁকি দেননি আলকারাজও। গঞ্জালেসের ব্যবসায়ী বন্ধু অ্যালফ্রেডো সারিরা এক দম প্রথম থেকে দেখছেন আলকারাজকে। তিনি বলেছেন, “চার বছর বয়স থেকে টেনিস খেলছে আলকারাজ। ও যাতে ভাল খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারে, সে জন্যই ক্লাবের টেনিস পরিকাঠামো ধীরে ধীরে ভাল করা হয়েছে। অনেক ছোট বয়সেই ওর প্রতিভা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম আমরা।”
কী আছে রিয়াল সোসিয়েদাদ ক্লাব ডে ক্যাম্পোর টেনিস অ্যাকাডেমিতে? ১৩টি টেনিস কোর্ট, ৪টে প্যাডল কোর্ট, সুইমিং পুল, জিম, একটা বাস্কেটবল কোর্ট আর একটা ফুটবল মাঠ। পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হওয়ার জন্য আলকারাজকে কখনও চাপ দেননি তার বাবা। টেনিস শেখার জন্যও নয়। নিজের ইচ্ছাতেই এগিয়েছেন তিনি। ‘পাড়ার ক্লাবে’ টেনিস শেখা আলকারাজ পরে ভর্তি হন নাদালের অ্যাকাডেমিতে। রাফার কাছে শেখেননি কখনও। ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের মালিক তার কাছে দ্রোণাচার্যের মতো, আলকারাজ তার একলব্য (দ্রোণাচার্য কখনও একলব্যকে অস্ত্রবিদ্যা শেখাননি)।
সিনার এবং আলকারাজ, দুই খেলোয়াড়ই পাওয়ার টেনিসে বিশ্বাসী। অর্থাৎ ম্যাচ জিততে কাজে লাগান শারীরিক সক্ষমতাকে। তবে মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে পয়েন্ট জেতার ক্ষেত্রে দু’জনেরই সুনাম রয়েছে। ম্যাচের আগে আলকারাজের দুর্বলতা ছিল একটাই, যথেচ্ছ আনফোর্সড এরর করা। ফাইনালেও তিনি প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি আনফোর্সড এরর করেছেন। তবে অনেক র্যালিতে সিনারকে বাধ্য করিয়েছেন আনফোর্সড এরর করাতে। সিনারের জোরালো সার্ভিস সামলাতে বেসলাইন থেকে অনেকটা পিছিয়ে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে আলকারাজকে। পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েননি। সিনারকে বাধ্য করেছেন ভুল করতে।
ফাইনালটা কেমন হতে চলেছে তার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল প্রথম গেমেই। শুরুতেই প্রায় ব্রেক হয়ে যাচ্ছিলেন সিনার। ইটালির খেলোয়াড়কে নড়াচড়ার জায়গা দিচ্ছিলেন না আলকারাজ। প্রথম গেমটাই চলে ১২ মিনিট। তৃতীয় গেমে আবার ব্রেক পয়েন্ট বাঁচাতে হয় সিনারকে। ৪০-১৫ এগিয়ে থাকার পরেও সিনারকে ব্রেক করতে পারেননি আলকারাজ। চারটি গেম হতে সময় লাগে ৩০ মিনিট।
পঞ্চম গেমে সিনারকে ব্রেক করে দেন আলকারাজ। স্পেনের খেলোয়াড়ের থেকে দুর্দান্ত কিছু ফোরহ্যান্ড দেখা যায়। কিন্তু দিন যে তখনও অনেক বাকি সেটা পরের গেমেই বুঝিয়ে দেন সিনার। ব্রেক করে দেন আলকারাজকে। সিনারের নিখুঁত শটের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি আলকারাজ। পরের গেমে নিজের সার্ভিস ধরে রাখেন। নবম গেমের সময় চোখে কিছু সমস্যার জন্য শুশ্রূষা নিতে দেখা যায় আলকারাজকে। চোখের ড্রপ নেন। তাতেও সমস্যা কাটেনি। কারণ দশম গেমে আবার আলকারাজকে ব্রেক করে সেট জিতে নেন সিনার। আলকারাজের রক্ষণ ভাঙতে বার বার গ্রাউন্ডস্ট্রোক মারতে থাকেন সিনার। রিটার্নের সময়ে তার কোর্ট পজিশনও অনেক ভাল ছিল।
দ্বিতীয় সেটের শুরুতেই আলকারাজের সার্ভিস ভেঙে ২-০ এগিয়ে যান সিনার। নিজের সার্ভ ধরে রাখার পর এক সময় এগিয়েছিলেন ৪-১ গেমে। আলকারাজ বুঝেছিলেন ম্যাচ হাত থেকে পিছলে যাচ্ছে। হাত তুলে দর্শকদের চাঙ্গা করতে দেখা গেল তাকে। তার পরেই প্রত্যাবর্তন। সিনারকে ব্রেক করে ম্যাচ নিয়ে গেলেন ৫-৫ গেমে। টাইব্রেকারে অবশ্য সিনারকে ধরা যায়নি। ৭-৪ পয়েন্টে জিতে সেট পকেটে পুরে নেন।
তৃতীয় সেটের শুরুতেই সিনার বিপক্ষকে ব্রেক করে দেওয়ার পর মনে হয়েছিল, তার হাতে ট্রফি ওঠা সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু টেনিস সব সময় ফিরে আসার একটা সুযোগ দেয়। আলকারাজকেও দিয়েছে। পর পর দু’বার সিনারকে ব্রেক করে ম্যাচে ফিরে আসেন আলকারাজ। এক সময় এগিয়ে যান ৫-২ গেমে। চলতি ফরাসি ওপেনে প্রথম বার সেট খোয়ানো থেকে এক গেম দূরে ছিলেন সিনার। নিজের সার্ভিস ধরে রেখে নবম গেমে ব্রেক করেন আলকারাজকে। ৪-৫ করে দেন। কিন্তু নিজের সার্ভিসই ধরে রাখতে না পারায় সেট খোয়ান।
চতুর্থ সেট শুরুর আগে ধারাভাষ্যকারেরা জানান, ম্যাচের বয়স ৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে। এত ক্ষণ খেলে অতীতে কোনও দিন জিততে পারেননি সিনার। ছ’টা ম্যাচের সব ক’টাই হেরেছেন। উল্টে আলকারাজ এমন পরিস্থিতিতে ১০টার মধ্যে ৯টা ম্যাচ জিতেছেন। এই সেটে দুই খেলোয়াড়ই নজর দিয়েছিলেন নিজেদের সার্ভিস ধরে রাখায়। সিনার এক সময় এগিয়ে গিয়েছিলেন ৫-৩ গেমে। নবম গেমে সার্ভিস করছিলেন আলকারাজ। তা প্রায় ভেঙে দিয়ে ম্যাচ জেতার থেকে এক পয়েন্ট দূরে ছিলেন সিনার। তিন বার চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। সার্ভ ধরে রেখে ৪-৫ করে দেন আলকারাজ। পরের গেমেই সিনারকে ব্রেক করে ৫-৫ করে দেন। টাইব্রেকারে সেটও জিতে নিয়ে ম্যাচে ফেরেন। তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট খোয়ানোর পরেই টলে গিয়েছিল সিনারের মানসিকতা। এমন সব ভুল করতে থাকেন যা গোটা ম্যাচে করেননি। স্বাভাবিক ভাবেই টাইব্রেকারে সে ভাবে লড়াই করতে পারেননি।
পঞ্চম সেটের শুরুতেই সিনারকে ব্রেক করেন আলকারাজ। এগিয়ে যান ৩-১ গেমে। ৫-৪ এগিয়ে থাকার সময় ট্রফি জেতার জন্য আলকারাজের দরকার ছিল একটি গেম। কিন্তু নাটক তখনও শেষ হয়নি। আলকারাজ যেমন হার-না-মানা মানসিকতা নিয়ে নেমেছিলেন, সিনারও এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাজি ছিলেন না। দশম গেমে আলকারাজকে ব্রেক করে ৫-৫ করে দেন। নিজের সার্ভিস ধরে রেখে ৬-৫ করেন। আলকারাজও ছাড়ার পাত্র নন। তিনিও নিজের সার্ভিস ধরে রেখে খেলা নিয়ে যান সুপার টাইব্রেকারে।
সাধারণত টাইব্রেকার হয় সাত পয়েন্টের। সুপার টাইব্রেকার দশ পয়েন্টের। সেখানে কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারলেন না সিনার। চোখের পলকে ৭-০ এগিয়ে যান আলকারাজ। পরে দু’টি পয়েন্ট পেলেও সিনার যে ম্যাচ থেকে হারিয়ে গিয়েছেন তা বোঝা যাচ্ছিল। আলকারাজের ফোরহ্যান্ড লাইনে পড়তেই রচিত হল নতুন রূপকথা। সেই রূপকথার নায়ক একজনই, কার্লোস আলকারাজ।